মেজাজ সবসময় সপ্তমে, অযথাই বদনাম জুটছে কপালে? যেসব উপায়ে হতে পারে মুশকিল আসান

Solve Mood Off Problem : মেজাজ বিগড়ে যাওয়া অথবা এখনকার পরিভাষায় যা কিনা মুড অফ, তার মুক্তিতে মনোবিদের সাহায্য অবশ্যই নিতে পারেন, তবে প্রতিদিনের অভ্যাসে কিছু সহজ বদলও এনে দিতে পারে মুক্তি, জানেন কী কী

কথায় বলে, “মেজাজটাই আসল রাজা”! আর তাই নিত্যদিনের কাজের ব্যস্ততায় আমাদের মেজাজের চাপে আমাদেরই হয় হিমশিম খাওয়ার অবস্থা। এর ফলে হয় আরেক বিপদ। ছোটখাটো বিষয়ে উল্টোদিকের মানুষটির সঙ্গে অকারণেই লেগে যায় বচসা। মেজাজের বশে দু-এক কথা মুখ ফস্কে বলে ফেলে আফসোস করতে হয় নিজেকেই। অথচ ‘শব্দ’ তো ব্রহ্ম, একবার তীর বেরিয়ে গেলে আর ফিরিয়ে নেওয়ার উপায় নেই।

ধরুন সকালে ঘুম থেকে উঠে যে কোনও কাজে হাত দিচ্ছেন, কিছুতেই পছন্দ হচ্ছে না। অমনি মেজাজ তিরিক্ষে। যা নয় তাই করে শুনিয়ে দিচ্ছেন যাকে তাকে। পথে-ঘাটে, ট্রেনে, বাসে এমনকী এই মেজাজ এতটাই লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে যে কখনও কখনও অজান্তেই কাজের জায়গাতেও বিপদে পড়তে হচ্ছে আপনাকে। তাই নিত্যদিনের কাজের মধ্যে আপনার মেজাজকে নিজের বশে রাখা খুব প্রয়োজন। তাই জেনে নিন কোন কোন উপায়ে হতে পারে মুশকিল আসান...

আরও পড়ুন - কেন এরকম ত্রিকোণ আকৃতি হয় সিঙ্গাড়ার? কারণ জানলে অবাক হবেন আপনিও

“মুড অফ্” আজকের প্রজন্মের কাছে খুবই পরিচিত একটি শব্দ। কারণে অকারণে মুড ‘অফ্’ হওয়াই যেন দস্তুর। আধুনিকতায় ধাক্কা খেতে খেতে জীবন যতোই যান্ত্রিক হচ্ছে ততোই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে আমাদের নিজেদের মেজাজ। বর্তমান সময়ে মন খারাপের থেকে বড় অসুখ আর কিছুই নেই। মানসিক অবসাদের জের এতটাই ভয়ংকর হতে পারে যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা আপনাদের ঠেলে দিতে পরে অবাঞ্ছিত ভবিষ্যতের দিকে, এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে এই মানসিক অবসাদ।

মেজাজ বিগড়ে যাওয়া অথবা এখনকার পরিভাষায় যা কিনা মুড অফ, তার মুক্তিতে মনোবিদের সাহায্য অবশ্যই নিতে পারেন, তবে প্রতিদিনের অভ্যাসে কিছু বদলই এনে দিতে পারে মুক্তি। তাই আপনি চাইলে নিজের চেষ্টাতে সহজ কিছু টিপস মেনে সহজেই বদলে ফেলতে পারেন মেজাজ।

১. সঠিক ঘুম - নিয়মিত এবং পরিমিত ঘুম আমাদের সুস্থ শরীরের অন্যতম প্রয়োজনীয় দিক। লক্ষ্য করে দেখবেন রাতে ঠিক করে ঘুম না হলে সারাদিন একটা অযাচিত ক্লান্তি তাড়া করে বেড়ায় আমাদের, যার জেরে ছোটখাটো যে কোনও বিষয়ে সহজেই রেগে যেতে পারেন আপনিও। তাই নিয়ম মেনে সঠিক সময়ে ঘুমোতে যাওয়া এবং পরিমিত ঘুমের পর, সঠিক সময় বিছানা ছেড়ে ওঠা, এটিই অনিয়ন্ত্রিত মেজাজকে নিয়ন্ত্রণে আনার সবথেকে সহজ উপায়।

২. ধ্যান করুন - আজকাল বিশেষজ্ঞরা প্রায়শঃই বলে থাকেন যোগাসনের কথা। শুধু তাই নয়, চোখ বুজে সমস্ত চিন্তা ভাবনার উর্ধ্বে গিয়ে মেজাজকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ধ্যান। রোজকার অভ্যাসে তাই অবশ্যই কিছুক্ষণ সময় বেছে নিন ধ্যানের জন্য। এতে মস্তিকের ক্লান্তি দূর হয়, এবং আপনার মেজাজ স্বাভাবিক থাকে।

৩. অন্য কারোর মন ভালো করতে পারার মধ্যে যে তৃপ্তি সেই তৃপ্তির লেশ চুঁইয়ে পড়তে পারে আপনার মধ্যেও। তাই দিনে অন্তত কোনও একটা সময় অন্য কারোর মন ভালো করার চেষ্টা করুন। দেখবেন অপরদিকে মানুষটির মুখের হাসিই আপনার মেজাজকে শান্ত করে দেবে নিমেষে।

৪. মনে রাখবেন, এই পৃথিবীতে কেউই নিখুঁত নয়, দোষে গুণেই একজন মানুষ। তাই নিজের করা কিছু পুরনো ভুলকে মনের মধ্যে পুষে রেখে অকারণে অশান্তি ডেকে আনবেন না। বরং সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে আরও ভালো করে পথ চলা যায় সেই চেষ্টা করুন। পজেটিভ ভাবনা ভাবুন। চেষ্টা করুন কোনও রকম নেগেটিভ জিনিসের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে না ফেলতে।

৫. কৃতজ্ঞ থাকুন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কৃতজ্ঞতা শব্দটা খুব ভারী মনে হলে ধন্যবাদ জানান। প্রয়োজনে একটা ডায়রি মেইন্টেন করে তাতে লিখে রাখুন কার প্রতি কোন কারণে আপনি কৃতজ্ঞ।

আরও পড়ুন - একটানা ঘুমান না রোনাল্ডো, তবুও থাকেন টগবগে মেজাজে, যে রহস্য লুকিয়ে তাঁর দৈনন্দিন জীবনে

৬. এক নাগাড়ে বাড়িতে আবদ্ধ হয়ে না থেকে দিনে অন্তত এক থেকে দুবার বাইরে কিছুক্ষণ সময় হেঁটে আসুন। সঙ্গী না থাকলে একাই বেরিয়ে আসতে পারেন। এতে মেজাজ হালকা হবে এবং একটা সুস্থ সময় আপনার জন্য অপেক্ষা করবে।

৭. এক নাগাড়ে অফিসের কাজ করতে করতে ক্লান্ত লাগলে মাঝে মাঝে বিরতি নিন প্রয়োজনে অফিসের ডেস্ক অথবা বাড়ির আনাচে-কানাচে গোছগাছ করতে শুরু করুন। এতে মনের মধ্যে নতুন কিছুর আনাগোনা হবে যা মেজাজ হালকা করতে পারে।

তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, উপরের সবকটি টিপসই হল শরীর এবং মন চাঙ্গা রাখার কিছু সম্ভাব্য নিয়ম মাত্র। যদি এতেও উপকার না পান, ফেলে রাখবেন না। তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করুন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। খেয়াল রাখবেন, মনের ভার বাড়তে দিলে তা কিন্তু ভার ডেকে আনতে পারে জীবনেও।

More Articles