তিন মাসের একরত্তি মেয়েকে গরম রড দিয়ে বারবার ছ্যাঁকা! কারণ শুনে আঁতকে উঠছে গোটা ভারত

Baby Girl killed with Hot Iron Rod India : একবার নয়, অন্তত ৫১ বার ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে সেই মেয়েটিকে। ছোট্ট শরীর এই অত্যাচার নিতে পারেনি।

বয়স মাত্র তিন মাস। ফুটফুটে একটি মেয়ে। সন্তানের জন্ম হলে যে কেনও বাড়িতেই আনন্দের পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু এখানে সেই আনন্দের পরিবেশই বদলে গেল আর্তনাদে। উঠে এল নৃশংস, ঘৃণ্য একটি ঘটনা। মাত্র তিন মাস বয়সি ওই ফুটফুটে মেয়েটিকে লোহার রড গরম করে ছ্যাঁকা দেওয়া হল। একবার নয়, অন্তত ৫১ বার ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে সেই মেয়েটিকে। ছোট্ট শরীর এই অত্যাচার নিতে পারেনি। পৃথিবীর আলো ঠিক করে দেখার আগেই সে মারা গেল। ২০২৩ সালের শুরুতেই এমন খবর সামনে আসতে হতভম্ব হয়ে গেল নেট দুনিয়া। আর এমন ঘটনা ঘটেছে খোদ ভারতে।

ঠিক কী ঘটেছে? মধ্য প্রদেশের শাহদল জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে তিন মাস আগে জন্মায় একটি মেয়ে। এতদিন ঠিকঠাকই চলছিল সব। হঠাৎই দিন কয়েক আগে বাচ্চাটির শরীর খারাপ হয়। প্রবল জ্বর, শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছিল মেয়েটি। এরকম কোনও সমস্যা হলে সেই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু এখানে সেসব কিছুই হয়নি। ডাক্তারের নিয়ে যাওয়ার আগে ওই একরত্তি শিশুটির মা-বাবা তাকে নিয়ে যায় স্থানীয় এক ওঝার কাছে। বলে রাখা ভালো, মধ্য প্রদেশের ওই গ্রামটি মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত। ওখানে প্রথাগত ডাক্তার, চিকিৎসার থেকে এই ঝাড়ফুঁক আর ওঝাকেই বেশি বিশ্বাস করেন সেখানকার প্রান্তিক মানুষেরা।

তিন মাসের ছোট্ট মেয়েটির শরীর খারাপ হওয়ার পর সেই ওঝার কাছেই নিয়ে গেলেন তাঁর মা-বাবা। তারপরই ঘটল সেই নৃশংস ঘটনা। তার দাবি, হয়তো ঝাড়ফুঁক করলে এই শিশুটি ঠিক হয়ে যাবে। সেই ‘পদ্ধতি’ মেনেই লোহার রড গরম করে বারবার সেই শিশুটিকে ছ্যাঁকা দিতে শুরু করে। একবার নয়, দু’বার নয়; অন্তত ৫১ বার! লোহার গরম রডের ছ্যাঁকা খাওয়ার পর তিন মাসের একটা বাচ্চার অবস্থা কী হতে পারে? সেটা নিশ্চয়ই আন্দাজ করা যাচ্ছে। ঠিক সেটাই হল। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মারাই গেল সেই একরত্তি মেয়েটি! শেষমেশ গোপনে তাকে কবরও দিয়ে দেয় তার মা-বাবা!

এই খবর সামনে আসার পর তড়িঘড়ি আসরে নামে প্রশাসন। কবর থেকে একরত্তি মেয়েটির মৃতদেহ তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়। তখনই সামনে আসে আসল রহস্য। মৃত্যুর দিন ১৫ আগে থেকেই অসুস্থ ছিল ওই শিশুটি। জানা যায়, আদতে নিউমোনিয়া হয়েছিল একরত্তি মেয়েটির। সেজন্যই শরীর খারাপ হয়েছিল তার। তাহলে তো হাসপাতালে নিয়ে আসলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত! ঠিকঠাক চিকিৎসা হলে অল্প দিনের মধ্যে সুস্থও হয়ে যেত মেয়েটি। কিন্তু এমন পরিণতি তো দেখতে হতো না!

এখানেই উঠে আসে কুসংস্কারের প্রসঙ্গ। ২০২৩-এ বিজ্ঞানের ব্যাপক অগ্রগতির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমরা। ভারতেও একের পর এক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, মঙ্গলযান, চন্দ্রযানের কাজ হচ্ছে। প্রতিটা রাজ্যে বারবার বিজ্ঞান সচেতনতার প্রচার চালানো হচ্ছে। তারপরও অন্ধ বিশ্বাস, কুসংস্কার ছেয়ে রয়েছে, তার প্রমাণ মধ্য প্রদেশের এই ঘটনা। এখনও প্রকৃত শিক্ষা আর বিজ্ঞানের আলো সব জায়গায় পৌঁছয়নি – চোখে আঙুল দিয়ে সেটা দেখিয়ে দিল ২০২৩-র ভারত।

এটা কি বিক্ষিপ্ত ঘটনা? তা হয়তো নয়। মধ্য প্রদেশের ওই বিশেষ এলাকায় এরকম লোহার রড গরম করে ঝাড়ফুঁকের চল আছে। তাহলে কি বিজ্ঞানের আলো সেখানে পৌঁছয়নি? এই প্রশ্নটাই তুলে দিয়ে গেল ওই তিন মাসের ছোট্ট মেয়েটি। কুসংস্কারের জন্য আর কত বলি দিতে হবে সবাইকে? এই প্রশ্নই তুলেছেন নেটিজেনরা।

More Articles