একটানা ঘুমান না রোনাল্ডো, তবুও থাকেন টগবগে মেজাজে, যে রহস্য লুকিয়ে তাঁর দৈনন্দিন জীবনে
Cristiano Ronaldo : প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ২০০৬ সালে। এখনও তিনি টগবগে তরুণ। কীভাবে তারুণ্য ধরে রাখলেন তিনি?
মেসি না রোনাল্ডো, চিরকালীন এক বিবাদের ইতি ঘটেছে একপ্রকার। মনখারাপ করেই কাতারের ময়দান ছেড়েছেন রোনাল্ডো। কিন্তু ফুটবলকে তিনি দিয়ে গিয়েছেন অনেক কিছুই। এখনও রোনাল্ডো নামটাই কাফি। ওই নামের জাদুতে আজও অনুরাগীরা মোহিত। টানা পাঁচ বিশ্বকাপে গোল করা খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর নাম জায়গা করে নিয়েছেন ইতিহাসে। আজকের অ্যাথলেটিক রোনাল্ড অবশ্য এমন বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করেননি; ২০০৩ সালে স্পোর্টিং থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসা রোগা কিশোরের থেকে আজকে আমরা যে রিপলিং ফিজিকটি দেখতে পাচ্ছি তা একটি উল্লেখযোগ্য রূপান্তর। প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ২০০৬ সালে। এখনও তিনি টগবগে তরুণ। কীভাবে তারুণ্য ধরে রাখলেন তিনি?
রোনাল্ডোর কয়েকটি সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, এই এতদিন ধরে সুস্বাস্থ্য এবং টগবগে শরীর ধরে রাখার আসল রহস্য। তিনি নিজেই বারবার বলেছেন সেই কথা। দিনের শুরুটা করেন ওয়ার্ম আপ করেই। এতে শরীরে লাগা আঘাতের ঝুঁকি কমে। এখানেই শেষ নয় এমন শরীর ধরে রাখার নেপথ্যে রয়েছে আরও অনেক কৌশল। রোনাল্ডো সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘প্রশিক্ষণের সময় শুরুতে আমরা কিছুটা দৌড়ানো, স্ট্রেচিং আর কার্ডিও ওয়ার্মআপের ব্যায়াম করি।’ ইনজুরি ঝুঁকি কমাতে এমনটা করা হয়। তাঁর ভাষ্যে, ‘প্রশিক্ষণের শুরুতে অবশ্যই এমন কিছু করা উচিত। জিমে জগিং করে, ট্রেডমিল বা সাইকেল চালিয়ে শরীর গরম করে নিতে হবে।’
আরও পড়ুন - মেসি না রোনাল্ডো, কাদের নিজের সর্বকালের সেরার তালিকায় জায়গা দিয়েছিলেন পেলে?
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্ডিওভাস্কুলার ট্রেনিংয়ের অংশ হিসেবে দৌড়কে খুবই গুরুত্ব দেন তারকা ফুটবলার। শুধু নিজেই যে প্রশিক্ষণের মধ্যে থাকেন এমন নয়, পাশাপাশি দলের বাকি সতীর্থদেরও নানা ধরনের উচ্চমাত্রার ব্যায়ামের দিকে বেশি জোর দেন। তাঁর পরামর্শ, ‘প্রশিক্ষণের সময় আমরা দৌড়নির্ভর বিভিন্ন ড্রিলে অংশ নিই। জিম হোক, কিংবা মাঠে—সব মিলিয়ে নিজের ওয়ার্কআউট প্ল্যান করতে হবে। চেষ্টা করুন সব ওয়ার্কআউটে দৌড়ের মতো রোমাঞ্চকর বিষয় রাখতে। সুযোগ পেলেই ব্যায়াম করুন। বাইরে যেতে না পারলে নিজের শোবার ঘরে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কিংবা রাতে ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করতে পারেন। আপনি যদি একটি রুটিনে অভ্যস্ত হন, তাহলে সেটা দ্রুত অভ্যাসে পরিণত করতে পারবেন।’
শরীর ঠিক রাখতে কী কী খান ফুটবলার?
“শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সওয়াবে তাহাই সয়”, এ কথায় মোটেই বিশ্বাসী নন পর্তুগাল তারকা রোনাল্ডো। তিনি মনে করেন শরীর হল একটি গাড়ির মতো,তাই তাকে নিয়মকরে পুষ্টি দিতে হবে নাহলে মাঝপথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যেতে পারে। গুরুত্ব দিয়ে ডায়েট মানেন ফুটবলার। শরীরকে চাঙ্গা রাখতে এটা খুবই জরুরী। তিনি বলেন, “শুধু নিয়মিত কঠোর ওয়ার্কআউট করে শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব নয়, তার সঙ্গে প্রয়োজন সঠিক ডায়েট। দুটি পরিমিত হলে তবেই সুস্থ শরীর সম্ভব।” প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ফল এবং শাকসবজি সহ একটি উচ্চ প্রোটিন খাদ্য তালিকা অনুসরণ করেন তিনি। তার সঙ্গে চিনিযুক্ত খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলেন। তাঁর এই ডায়েটের পিছনে রয়েছে একজন ডায়েটিশিয়ানের হাত। রিয়াল মাদ্রিদের দিন থেকে তার সাথে কাজ করেছেন তিনি। দিবে অন্তত ছয়বার ছোট ছোট করে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনিই। অর্থাৎ প্রতি তিন থেকে চার ঘণ্টায় একবার করে খাওয়াই সুস্থ ডায়েটের লক্ষণ। রোনাল্ডো মাছ খেতে খুবই পছন্দ করেন। বিশেষত সোর্ডফিশ বা নোনা জলের মাছ অর্থাৎ সামুদ্রিক মাছ। কড মাছের তৈরি ব্যাকালা নামের খাবার পছন্দ করেন তিনি। কড মাছ, পেঁয়াজ, আলু আর ডিম দিয়ে তৈরি হয় এই খাবার। রেস্তোরাঁয় খাবার সময় স্টেক ও স্যালাড অর্ডার করেন তিনি। ফ্রোজেন খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলেন। সব সময় তাজা খাবারই রাখেন ডায়েটে। ভালোবাসেন পেঁয়াজ, পাতলা করে কাটা আলু এবং স্ক্র্যাম্বল ডিমের মিশ্রণ। এছাড়াও তিনি প্রচুর ফলমূল এবং চর্বিহীন প্রোটিন খান।
আরও পড়ুন - বছরে এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা বেতন! কেন এই ক্লাব বেছে নিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো
এছাড়াও শরীরকে সুস্থ রাখে পরিমিত পানীয় জল খুবই উপযোগী। ২০২১ সালে একটি সংবাদ মাধ্যমের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে তাঁর সামনে সোডা পানীয়ের বোতল রাখা হলে তিনি সেটা হাত দিয়ে সরিয়ে শুধু জল খেতে চেয়েছিলেন। তারপর থেকেই আলোচনায় আসেন তিনি। শরীর সুস্থ রাখতে অ্যালকোহল এবং কার্বনেটেড পানীয় একেবারেই এড়িয়ে চলেন ফুটবলার। তিনি বলেন, ‘শরীরের মতো মনকে প্রশিক্ষিত করতে শিখুন। মানসিক দৃঢ়তা শুধু শারীরিক সক্ষমতার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্যও দরকারি। নিয়মের মধ্যে থাকুন। নিজের রুটিন অনুসরণ করা ও নিজেকে উৎসাহিত করে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। আমি পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে অবসর কাটাই, যা আমাকে বিশ্রাম দেয়, মনের ইতিবাচক বিকাশ ঘটায়।’
সুস্থ জীবন ধরে রাখার সব কৌশল এখানেই শেষ নয়। তিনি নিজেই জোর দিয়েছেন শরীরের পাশাপাশি মন ভালো রাখার দিকটি। অবসর পেলেই পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান তিনি। এছাড়াও একটানা ঘুমান না রোনাল্ডো। পরিবর্তে তিনি পাঁচ বার অন্তত দেড় ঘন্টা করে ঘুমিয়ে শরীরকে চাঙ্গা রাখেন। যাকে বলে পাওয়ার ন্যাপ। বারবারে ঘুমিয়ে কাজের গতিকে সচল করেন। প্রফেসর লিটলহেলস তাঁর বইয়ে বলেছেন “স্লিপ: দ্য মিথ অফ 8 আওয়ার্স, দ্য পাওয়ার অফ ন্যাপস... অ্যান্ড দ্য নিউ প্ল্যান টু ইওর বডি অ্যান্ড মাইন্ড রিচার্জ।” রোনাল্ডো যেন অক্ষরে অক্ষরে গুরুত্ব দেন ক্রীড়াবিদের সেই কথাই।