রামধনু মাছ, স্পঞ্জ কাঁকড়া- ২০২২ সালে আবিষ্কৃত এই প্রাণীদের দেখে হাঁ হয়েছেন বিজ্ঞানীরাও!

Strange Animals Discovered in 2022: এই গ্রহের প্রায় ৮৬ শতাংশ উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের প্রজাতিকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রেণিবদ্ধই করা হয়নি, যার মধ্যে প্রায় ৯১ শতাংশই বাস করে মহাসাগরে।

গত ২৫০ বছরের জীববিজ্ঞানীরা প্রায় ১.২ মিলিয়ন পৃথক পৃথক উদ্ভিদ এবং প্রাণীর প্রজাতি আবিষ্কার করেছে এবং তাদের সম্বন্ধে বিশদে বর্ণনাও করেছেন। তবুও বলতে হয়, এসবই হিমশৈলের চূড়ামাত্র! কী কী যে অদ্ভুত জীব রয়েছে এই বিশ্বের তার নাগালও পায়নি বিজ্ঞান, বিশ্বে এমন অজানা, অদেখা প্রাণের সংখ্যা যে কত তাও হলফ করে বলা যায় না। জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যা জানা গেছে, তা আসলে পরিসংখ্যানেই আসে না। আমাদের অজানা প্রজাতির সংখ্যা এতটাই বিপুল। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এই গ্রহের প্রায় ৮৬ শতাংশ উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের প্রজাতিকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রেণিবদ্ধই করা হয়নি, যার মধ্যে প্রায় ৯১ শতাংশই বাস করে মহাসাগরে। এই বছরই বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় প্রজাতির আবিষ্কার ঘটেছে। ২০২২ সালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কয়েকটি প্রাণী কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বিজ্ঞানীদের।

রেইনবো রিফ ফিশ — সার্হিলাব্রাস ফিনিফেনমা

গবেষকরা ১৯৯০ এর দশকে প্রথম এই মাছটি খুঁজে পেয়েছিলেন। তবে মার্চ মাসে, একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে এই বিশেষ মাছ সার্হিলাব্রাস ফিনিফেনমা, প্রকৃতপক্ষে পৃথক এক প্রজাতি। মাছটি রোজ-ভেলড ফেয়ারি রেসে নামেও পরিচিত। এই মাছগুলির রঙ পৃথক পৃথক হয়, তবে দেহের উপরের এবং নীচের অংশে একই রকম ডোরাকাটা এবং পাখনা দেখা যায়। গবেষকদের মতে, এই মাছগুলি মালদ্বীপ উপকূলে ছায়াঘেরা, গোধূলির প্রাচীরের মধ্য দিয়ে আসে। এই বিচিত্র মাছটিই বুঝিয়ে দিচ্ছে বিপুলা এ মহাসাগরের অনেক রহস্যই অজানা।

নাক থ্যাবড়া ব্যাঙ — সাইনাপচুরানাস দান্তা

আমাজনিয়া ট্যাপিরের সঙ্গে সাদৃশ্য আছে বলে একে সাধারণ ব্যাঙ বলে মনে হলেও আসলে সাইনাপচুরানাস দান্তার ছোট আকার এবং নিমেষে গা ঢাকা দেওয়ার প্রবণতা একে নিজেকে বহির্বিশ্ব থেকে, জীববিজ্ঞানীদের কাছ থেকে বছরের পর বছর লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে। আমাজন রেইনফরেস্টের এই ব্যাঙের গা অদ্ভুত মসৃণ আর মাথাটি ছোট্ট, নাক থ্যাবড়ানো।

টিকটিকি — স্কেলোপোরাস হুইচোল

কিছু প্রজাতি বন্য অঞ্চলে শনাক্ত করা যায়, আর কিছু জাদুঘরের যত্ন সহকারে সংরক্ষিত সংগ্রহের মধ্যেই আবিষ্কৃত হয়। প্রায় ১০ খানা ভিন্ন ভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া নমুনা যাচাই করে বিশেষজ্ঞরা মে মাসে একটি টিকটিকি আবিষ্কার করেছেন, স্কেলোপোরাস হুইচোলের একটি নতুন প্রজাতি এটি।
অনুরূপ প্রজাতির (যেমন এস. টরকোয়াটাস এবং এস. মেলানোগাস্টার) থেকে আলাদা এই টিকটিকির আকার সামান্য ছোট এবং রঙটিও বড্ড অদ্ভুত। এই টিকটিকি মূলত মধ্য মেক্সিকোর পাহাড়ি জঙ্গলে মেলে। গবেষকদের মতে, এই অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী উপজাতি হুইচোল থেকেই এর নামটি এসেছে।

স্পঞ্জ কাঁকড়া — ল্যামার্কড্রোমিয়া বিগল

স্পঞ্জ কাঁকড়া হলো ক্রাস্টেসিয়ানদের একটি প্রজাতি যা সমুদ্রের অগভীরে সামুদ্রিক স্পঞ্জের কাছাকাছি জায়গাতেই ঘোরাফেরা করে। এই কাঁকড়াগুলি দুর্দান্ত ছদ্মবেশ ধরতে পারে । ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানীরা এই ধূর্ত কাঁকড়াগুলির বেশ কয়েকটি প্রজাতির সন্ধান পেয়েছিলেন, এপ্রিল নাগাদ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে এই অদ্ভুত নতুন কাঁকড়াটি চিহ্নিত করা গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ল্যামার্কড্রোমিয়া বিগলের তুলতুলে আবরণ যা আসলে ছদ্মবেশের একটি অতিরিক্ত স্তর তা শিকারীদের থেকে এই প্রজাতিটিকে রক্ষা করে।

আরও পড়ুন- কীভাবে বিলুপ্ত হয়েছিল ডাইনোসর? এতদিনে জানতে পারলেন বিজ্ঞানীরা

অদ্ভুতুড়ে পেঁচা — ওটাস বাইকগিলা

ওটাস বাইকগিলা আফ্রিকার গিনি উপসাগরের একটি ছোট দ্বীপ প্রিন্সেপে অবস্থিত স্কোপ পেঁচার একটি অভিনব প্রজাতি। দ্বীপের আদি বাসিন্দা এই পেঁচা প্রায় ৬ বর্গ মাইল এলাকা দখল করে রয়েছে। জনসংখ্যাও নেহাত কম না, প্রায় ১,০০০ থেকে ১,৫০০ পেঁচা রয়েছে প্রজাতিটির। কিন্তু পেঁচার প্রাকৃতিক অঞ্চলের সীমাবদ্ধতার কারণে গবেষকরা এই প্রজাতিটিকে 'ভীষণ বিপন্ন' হিসাবেই শ্রেণিবদ্ধ করার প্রস্তাব করেছিলেন।

শুঁড়হীন জেলি - অ্যাটোলা রেনল্ডসি

এই প্রজাতিটির সন্ধান মেলার আগে, জীববিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন, সমস্ত অ্যাটোলা জেলিরই বোধহয় একই রকমের শুঁড় রয়েছে, যা দিয়ে তারা সমুদ্রের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে খাবার শিকার করে। অ্যাটোলার মতোই একটি প্রাণীর দেখা মিলেছে আর এই প্রাণীর লেজ বা শুঁড় কিছুই নেই।

দক্ষিণ স্লথ - ব্র্যাডিপাস ক্রিনিটাস

জীববিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে প্রায় ৫,০০০ স্তন্যপায়ী প্রাণীকে স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসাবে স্বীকার করেছেন, তবে এখানেই শেষ নয়। বিজ্ঞানীরা একবার ভেবেছিলেন শুধুমাত্র একটিই প্রজাতির স্লথ ব্রাজিলের বনভূমিতে ঘুরে বেড়ায়, তবে এখন দেখা যাচ্ছে যে এই অঞ্চলে আসলে দুটি প্রজাতি রয়েছে, একটি উত্তরে এবং অন্যটি এই অঞ্চলের দক্ষিণে। উত্তরের Bradypus torquatus প্রথম ১৮১১ সালে মিলেছিল, দক্ষিণের Bradypus crinitus-কে পাওয়া গিয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে।

 

More Articles