কেন এরকম ত্রিকোণ আকৃতি হয় সিঙ্গাড়ার? কারণ জানলে অবাক হবেন আপনিও

Amazing Facts about Samosa : নাম অথবা পুর যায় হোক, যে কারণে অঞ্চল ভেদেও বদলায় না সিঙ্গাড়ার আকৃতি

সেকালের অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে আজকের মুখরোচক জলখাবার, সিঙ্গাড়ার নাম সর্বাগ্রে। বাইরে ময়দার ভাজা মোড়ক, ভিতরে তরকারির পুর। মূলত আলু দিয়েই তৈরি হয় পুর, তবে শীতের সময় ফুলকপির পুর ভরা সিঙ্গাড়ার স্বাদও অসাধারণ। যদিও এই সিঙ্গাড়ার ইতিহাস আজকের নয়, দশম শতাব্দীর ইরানী ইতিহাসবিদ আবলফজল বেহাগি তাঁর ‘তারিখ-ই-বেহাগি’তে প্রথম সামবুসাকের কথা উল্লেখ করেন। সাম্বুসা থেকেই স্থান এবং সময় ভেদে সামোসা বা বাঙালির সিঙ্গাড়ার চল।

ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই এসে পড়ে পর্তুগিজদের কথা। আজকের এই যে আলুর পুর ভরা সিঙ্গাড়া তার চল শুরু হয় তাদের হাত ধরেই। তার আগে অবধি সিঙ্গাড়া মানে ছিল মাংসের পুর ভরা ত্রিকোণ প্রেমের রসায়ন। সপ্তদশ শতকে ভারতের পশ্চিম উপকূল জুড়ে পর্তুগিজদের ব্যাপক আলু চাষের প্রভাব এসে পড়ে তিনকোনা এই খাবারটিতেও। যদিও আরও একটি অনুমান, পশ্চিম উপকূল ধরে মহারাষ্ট্র বা গুজরাটে বর্ণ হিন্দু নিরামিষাশীদের এক বিশাল জনগোষ্ঠী বসবাস করে যারা মাংসের স্বাদ স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় বর্জন করেছে তাদের মধ্যেও আলুর মাখোমাখো ভালোবাসা ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করে। যদিও হাল আমলে নামী কেক প্যাস্ট্রির দোকানে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আবারও সেই পুরনো পন্থার পুনরাবৃত্তি। চিকেন সিঙ্গাড়ার চল।

তবে সিঙ্গারার পুর অথবা নাম যাই হোক না কেন, পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই সিঙ্গাড়ার আকার কিন্তু হয় একরকমই। ত্রিকোণ। আর তারই পেটের মধ্যে ভরা থাকে পুর। অনেকেই এই বিষয়ে নানা যুক্তি দেখালেও কোনও প্রামাণ্য নথি মেলে না। বরং বলা হয়, পুর ভরতে সুবিধার জন্য এটিকে গোল বা লম্বা আকৃতির না করে তিন কোণা করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন - বাস্তুমতে ঘড়ির অবস্থান নানাভবে আপনার ভাগ্য বদলাতে পারে, বলছেন বাস্তুবিদ…

তবে এই ধারণার পাশাপাশি সিঙ্গাড়ার এই ত্রিকোণ আকৃতি নিয়ে আরও একটি গল্প শোনা যায়। ১৭৬৬ সালের ঘটনা, কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় সে সময় রাজ-হালুইকর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন কলিঙ্গ তথা বর্তমান ওড়িষ্যা থেকে আগত গুণীনাথ হালুইকরের ষষ্ঠপুত্র গিরীধারী হালুইকর। কথিত আছে, তাঁর স্ত্রী ধরিত্রী দেবীই নাকি আবিষ্কার করেছিলেন সিঙ্গাড়া।

অবশ্য এর পিছনে জড়িয়ে থাকা গল্পটাও বেশ মজার। একদিন রাজ হালুইকরের বানানো লুচি খেয়ে বেজায় চটে গেলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। নেতানো লুচির স্বাদ মুখে লাগলো না এবং সেই জের এতদূর গড়াল যে রাজ্য ছাড়ার হুকুম দেওয়া হল সেই হালুইকরকে। কিন্তু তাঁর স্ত্রী এই সময় একটা বুদ্ধি ফেঁদে বসলেন। রাজ দরবারে গিয়ে বললেন সুযোগ পেলে সে এমন একটা লুচি তরকারি রান্না করে খাওয়াতে পারে যা অনেকক্ষণ গরম থাকবে। এমনকী ভাজার সঙ্গে সঙ্গে খেলে রাজার জিভের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বলেও জানান। এই ভেবেই তিনি ঠিক করেন এই আকারের মুখরোচক প্রস্তুত করার কথা। তিন পাটে ময়দার খোলস করে তার মধ্যে তরকারি ভরে ছাঁকা তেলে ভাজা হয় বলেই ভিতর থেকে অনেকক্ষণ গরম থাকে খাবারটি। এই খাবার খেয়ে শেষমেশ খুশি হয়ে রাজা হালুইকরের শাস্তি বাতিল করেন এবং ধরিত্রী দেবীকে মুক্তির মালা উপহার দেন। কথিত আছে, এই থেকেই এমন ত্রিকোণ সিঙ্গাড়ার প্রচলন হয়।

More Articles