পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে সূর্যের কক্ষপথে, সাফল্য থেকে আর কতদূরে দাঁড়িয়ে আদিত্য?
Aditya-L1: আপাতত পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে আদিত্য এলওয়ান। সূর্যের কক্ষপথে ঢুকেই নিজের কাজ শুরু করে দিয়েছে সৌরযানটি। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন তথ্য ইসরোকে পাঠাতে শুরু করেছে সেটি।
পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে আরও একটু জয়ের দিকে পাড়ি। চাঁদজয়ের পরে কি এবার তবে ভারতের ভাগ্যে ছিঁড়বে সূর্যজয়ের শিকে। না সরাসরি সূর্যজয় অবশ্য নয়। কারণ সূর্যের ধারেকাছে পৌঁছনো মোটেও চাড্ডিখানি কথা নয়। ওই ভয়ানক রকম তাপ, তার উপর প্রচণ্ড সূর্যের আকর্ষণ শক্তি। ফলে মহাকাশযান পাঠালেও তা ঠিকমতো কাজ করার সম্ভাবনা বেশ কমই। এবার সেই রাগী সূর্যকেই কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরো।
চাঁদজয়ের সাফল্য তখনও ফিকে হয়নি। তার মধ্যেই সূর্যে পাড়ি দেওয়ার সমস্ত আয়োজন সেরে ফেলেছিল ইসরো। পরিকল্পনা মাফিক গত ২ সেপ্টেম্বর পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্যাল বা PSLV-C57 রকেটে চেপে সূর্যের কক্ষপথের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল ইসরোর সূর্যযান। সফল হয় উৎক্ষেপণ। উৎক্ষেপণের প্রায় এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট পর পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয় সেটিকে। চাঁদের পর কি তবে এবার সূর্যজয়। অপেক্ষায় বুক বেঁধেছিল বিশ্ব। কথা ছিল, গন্তব্যে পৌঁছতে অন্তত ১২০ দিন সময় লাগবে সূর্যযান আদিত্য এলওয়ানের।
আরও পড়ুন: ইসরোর ঘামঝরা লড়াইয়ের একাল সেকাল
ইসরোর কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, উৎক্ষেপণের পর অন্তত ১৬দিন শুধু পৃথিবীর চারদিকেই ঘুরপাক খাবে আদিত্য এলওয়ান। আর সেই সময়েই নাকি বাড়তে থাকবে গতিবেগ। প্রায় পাঁচটি ধাপে বাড়বে সেই গতিবেগ। আর ঘুরতে ঘুরতেই কাটিয়ে ফেলবে পৃথিবীর মায়া থুড়ি কক্ষপথ। তারপর ১১০ দিন ধরে চলবে আসল যাত্রা। অর্থাৎ সূর্যের কক্ষপথকে গন্তব্য করে ছুটবে আদিত্য এলওয়ান।
তবে সেসব তো পরের কথা। প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল পৃথিবীর কক্ষপথ পেরনো। আর সেই ধাপটুকু স্টারমার্ক নিয়েই পাশ করে গিয়েছে আদিত্য এলওয়ান। সূর্যের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়েছে সেটি। ইসরো সূত্রের খবর, ১৯ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবারই পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে সূর্যের কক্ষপথে ঢুকে পড়েছে সেটি। সূর্যের দিকে পাড়ি দেওয়ার পর এই পঞ্চমবার কক্ষপথ পরিবর্তন করল আদিত্য এল ওয়ান। রাত দুটো নাগাদ টুক করে সূর্যের কক্ষপথে ঢুকে পড়েছে এই সৌরযান।
আপাতত পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে আদিত্য এলওয়ান। সূর্যের কক্ষপথে ঢুকেই নিজের কাজ শুরু করে দিয়েছে সৌরযানটি। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন তথ্য ইসরোকে পাঠাতে শুরু করেছে সেটি। তবে এর পরেও বাকি বিস্তর পথ। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানাচ্ছে, মঙ্গলবার মধ্য রাতে ট্রান্স-ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্টের মধ্যে দিয়ে যাবে সেটি। আপাতত সেদিকেই কড়া নজর রেখেছে ইসরো।
মরিশাস, ব্যাঙ্গালোর, সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ও পোর্ট ব্লেয়ারের ইসরো গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সৌরযানের উপর নজর রাখা হয়েছে নিয়মিত। এবার ঘুরতে ঘুরতে তাকে পৌঁছতে হবে একটি নির্দিষ্ট ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টে। সেই নির্দিষ্ট পয়েন্টে দাঁড়িয়েই বাদবাকি কাজকর্ম সারবে আদিত্য এলওয়ান।
কেন ওই ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্ট, কেন সূর্যের আরও কাছাকাছি পৌঁছবে না আদিত্য এলওয়ান? সে রহস্য অবশ্য আগেই পরিষ্কার করেছেন ইসরোর কর্মকর্তারা। জানা গিয়েছে, ওই বিশেষ ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টটি হল এমন জায়গা, যেখানে সূর্য ও পৃথিবীর আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল একই সঙ্গে কাজ করবে। ফলে ওই স্থানটিতে স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে মহাকাশযান। আর ওই নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়েই সূর্যের দিকে কড়া নজর রাখবে আদিত্য এলওয়ান।
আরও পড়ুন:চাঁদ ছুঁয়ে সূর্যমুখী যাত্রা, ইসরোর আদিত্য এল ১-এর দিকে যে কারণে তাকিয়ে বিশ্ব
মহাকাশের আবহাওয়া কেমন? পরিবেশের উপর, পৃথিবীর উপর সূর্যের প্রভাব কেমন তা সম্পর্কে বুঝে বিভিন্ন খবর পাঠাতে থাকবে সেটি পৃথিবীকে। এই গ্রহের আশপাশে আর কী কী উপাদান রয়েছে, তা নিয়েও খবর পাঠাতে থাকবে এটি। আর এই সব কাজের জন্য নানা আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে বাহুবলী করে পাঠানো হয়েছে সৌরযান আদিত্য এলওয়ানকেষ রয়েছে ইউভি সুরক্ষিত বিশেষ টেলিস্কোপ ও এক্স রে। সূর্যের অত কাছে বলে তাকে বিশেষ করে তাপরোধী ও ইউভি লাইট-রোধী করে পাঠানো হয়েছে অভিযানে। এই মিশনের জন্য বিশেষ ধরনের ম্যাগনেটোমিটার তৈরি করেছে বেঙ্গালুরুর ল্যাবরটরি ফর ইলেক্ট্রো অপটিকস সিস্টেম। যা ওই ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র পরিমাপে সাহায্য করে। তাছাড়া সৌরযানের গায়ে রয়েছে মোট ৬টি সেন্সর। যার মাধ্যমে সূর্যের কাছে থাকা আয়ন ও ইলেকট্রন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। যা পৌঁছবে সোজা ইসরোর কাছে। ইতিমধ্যেই স্টেপ প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য পাঠানো শুরুও করে দিয়েছে সৌরযান। ওই স্টেপ প্রযুক্তির মাধ্যমেই চলবে বিভিন্ন উপাদান পরীক্ষা। আপাতত সৌরযানের ভিতরের সমস্ত প্রযুক্তি, সমস্ত মেশিনপত্তর ঠিকঠাক ভাবেই কাজ করছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
এখনও ১১০ দিনের যাত্রা বাকি। সেটুকু রাস্তাও সাফল্যের সঙ্গেই পার করে ফেলবে আদিত্য এলওয়ান। সফল হবে ভারতের এই মহাকাশ অভিযানও। এবার আগুনের গোলাকেও আরও ভালো করে জেনে, চিনে নিতে পারবে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা, তেমনই আশায় বুকে বেঁধেছে গোটা দেশ।