সমানে টক্কর দিচ্ছে দেশি ‘কু’ অ্যাপ, কেন ভারতীয় সংস্থার টুইটার অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করলেন এলন মাস্ক

Koo App : টুইটারের একচেটিয়া বাজারে থাবা বসাচ্ছে ভারতীয় ‘কু’ অ্যাপ

বর্তমান সময়ে অন্তর্জালে আটকা পরে জীবন এগোচ্ছে। মুঠোফোনের দৌলতে একটা ক্লিকেই হাজির গোটা দুনিয়া। আপডেটেড থাকা এখন দস্তুর। জীবনে চলতে ফিরতে যা কিছু ঘটছে তার সবটুকুই ওই সোশ্যাল মিডিয়া নামক জালের মধ্যে বন্দি না করতে পারলে হয়তো ট্রেন্ডি থাকা যায় না। তাই ব্যবহারিক জীবনে ভাত, ডাল সব্জির মতোই ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, টুইটার এসে জুটেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার এই লম্বা তালিকায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হল টুইটার। বিশ্বের যেকোনও প্রান্তে কখন কী ঘটছে তার তৎক্ষণাৎ খবর ট্যুইট করে জানান দিচ্ছেন এখানে কেউ না কেউ। নিত্যদিন নানা কিছু ভাইরাল হচ্ছে। সম্প্রতি এহেন বিশ্বব্যাপী অ্যাপটির দায়ভার নিয়েছেন এলন মাস্ক। তবে বিশ্বব্যাপী এই অ্যাপিং দুনিয়ায় ভারতও অবশ্য পিছিয়ে নেই। রীতিমত পাল্লা দিয়ে উঠে এসেছে শীর্ষের কাছাকাছি।

আরও পড়ুন - জনগণ চাইছে না! এবার তবে টুইটার থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এলন মাস্কের?

মার্কিন অ্যাপ টুইটারের একেবারে ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে ভারতীয় অ্যাপ ‘কু’। ২০২০ সালে বেঙ্গালুরুর অপ্রমেয় রাধাকৃষ্ণ তৈরি করেছিলেন এই কু অ্যাপ। প্রথম থেকেই টুইটারের এই দেশি বিকল্প বাজার মাতাতে শুরু করে অ্যাপটি। মাত্র দশ মাসের মধ্যেই ডিজিটাল ইন্ডিয়া আত্মনির্ভর ভারত ইনোভেট চ্যালেঞ্জ-এ বিজয়ীর আসনও দখল করে নিয়েছিল কু। এরপর থেকেই ক্রমে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে অ্যাপের। অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত থেকে শুরু করে রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল বিভিন্ন সময়ে ট্যুইট করেই জানান, তাঁদের কু আয়সে যুক্ত হওয়ার খবর। পাশাপাশি ট্যুইট বার্তায় এ কথাও উল্লেখ করেন যে, ভারতে টুইটারের দিন শেষ করতে বেশিদিন বাকি নেই কু অ্যাপের। এমনকী মাস খানেক আগে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যুক্ত হয়েছেন কু অ্যাপে।

টুইটার বনাম কু, এই যুদ্ধ চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। ডাউনলোডের নিরিখে একের পর এক রেকর্ড ভেঙ্গেছে ইতিমধ্যেই ভেঙেছিল দেশি অ্যাপটি। তার ওপর গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো হয়ে দাঁড়ালো কু অ্যাপের নতুন শিরোপা। এবার বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয়তম মাইক্রো ব্লগিং ওয়েবসাইটের তকমা ছিনিয়ে নিল এই ভারতীয় সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মটি। অর্থাৎ টুইটারের পরেই বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কু। এমনকী প্রতিযোগিতা জের বর্তমানে এতটাই জোরালো হয় যে ভারতীয় সংস্থার টুইটার অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ পর্যন্ত করে দেন এলন মাস্ক।

টুইটারের সঙ্গে ভারতীয় কু অ্যাপের ইউজার ইন্টারফেসে খুব বেশি পার্থক্য নেই, অথচ টুইটারে থাকতে গেলে রয়েছে সাবস্ক্রিপশনের ঝামেলা। সেখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়ভারতীয় অ্যাপ। আর এখানেই একের পর এক গোল দিয়ে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে কু। যদি বিনামূল্যে কু অ্যাপে ইয়েলো টিক পাওয়া যায়, তাহলে কেনই বা টুইটারের ব্লু টিকের জন্য টাকা খরচ করতে যাবে ব্যবহারকারীরা!

আরও পড়ুন - ‘হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি’ বন্ধ হয়ে গেলে কার অসুবিধা সবচেয়ে বেশি?

তাছাড়া এই কু অ্যাপে রয়েছে আরও নানান সুবিধা। সহজ ইন্টারফেস ও বিনামূল্যে ব্যবহারের পাশাপাশি এখানে পোস্ট এডিট করতেও কোনও বাড়তি খরচ করতে হয় না। একটি পোস্টে ৫০০ টি পর্যন্ত শব্দ ব্যবহার করা যায় এখানে। ব্যবহার করা যাবে ১০ টি পর্যন্ত প্রোফাইল ছবি এবং ৫১২ এমবি সাইজের ভিডিও। এই অ্যাপে ইংরেজি ছাড়াও ফরাসি, জার্মান, ইতালীয়, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ এবং হিন্দি সহ প্রায় ২০টি ভাষা সাপোর্ট করে। শুধু তাই নয়, ভারতীয় ভাষার সঙ্গেই এই অ্যাপে যুক্ত হয়েছে কয়েকটি বিদেশি ভাষায়।

একটা ব্লগিং অ্যাপে এই এত এত সুবিধা তাও আবার সম্পুর্ণ বিনামূল্যে, ফলে সহজেই ভারতের বাইরেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মটি। মাত্র বছর দেড়েকের মধ্যেই এতদিনের অ্যাপ টুইটারের জনপ্রিয়তার প্রায় সমতুল্য স্থানে উঠে এসেছে এটি। ফলে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে খোদ এলন মাস্ক কপালে। ঠিক কোন উপায়ে মোকাবিলা সম্ভব তা নিয়ে একপ্রকার কোণঠাসা এলন। তবে কি এই প্রতিযোগিতার আগাম ফলাফল আঁচ করতে পেরেই টুইটারের সর্বময় কর্তা মালিকানা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের জন্য ইউজারদের কোটেই বল ঠেলে দিয়েছিলেন? উত্তর দিতে পারবে সময় আর মার্কিন অ্যাপের একচেটিয়া বাজারে দেশীয় আধিপত্যই।

More Articles