কাজ করছে না ওষুধ, সুতোয় ঝুলছে পেলের জীবন, শোকে বিহ্বল বিশ্ব

Pele Health Condition: গোটা ফুটবল বিশ্বকাপ কেবল পেলের সুস্থতার প্রার্থনায়। তার মধ্যেই এমন খবরে প্রমাদ গুনছেন অনেকে...

ফুটবল বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচ। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ব্রাজিল বনাম ক্যামেরুনের ম্যাচ তখন সবে শুরু হয়েছে। খেলা শুরুর বাঁশিও বেজে গিয়েছে। এমন সময় স্টেডিয়ামের একটি বিশেষ অংশের দিকে নজর গেল সকলের। বিশাল বড়ো পতাকায় পেলের ছবি, সঙ্গে লেখা ‘পেলে, গেট ওয়েল সুন’। পেলে, আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। মারাদোনার অকালমৃত্যুর পর গোটা ফুটবল বিশ্বকাপ কেবল পেলের সুস্থতার প্রার্থনায়। তবে আপামর ফুটবলপ্রেমীদের যে খুব আশার খবর শোনাতে পারছেন চিকিৎসকরা, এমনটা নয়।

কেমন আছেন পেলে? এই প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসকদের একটাই জবাব, ভালো নেই। সম্প্রতি ব্রাজিলের একটি সংবাদপত্র জানিয়েছে, কেমোথেরাপির কোনও প্রভাব দেখা যাচ্ছে না ফুটবল সম্রাটের শরীরে। চিকিৎসায় সেভাবে সাড়াও দিচ্ছেন না তিনি। এমনকী খাওয়া দাওয়াও ঠিকমতো করতে পারছেন না। সেভাবে কাউকে চিনতেও পারছেন না। ব্রাজিলের ওই সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে পেলেকে হাসপাতালের প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে। আপাতত তিনি যাতে শারীরিক সমস্যা থেকে একটু হলেও রেহাই পান, যন্ত্রণা উপশম হয়, সেজন্যই এমন ব্যবস্থা। সঙ্গে সবসময় রয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। সেইসঙ্গে রয়েছে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের ফুটবল পাগল মানুষেরা। বিশ্বকাপের মরসুমে পেলেকে এভাবে দেখতে যে ভালো লাগছে না সেলেকাওদের। ব্রাজিলের ফুটবল দলের খেলোয়াড়রাও সেই প্রার্থনা নিয়েই খেলতে নামছেন বারবার।

আরও পড়ুন : লজেন্স বিক্রি থেকে ফুটবলের ময়দান! রাতারাতি শিরোনামে ব্রাজিলের রিচার্লিসনের লড়াই আর কেচ্ছা

একটা সময় তাঁর পায়ের জাদু দেখার জন্য অপেক্ষা করত গোটা বিশ্ব। ব্রাজিলের সাম্বা ঢেউয়ের জাদু শুরু হয়েছিল পেলে-গ্যারিঞ্চাদের হাত ধরে। ব্রাজিলের পাঁচটি বিশ্বকাপ জয়ের মধ্যে তিনটিরই কারিগর তিনি। অবশ্য পেলে এসব পরিসংখ্যানের অনেক ঊর্ধ্বে। ব্রাজিল থেকে ভারত, জাপান থেকে জার্মানি, বহু বছর ধরে তিনি একের পর এক প্রজন্মের ফুটবলারদের অনুপ্রাণিত করে গিয়েছেন। পেলে না মারাদোনা কে শ্রেষ্ঠ – সেই তর্কে ঝগড়া করেছে অনেকে। মোহনবাগানের সঙ্গেও তাঁর ম্যাচ আজও মনে রেখেছেন বাংলার সকলে।

সেই পেলেকেই যখন হুইলচেয়ারে দেখল গোটা বিশ্ব, রীতিমতো ঝাঁকুনি খেয়েছিল। ২০১২ সালের নভেম্বরে তাঁর কোমরের অপারেশন হয়। ২০১৭ সালে সেই দুরন্ত ফুটবল সম্রাটই মস্কোয় হুইলচেয়ারে বিশ্বকাপের ড্রয়ে হাজির হয়েছিলেন। সেই সময় তাঁর পাশেই ছিলেন দিয়েগো মারাদোনা। সেই মারাদোনাও ২০২০-র ২৫ নভেম্বর আচমকাই চলে গেলেন।

দীর্ঘদিন ধরেই মলাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত পেলে। সেই চিকিৎসাও চলছে সমানে। অস্ত্রোপচারের পরও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় চলছিল কেমোথেরাপি। তার মধ্যেই চলছিল ফুটবল উন্মাদনা। ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপে অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবে ময়দানে নামে ব্রাজিল। নেইমারদের শুভেচ্ছা জানাতেও ভোলেননি তিনি। তারপর হঠাৎই দিন কয়েক আগে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। ফুটবল মহারণের মধ্যেই সেই দিকে খবর ছিল আম জনতার।

আরও পড়ুন : ব্যাড বয় না কি রাজপুত্র? মারাদোনাকে ছাড়া আজীবন ফিকে বিশ্বকাপের ময়দান!

তবে উৎকণ্ঠার যে কিছুই হয়নি, তা জানিয়েছিল ব্রাজিলের সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল। নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে আশ্বস্ত করেছিলেন পেলের মেয়েও। হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছিল, হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও শরীর ফুলে যাওয়ার কারণে পেলেকে নিয়ে আসা হয়েছে। শ্বাসযন্ত্রেরও সমস্যা ছিল। এসবের চিকিৎসার জন্যই তাঁকে আনা হয়। বিগত কয়েক বছরে হাসপাতালে বহুবার যেতেও হয়েছে পেলেকে।

ভক্তদের নিশ্চিন্ত করার জন্য ময়দানে অবতীর্ণ হন স্বয়ং পেলে। হাসপাতালে শুয়েই সোশ্যাল মিডিয়া মারফৎ ভক্তদের আশ্বস্ত করেন। সেই সঙ্গে নেইমার, রিচার্লিসন, থিয়াগো সিলভাদের বিশ্বকাপের জন্য শুভেচ্ছাও জানান। পেলে আশাবাদী, এই দল ফাইনালে যাবেই। তারপর তিনি নিজেই পৌঁছে যাবেন মাঠে। ভক্তরাও তাঁর সুস্থতা কামনার তোড়জোড় শুরু করে দেয়। কেবল ব্রাজিল বনাম ক্যামেরুন ম্যাচের সেই বড়ো ফ্ল্যাগ আর বিশাল জার্সিই নয়। ফিফার অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়ায়ও পেলের সুস্থতা কামনা করে ভিডিও দেওয়া হয়।

তারপর বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবল খেলোয়াড়ের অবস্থা শুনে হতবাক গোটা দুনিয়া। তবুও আশা ছাড়ছেন না কেউই। প্রার্থনা চালিয়ে যাচ্ছেন সবাই। এত ভক্তের প্রার্থনা নিশ্চয়ই উপেক্ষা করতে পারবেন না পেলে। ফিরে যে তাঁকে আসতে হবেই!

More Articles