কীভাবে বিলুপ্ত হয়েছিল ডাইনোসর? এতদিনে জানতে পারলেন বিজ্ঞানীরা
বহুদিন ধরে মানুষ ধন্দে ছিল, ডাইনোসর নিশ্চিহ্ন হল কীভাবে। তারপর যখন জানা গেল, বিশালাকৃতি উল্কাপাতই এই বিপুলায়তন প্রাণীদের নিশ্চিহ্ন করেছিল– তখন থেকে বোধহয় মোটামুটি সকলের মাথাতেই এই প্রশ্ন এসেছিল– এই বিশালায়তন ডায়নোসরদের শেষ দিন কেমন ছিল।
বিজ্ঞানীরা বোধহয় এবার সেই প্রশ্নের উত্তর শেষমেশ খুঁজে পেলেন। প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগের একটি অতিকায় ডাইনোসরের পায়ের জীবাশ্ম খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটার কাছে৷ এবং উল্কাপাতের ফলে ঠিক কীভাবে আঘাত পেতে পারে ডাইনোসরের শরীর, সেই সাক্ষ্যপ্রমাণও তুলে ধরছে প্রায় নিখুঁতভাবে থেকে যাওয়া পায়ের এই জীবাশ্ম।
এই ফসিল বা জীবাশ্মটি থেস্কেলোসরাস (Thescelosaurus) প্রজাতির ডাইনোসরের। আন্দাজ করা হচ্ছে, টিকটিকির মতোই এরা আঁশযুক্ত ডাইনোসর, ওজন প্রায় একশো থেকে তিনশো কিলোগ্রামের মধ্যে। বিজ্ঞানীদের মতে, সমসাময়িক মাংসাশী ডাইনোসরদের কিন্তু এত আঁশ থাকত না। এবং এই ফসিলটি এতই নিখুঁত যে, এর পায়ের চামড়ার বেশ কিছু অংশও অবশিষ্ট রয়ে গেছে, ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ঘটা বিধ্বংসী উল্কাপাতের পরেও। এই সময়েই থেস্কেলোসরাস প্রজাতির ডাইনোসররা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়।
আরও পড়ুন: মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে কী মনে করে মানুষ! উত্তর গবেষণায়
কার্বন ডেটিং (Carbon Dating) এবং রেডিওঅ্যাক্টিভ আইসোটোপ (Radioactive Isotope) ব্যবহার করে ফসিলটির বয়স জানা গেছে। কার্বন ডেটিং কোনও ঐতিহাসিক বস্তুর বয়স জানার জন্য একটি বহুলব্যবহৃত পদ্ধতি।
থেস্কেলোসরাসের আবির্ভাব হয় ক্রিটেশাস যুগে, এবং এদের বাসস্থান ছিল উত্তর আমেরিকা। এই প্রজাতিকে ডাইনোসরদের শেষ বংশধর হিসেবে ধরা হয়, যারা নিশ্চিহ্ন হয়েছিল ক্রিটেশিয়াস-প্যালিওজিন যুগে (Cretaceous- Paleogene extinction event)। এবং এই যুগটিকে ডাইনোসরদের নিশ্চিহ্ন (extinction) হওয়ার যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ডাইনোসরদের পাশাপাশি অনেক সুদীর্ঘ প্রাণীও নিশ্চিহ্ন হয় এই যুগেই।
ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাঞ্চেস্টারের প্রাকৃতিক ইতিহাসের (Natural history) অধ্যাপক ফিলিপ ম্যানিং-এর (Profm Phillip Manning) মতে, এইভাবে, এত নিখুঁত অবস্থায় জীবাশ্ম পাওয়া অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তাঁর মতে, খুব নির্ভুলভাবে যেন ৬৬ মিলিয়ন বছর আগের দিনটি তুলে ধরছে এই জীবাশ্ম। এবং থেস্কেলোসরাসের পায়ের এই দীর্ঘ জীবাশ্ম যেন প্রাকৃতিক ইতিহাসের সুন্দর এক গল্প তুলে ধরছে আমাদের চোখের সামনে।
ডাইনোসরটির সঠিক বয়স জানা গেল। সে যে থেস্কেলোসরার প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত, তাও না হয় ডাইনোসরদের সময়ের ইতিহাস ও তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলিয়ে জানা গেল।
কিন্তু এত নিশ্চিত হচ্ছেন কী করে যে, থেস্কেলোসরাসের এই প্রজাতিটি উল্কাপাতেই মারা গেল? লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের তরফ থেকে প্রফেসর পল ব্যারেট (Prof. Paul Barrett) বিবিসিকে জানিয়েছেন, পা-টি দেখে মনে হচ্ছে যেন হঠাৎই কোনও বড় কিছুর আঘাতে কাটা পড়ে গেছে পা-টি। পায়ে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই, অসুখের চিহ্ন নেই, কামড়, এমনকী দাগেরও চিহ্ন নেই। পায়ের অধিকাংশ চামড়াই একদম নিখুঁতভাবে রয়ে গেছে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, উল্কার আঘাতে হুট করেই যেন কাটা পড়ে গেছে দীর্ঘাকৃতি এই প্রাণীর পা।
ম্যানিং আরও জানাচ্ছেন, নর্থ ডাকোটার এই অঞ্চল থেকে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূরেই গালফ অফ মেক্সিকোতে মাছের দেহাংশেরও জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। মাছের এই জীবাশ্মের বয়স যত, ঠিক সেই সময়ে এই অঞ্চলে উল্কাপাতের ঘটনার প্রমাণ আগেও দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সব মিলিয়ে আরওই স্পষ্ট হচ্ছে থেস্কেলোসরাস প্রজাতিটির এই সদস্যের পা উল্কার আঘাতেই দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।