পৃথিবীর ছবিটাই সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে এই একটি বস্তু! যে নতুন আবিষ্কার নিয়ে শোরগোল বিশ্বে

New Material Discovered Change The World : নতুন একটি পদার্থের আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। যা কিনা গোটা পৃথিবীর ছবিটাই আমূল বদলে দিতে পারে!

একবিংশ শতকের এই পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে অনেককিছুই দেখছি আমরা। সাক্ষী থাকছি নানা বিস্ময়ের, নানা বিপদের। জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে প্রযুক্তির প্রতি মানুষের নির্ভরতা। বিজ্ঞানও বিগত কয়েক দশকে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর বিস্ফোরণের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। নিত্যনতুন গবেষণা ও আবিষ্কার চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। তারই মধ্যে আরও একটি নতুন আবিষ্কার ঘিরে গোটা বিশ্বে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। গবেষণাগারে নতুন একটি পদার্থের আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এমন একটি পদার্থ, যা কিনা গোটা পৃথিবীর ছবিটাই আমূল বদলে দিতে পারে! তৈরি করতে পারে জাদুকরী সমস্ত কাজ!

নিউ সায়েন্টিস্ট পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে সেই বিস্তারিত গবেষণার রিপোর্ট। নিউ ইয়র্কের রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাঙ্গা দিয়াস এবং তাঁর সহকর্মীরা এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কী সেই গবেষণা? মূলত সুপার কনডাক্টর বা অতি পরিবাহী নিয়ে কাজ করছিলেন তাঁরা। পরবর্তী বিষয়ে যাওয়ার আগে একবার ছোট্ট করে জেনে নেওয়া যাক এই অতি পরিবাহী কী?

আরও পড়ুন : এবার দূরত্বে থেকেও খেতে পারেন সত্যিকারের চুমু! আশ্চর্য যে যন্ত্র আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের

বিদ্যুৎ পরিবহণের ক্ষমতার দিক দিয়ে দেখলে, আমাদের পৃথিবীতে প্রধানত তিন ধরনের পদার্থ রয়েছে। ইনস্যুলেটর বা অপরিবাহী, সেমি কনডাক্টর এবং কনডাক্টর বা পরিবাহী। নামেই জুড়ে রয়েছে এদের পরিচয়। ইনস্যুলেটর মানে যে বস্তু বা পদার্থের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহণ করে না (যেমন- তুলো, কাপড় ইত্যাদি)। কনডাক্টরের মধ্যে দিয়ে সহজেই বিদ্যুৎ পরিবহণ করে (যেমন- লোহা, তামা সহ ধাতুগুলি)। অন্যদিকে, সেমি কনডাক্টরে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তড়িৎ পরিবাহিত হয় (যেমন- সিলিকন)।

এর বাইরে আরও এক ধরনের বস্তু রয়েছে, তাদের সুপার কনডাক্টর বা তড়িৎ অতি পরিবাহী বলা হয়। অর্থাৎ, বিশেষ পরিস্থিতিতে এই পদার্থের মধ্যে দিয়ে সবচেয়ে ভালোভাবে তড়িৎ পরিবহণ করে। পরিবাহী ধাতুর থেকেও শক্তিশালী এগুলি। আমেরিকার অধ্যাপক রাঙ্গা দিয়াস এবং তাঁর সহকর্মীরা এই অতি পরিবাহী নিয়েই গবেষণা করছিলেন। হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন এবং লুটেটিয়াম – পর্যায় সারণির এই তিনটে মৌল নিয়ে চলছিল পরীক্ষা নিরীক্ষা। সেই সময়ই ঘটে যায় আসল আবিষ্কার!

গবেষকদের বক্তব্য, এই তিনটে মৌল একসঙ্গে বিক্রিয়া করে একটি নতুন পদার্থ তৈরি করেছে। যা মাত্র ৬৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটে রাখলে সুপার কনডাক্টর বা তড়িৎ অতি পরিবাহীর মতো আচরণ করছে। সেইসঙ্গে অবশ্যই ১ গিগা পাস্কাল চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। চাপের মান অনেক বেশি মনে হলেও, এর আগের সুপার কনডাক্টরগুলির থেকে অনেক বেশি কার্যকরী এই পদার্থটি। এতটাই যে, ইলেক্ট্রনিক্স, বিদ্যুৎ পরিবহণ ও গোটা পৃথিবীর সভ্যতায় বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারে।

আরও পড়ুন : ভূস্বর্গের নীচে ৫৯ লক্ষ টন ‘সাদা সোনা’র আবিষ্কার! রাতারাতি ভাগ্য বদলাচ্ছে কাশ্মীরের

কীরকম পরিবর্তন? অধ্যাপক দিয়াসের দাবি, “ধরুন, আপনি ১৯৪০ সালে দাঁড়িয়ে আছেন। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন ঘোড়ায় চড়ে। হঠাৎই আপনার পাশ দিয়ে দ্রুতগতির ফেরারি গাড়ি চলে গেল। ঠিক সেরকমই পরিবর্তন এটি। যেখানে নতুন এই অতি পরিবাহী ঘোড়া আর ফেরারির পার্থক্যই নিয়ে আসবে।” দুটো হিরের খণ্ডের মধ্যে হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন আর লুটেটিয়ামকে রেখে উচ্চচাপে রাখা হয়েছে। তারপরই এটি তৈরি হয়েছে। আস্তে আস্তে পদার্থটি লাল রং ধারণ করে বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘রেডম্যাটার’ (Reddmatter)। বিশেষজ্ঞদের দাবি, যদি এটি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে বিজ্ঞান ও বিদ্যুৎ পরিবহণের আরও আধুনিক জগতের দিকে পা বাড়াতে পারব আমরা।

কী কী করা যাবে? পাওয়ার গ্রিডগুলি ২০০ মিলিয়ন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কোনওরকম ক্ষতি ছাড়াই ট্রান্সমিট করতে পারবে। হাসপাতালের এমআরআই, ম্যাগনেটোকার্ডিওগ্রাফির মতো বহু যন্ত্র আরও সস্তায় ও দ্রুত কাজ করবে। দ্রুতগতির ট্রেনগুলি আরও ভালোভাবে, বিনা বাধায় চলাচল করতে পারবে। সামগ্রিকভাবে, প্রযুক্তির জগতের গতিটাই বদলে যাবে এই রেডম্যাটার চলে এলে। আপাতত সেই পরিবর্তনের দিকেই তাকিয়ে বিজ্ঞানীরা।

More Articles