চাঁদ ছুঁয়ে সূর্যমুখী যাত্রা, ইসরোর আদিত্য এল ১-এর দিকে যে কারণে তাকিয়ে বিশ্ব

Aditya L1 Launch: এই প্রথম বার মহাকাশযান পাঠাল ভারত। সূর্যের নাম অনুসারেই মহাকাশযানটির নাম রাখা হয়েছে আদিত্য।

ফের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের মুখোমুখি আমরা। ২ সেপ্টেম্বর, শনিবার সূর্যের উদ্দেশে রওনা হল আদিত্য এল ওয়ান। অন্ধপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে বেলা ১১টা ৫০ নাগাদ সূর্যের উদ্দেশে রওনা হয় আদিত্য এল ওয়ান। তাকে কাঁধে করে নিয়ে গেল ভারতীয় রকেট ‘পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল’ (পিএসএলভি)। গত জুলাই মাসেই এমনই এক মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। সাফল্য তখনও বহুদূর। তবে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে অবশেষে চাঁদের পাহাড় ছুঁয়েই ফেলেছে দেশ। এবার সূর্যের মাটি ছোঁয়ার পালা।

হাতে গুনে এক সপ্তাহ কয়েকটা মাত্র দিন হয়েছে চাঁদে সফল ভাবে পা রেখেছে ভারত। চাঁদের মাটিতে পা দেওয়ার নিরিখে ভারত চতুর্থ দেশ। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবশ্য প্রথম আমরাই। তবে এই সাফল্য যে শুরুয়াত মাত্র সেই বার্তা এর মধ্যেই দিয়ে দিয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। দীর্ঘ চার বছরের প্রচেষ্টায় শেষমেশ চাঁদে পাড়ি দিয়েছিল চন্দ্রযান ৩। এমন করোনাকালীন পরিস্থিতিতেও থমকায়নি সেই নিরন্তর প্রচেষ্টা। চন্দ্রযান ১ এবং ২-র ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে গোড়া থেকেই কোনও খুঁত রাখতে চায়নি ইসরো। এক হাজারেরও বেশি বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারের নিরন্তর পরিশ্রমে চাঁদের মাটিতে নেমেছে চন্দ্রযান ৩-র ল্যান্ডার। তা-ও আবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। ইতিমধ্যে একাধিক বার চাঁদের ছবি ক্যামেরাবন্দি করে পাঠিয়েছে রোভার প্রজ্ঞান।

আরও পড়ুন: পৃথিবীতে যা আছে চাঁদেও তাই?! চাঁদে কী কী আশ্চর্য জিনিস খুঁজে পাচ্ছে প্রজ্ঞান?

চন্দ্রযান ৩ যেদিন সত্যি সত্যি চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ফেলল, প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখল ভারত, সেদিন রাতেই ভাইরাল হয়েছিল ইসরোর বিজ্ঞানীদের উদযাপনের ছবি। নাচতে দেখা গিয়েছিল ইসরোর ডিরেক্টর এস সোমনাথ-সহ চন্দ্রাভিযানের দায়িত্বে থাকা অন্যান্য শীর্ষব্যক্তিদেরও। সেই নাচের দৃশ্য দেখে কেউ আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন, কেউ কেউ আবার তেরছা চোখেও তাকিয়েছিলেন। তবে এই সব সাফল্য, উদযাপন সত্ত্বেও নিজের লক্ষ্য থেকে বিন্দুমাত্র সরে আসেনি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। তাই চন্দ্রাভিযানের সাফল্যে এক সপ্তাহ হতে না হতেই পরবর্তী মিশনের কথা ঘোষণা করে দিয়েছিল তারা। চাঁদের পর এবার আরও বড় নিশানাকে সামনে রাখল ইসরো। সেই সূর্য, সেই চিরন্তন জ্বলন্ত গোলাতেই এবার পা রাখতে চলেছে ইসরো।

এই প্রথম বার মহাকাশযান পাঠাল ভারত। সূর্যের নাম অনুসারেই মহাকাশযানটির নাম রাখা হয়েছে আদিত্য। রওনা তো হল আদিত্য এল ওয়ান। কিন্তু সে যাবে কোথায়? ইসরো জানিয়েছে, সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যিখানের একটি 'হ্যালো' কক্ষপথের একটি ল্যাগরেঞ্জ রয়েন্ট বা এল-ওয়ান পয়েন্টে স্থাপন করা হবে মহাকাশযানটিকে। এই জন্যই সম্ভবত মহাকাশযানের নামে আদিত্যের পরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে এলওয়ান শব্দটি। পৃথিবীর থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার। আপাতত ১০ লক্ষ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে মহাকাশযানটিকে। তবে ওই গন্তব্যে পৌঁছবে সেটি। যাতে সময় লাগার কথা প্রায় ১২০ দিনের মতো। এই যাত্রাপথে যে শুধু যাত্রা করবে আদিত্য এল ওয়ান, তা কিন্তু নয়। বরং পথে সূর্যের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে করতে যাবে মহাকাশযানটি। যা আসবে ইসরোর কাছে।

এই মিশনের সঙ্গে যুক্ত ইসরোর আধিকারিকরা জানিয়েছেন, উৎক্ষেপণের পর প্রায় ১৬দিন পর্যন্ত শুধু পৃথিবীর চারদিকেই পাক খেতে থাকবে আদিত্য এলওয়ান। কিন্তু কেন? জানা গিয়েছে, এই ১৬ দিনে নাকি সূর্যের দিকে ছুটে যাওয়ার জন্য পাঁচটি ধাপে গতিবেগ বাড়াবে মহাকাশযানটি। তার পর শুরু হবে আসল যাত্রা। পরবর্তী ১১০ দিন ধরে চলবে আসল যাত্রা। এর পর একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে দাঁড়িয়ে সূর্যকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে থাকবে মহাকাশযানটি। কিন্তু মহাকাশে সূর্যের অত কাছে পৌঁছে এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকা তো মুখের কথা নয়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওই ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টটিতে নাকি সূর্য ও পৃথিবীর আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল একই সঙ্গে কাজ করে। যা স্থির থাকতে সাহায্য করবে মহাকাশযানটি।

আরও পড়ুন: চাঁদের পর সূর্য ধরার পালা! আদিত্য এল ১ ঠিক কী করতে চলেছে সূর্যকে নিয়ে?

আপাতত ওই নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে সূর্যের খবরাখবর দেওয়াই কাজ আদিত্য এলওয়ানের। মহাকাশের আবহাওয়া, পরিবেশের উপরে সূর্যের প্রভাব কীরকম তা বোঝার চেষ্টা করবে। এর জন্য মহাকাশযানের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ইউভি সুরক্ষিত বিশেষ টেলিস্কোপ, এক্স রে-সহ আরও নানা আধুনিক যন্ত্রপাতি। এই মিশনের জন্য বিশেষ করে একটি ম্যাগনেটোমিটার তৈরি করেছে বেঙ্গালুরুর ল্যাবরটরি ফর ইলেক্ট্রো অপটিকস সিস্টেম। যা ওই ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টেের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র পরিমাপে সাহায্য করবে। সেই ম্যাগনেটোমিটারকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে আদিত্য এলওয়ানের সঙ্গে।ইতিমধ্যেই সূর্যের উদ্দেশে রওনা দিয়ে ফেলেছে আদিত্য এল ওয়ান। ইতিমধ্যেই সফল ভাবে সে পার করে ফেলেছে উৎক্ষেপনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপও। চন্দ্রযান ৩-র মতোই সাফল্য ধাওয়া করুক এবার সূর্যের পিছু পিছু। গোটা ভারতবাসীর শুভেচ্ছাও আদিত্য এলওয়ানের সঙ্গেই ছুটেছে মহাশূন্যে। দেখা যাক, রাগী গ্রহেও নিজেদের সাফল্যের ধারা বজায় রাখতে পারে কিনা দেশ। 

More Articles