আফতাবের সংগ্রহে ছিল বিভিন্ন ধরনের পারফিউম, শ্রদ্ধা হত্যায় নতুন সংযোজন বান্ধবীর বয়ান

Shraddha Murder Case : একজন নয়, শ্রদ্ধা ছাড়াও আফতাবের একাধিক সম্পর্কের কথা এসেছে সামনে

১২ নভেম্বরের ঘটনা, দিল্লির শ্রদ্ধা মার্ডার কেসের মূল অভিযুক্ত আফতাব পুনাওয়ালাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর থেকে নিত্যদিন নয়া মোড় নিচ্ছে তদন্ত প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যে আফতাবের পলিগ্রফি টেস্টেরও রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে পুলিশ। তা থেকে উঠে এসেছে আরও নানা কিছু। একজন নয়, শ্রদ্ধা ছাড়াও আফতাবের একাধিক সম্পর্কের কথা এসেছে সামনে।

শ্রদ্ধা হত্যাকাণ্ডের পরতে পরতে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঠিক যেন সিনেমার চিত্রনাট্য। ঘটনা যে দিকে মোড় নিচ্ছে তাতে রিল নাকি রিয়েল সেটা বোঝাই দায়! পুলিশ সূত্রে খবর, আফতাবের দাবি ছিল, ‘ডেক্সটার’ নামক একটি সিরিজ দেখেই শ্রদ্ধাকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল সে। শ্রদ্ধা হত্যা মামলায় প্রতিদিনই বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য। অধিকারকিকদের অনেকেই সন্দেহ করছেন, শ্রদ্ধা হত্যা মামলার অভিযুক্ত আফতাব পুনাওয়ালা একা নয় তাকে আরও কেউ কেউ সাহায্য করে থাকতে পারেন। হত্যা এবং প্রমাণ লোপাটের কাজে অন্য কারোর সাহায্যের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছে না দিল্লি পুলিশ।

আরও একটি ঘটনার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে তদন্তে। ২০১০ সালে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে খুন হন অনুপমা গুলাটি। তাঁকে খুন করেছিলেন তাঁরই স্বামী রাজেশ গুলাটি। রাজেশ তাঁর স্ত্রী অনুপমার দেহ ৭০ টুকরো করেছিল। জানা যায়, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ছাড়তে যাওয়ার সময় দফায় দফায় মুসৌরির বিভিন্ন জায়গায় স্ত্রীর দেহের টুকরোগুলি ফেলে আসত রাজেশ। আফতাব অবশ্য ৩২ টুকরো করেছিল কিন্তু পুরো ঘটনায় প্রচ্ছন্ন হলেও মিল রয়েছে দু-ক্ষেত্রের। শুধু তাই নয়, ঘটনা চেপে রাখার বিষয়ে রাজেশকেও ছাড়িয়ে যায় আফতাব। রাজেশ যেখানে দুমাস ঘটনা চেপে রাখতে পেরেছিল আফতাব সেখানে পেরেছে প্রায় ছয়মাস।

আফতাব একপ্রকার হতবাক করে দিয়েছে গোটা অপরাধ জগৎকে। খোদ পুলিশ আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, এ ঘটনা বিরল থেকে বিরলতম। গোটা দেশ জুড়ে শিরোনাম দখল করে রেখেছে আফতাব। পলিগ্রফি, নারকো ইত্যাদির পর শ্রদ্ধার খুনের নতুন অস্ত্র এবার তার বান্ধবী। একাধিক ডেট অ্যাপে অ্যাকাউন্টের হদিশ পাওয়া গিয়েছে আফতাবের। বাম্বল অ্যাপের রেকর্ডও খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। তার সঙ্গে মিলেছে ১৫ থেকে ২০ জন বান্ধবীর খোঁজও। সম্প্রতি দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শ্রদ্ধা হাতে যে আংটিটি পরতেন, তাকে খুনের পর সেটি খুলে রেখে দিয়েছিলেন আফতাব। তারপর সেই আংটিই আবার উপহার দেয় তার নতুন অন্য বান্ধবীকে। আরও জানা গিয়েছে যে, এই আংটিটি নাকি ছিল শ্রদ্ধার বাবার।

এহেন পরিস্থিতিতে দিল্লি পুলিশের তরফে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয় আফতাবকে। এতেই প্রকাশ্যে এসেছে আরও নতুন তথ্য। তিনি জানান, আফতাব নাকি খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে। খুব খেয়ালও রাখত তার। ফলে তাকে দেখে কখনওই মনে হয়নি যে সে কাউকে খুন করতে পারে। আরও চাঞ্চল্যকর দিক হল, পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে , আফতাবের এই বান্ধবী পেশায় একজন মনোবিদ। শ্রদ্ধাকে খুনের পর এই বান্ধবীকেই আফতাব তার ছতরপুরের ফ্ল্যাটেও নিয়ে এসেছিলেন। যদিও বান্ধবী সে সময় খুনের বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলেই দাবি করেছেন। তিনি আরও জানান, আফতাবের সংগ্রহে ছিল বিভিন্ন ধরনের ডিওডোরেন্ট ও পারফিউমের। প্রায়শই তাঁকে উপহার হিসাবে দিতেন পারফিউম। এই বান্ধবীকে জেরার করায় আফতাবের ব্যক্তিগত পছন্দ সম্পর্কে নানা কিছুর হদিশ পায় পুলিশ। জানা যায়, প্রচুর সিগারেট খেত আফতাব। কিন্তু বান্ধবীকে নাকি কথা দিয়েছিলেন শীঘ্রই ছেড়ে দেবে ধূমপান। ফলে বাইরে থেকে দেখে বান্ধবীর স্বাভাবিকই লেগেছিল এই সম্পকর্কে। কিন্তু এই আকস্মিক ঘটনার জেরে তিনিও ভেঙে পড়েন, বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছেন কাউন্সিলিং-এর। শুধু তাই নয়, বাইরের খাবারও খেতে পছন্দ করত আফতাব। নানা অ্যাপে অর্ডার দিত খাবার। প্রায়শই বাড়িতে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আসত। এমনকী শেফরা কীভাবে রেস্তোরাঁয় খাবার সাজায় সে সম্পর্কেও শখ ছিল তাঁর ৷

মানসিক বিকৃতি নাকি পরিকল্পিত খুন এসব প্রশ্ন তো ছিলই পাশাপাশি এই বান্ধবীর বয়ান আরও বাড়িয়ে দিলো ঘটনার ঘনঘটা। তবে আরও পথ চলা বাকি এই তদন্তের। পুলিশ সহ গোটা সমাজ এখন তাকিয়ে সেদিকেই।

More Articles