কেন বর্ষা আসছে না দক্ষিণবঙ্গে! কবে সদয় হবে প্রকৃতি, জানুন প্রকৃত ব্যখ্যা

এখনই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই দক্ষিণবঙ্গে। বরং আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি আরও বাড়বে বলেই জানিয়েছেন হাওয়া অফিস।

এবছর নির্ধারিত সময়ের আগেই ভারতে ঢুকেছিল বর্ষা। ব্যতিক্রম হয়নি বাংলাতেও। নির্ধারিত সময় থেকে চারদিন আগেই বঙ্গে প্রবেশ করেছে বর্ষা। ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতও শুরু হয়ে গেছে। তবে বিধিবাম দক্ষিণবঙ্গের। কোনো স্বস্তির খবর নেই। এখনই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই দক্ষিণবঙ্গে। বরং আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি আরও বাড়বে বলেই জানিয়েছেন হাওয়া অফিস।

বঙ্গে বর্ষা

উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে বর্ষা। এখনও পর্যন্ত আলিপুর আবহাওয়া দফতরের যা পূর্বাভাস, তাতে আজ সহ আগামী কয়েকদিনে উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা উত্তরের তিন জেলায়। কোচবিহার জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও আজ যথেষ্ট বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে । কোচবিহার এবং আলিপুরদয়ারেও ভারী বৃষ্টি চলবে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা৷

তাহলে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা আসতে দেরি কেন ?

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতা ও সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি এলেও তা বর্ষার বৃষ্টি নয় বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। তাঁরা আরও জানিয়েছেন যে মৌসুমী বায়ু উত্তর-পূর্ব ভারতের সব রাজ্য অতিক্রম করে উত্তরবঙ্গে থমকে গেছে। যার ফলে উত্তরবঙ্গে বাড়বে বৃষ্টির পরিমাণ। অপরদিকে দক্ষিণবঙ্গে প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে মৌসুমী বায়ুর আগমণ পিছিয়ে গিয়েছে। ফলস্বরূপ এখনও দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার কোনও পূর্বাভাস নেই। এই মুহূর্তে বিহার থেকে ওড়িশা পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে। যার ফলে আগামী চার পাঁচ দিনের মধ্যে বর্ষা আসছে না বঙ্গে এমনটাই মত আবহাওয়া অফিসের।

শুক্রবার কলকাতায় দিনের আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে। আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি বজায় থাকবে আজ। কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকবে ৩৪ ডিগ্রির আশেপাশে। এর আগে বৃহস্পতিবার কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র গরম এবং আর্দ্রতার কারণে ওষ্ঠাগত দক্ষিণবঙ্গের মানুষের প্রাণ। বৃষ্টির আশায় কার্যত চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে রয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন-গরমে অস্থির, আসুন গা ছমছমে ব্রিটিশ বাংলো আর চা বাগানে ঘেরা এই পাহাড়ি গ্রামে

কলকাতা সহ গাঙ্গেয় উপত্যকায় বর্ষা শুরুর জন্য বঙ্গোপসাগরের উপর সহায়ক পরিস্থিতির প্রয়োজন হয়।আর এই অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয় নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে। বর্ষা শুরুর সহায়ক পরিবেশ তৈরি হলে এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত মেঘের সৃষ্টি হয় এবং সমুদ্রের দিক থেকে ভূপৃষ্ঠের দিকে বয়ে আসা এই মেঘগুলি মৌসুমী বায়ুকে দক্ষিণবঙ্গে টেনে আনতে সাহায্য করবে এবং ফলস্বরূপ বর্ষা প্রবেশ করবে দক্ষিণবঙ্গে। কিন্তু এই ঘটনা এখন ঘটছে না। ফলে উত্তরবঙ্গে আটকে পড়েছে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু।

প্রথমে আবহাওয়া অফিসের তরফে জানানো হয়েছিল, ১০ জুন বর্ষা প্রবেশ করবে দক্ষিণবঙ্গে। তবে সেসব এখন অতীত। কিন্তু মৌসুমী বায়ু প্রবেশে দেরি হলেও এতে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই বলেই জানিয়েছে হওয়া অফিস। তাঁদের মতে, সাম্প্রতিক অতীতে ১৭-১৮ জুন দক্ষিণবঙ্গে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবেশের দৃষ্টান্ত রয়েছে।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আগামী দিন দুইয়ের মধ্যেই গোয়া, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরের কিছু অংশ এবং উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করার মতো অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে। মৌসুমি বায়ু না-আসা পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে বজ্রগর্ভ মেঘ সঞ্চার হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হবে। ঠিক যেমন হয়েছে কলকাতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। তবে ঝাড়খণ্ডের দিকে বজ্রমেঘ তৈরি হলেও তা দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আগের তুলনায় কম। এই কারণে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছে। ভ্যাপসা অস্বস্তিকর গরম আরও কিছুদিন থাকবে দক্ষিণে। রাজ্য কৃষিদপ্তর সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ৯ জুন তারিখ পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় ৬৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

মে মাসে বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে ৬১ শতাংশ বেশি ছিল। জুন মাসে উত্তরবঙ্গের হিমালয় সংলগ্ন জেলাগুলিতে স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। দুই দিনাজপুরেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি। জুনে শুধু মালদহ জেলায় স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা কম বৃষ্টি হলেও তা দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় অনেকটা বেশি।

More Articles