ফ্যাশান শো থেকে লালকেল্লা হিংসা, আজীবন আলোয় থাকতে চেয়েছিলেন দীপ সিধু...

২০২১ প্রজাতন্ত্র দিবসের কথা মনে আছে? কৃষক আন্দোলন তখন মধ্যগগনে, হঠাৎ খবর এলো, লাল কেল্লায় উত্তেজনা, হিংসার। কৃষকেরা নাকি হিংসার পথ বেছে নিয়েছেন। সেই ঘটনার পুরোভাগে থাকা দীপ সিধু গাড়ির দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারালেন গত পরশু। পাঞ্জাবি এই অভিনেতা কূন্দলি- মানেসর-পালওয়াল হাইওয়েতে দুর্ঘটনার শিকার হলেন। পুলিশ জানিয়েছে, একটি ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারে দীপের গাড়ি। কে ছিলেন এই দীপ? এভাবে শিরোনামে উঠে আসাই বা কেন?

১৯৭৯ সালে পাঞ্জাবের শ্রীমুক্তার সাহেব জেলায় এক শিখ পরিবারে জন্ম দীপের। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন, তার সঙ্গেই শুরু হয় মডেলিং। কিংফিশার মডেল হান্ট এবং গ্রাসিম মিস্টার ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় কিছু বিভাগে জিতে প্রথম খ্যাতির আলোকে আসেন।

কিন্তু মডেলিং বেশিদিন ভালো লাগেনি ওঁর। ওকালতিটাই মন দিয়ে করা শুরু করেন, এবং ব্রিটিশ ফার্ম হ্যামন্ড এবং ডিজনি, সোনি পিকচারসের মত প্রযোজনা সংস্থার সাথে কাজ করেন।

অভিনয়ের অফার মডেলিং এর সময় থেকেই পাচ্ছিলেন তিনি, শেষমেষ ৩১ বছর বয়সে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। পাঞ্জাবি সিনেমা রামতা যোগী দিয়ে তার রুপোলি পর্দার যাত্রা শুরু হয়। তবে তিনি সবথেকে বেশি খ্যাতি পান জোড়া ১০ নাম্বারিয়া সিনেমার মাধ্যমে। যেখানে তিনি সিস্টেমের শিকার এক গ্যাংস্টারের চরিত্রে অভিনয় করেন।

দীপ কৃষক আন্দোলন দিল্লির সীমান্তে আসার অনেক আগে থেকেই জড়িয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, নতুন প্রজন্মকে এই আন্দোলনে যুক্ত করানোর জন্যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। শম্ভু মোর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন দীপ। অনেক শিল্পীকেই দেখা গেছে, তারা অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, আবার চলে গেছেন, কিন্তু দীপ টানা দুই মাস কৃষকদের পাশে থেকে অবস্থান করেছেন।

তার সাথে কিছু কৃষক সংগঠনের মত বিরোধের কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় যে তিনি আরএসএসের চরবৃত্তি করছেন। যে অভিযোগ পুনরায় উঠে আসে যখন লালকেল্লায় হিংসার ঘটনা ঘটে। সেই অভিযোগে ঘি ঢালে তার বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা সানি দেওলের সঙ্গে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ছবি। তবে সেই দাবির সপক্ষে এর বেশি কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

দীপ সিধুকে লালকেল্লার এক পতাকা স্তম্ভে নিশান সাহেবের পতাকা তোলার জন্যে গ্রেফতার করা হয় ফেব্রুয়ারিতে। দুই মাস হাজতে থাকেন তিনি।

তবে দীপের অংশগ্রহণ শুধু মাত্র আন্দোলনের দাবি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যে ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর এবং বাকি কৃষকদের আন্দোলন নাড়িয়ে দিক ক্ষমতার ভিত্তিকে। তার লক্ষ্য ছিল এই কৃষক আন্দোলনের মাধ্যমে বৃহত্তর রাজনৈতিক বদল নিয়ে আসা। নিজের ভাষণে শুধু শিখদের ইতিহাস তুলে ধরা নয়, দেশের ফেডারেলিজম এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার কথাও তুলে ধরতেন নিয়মিত। দীপের সাথে যারা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন তারা অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, কিন্তু দীপ হননি। তবে চলতি বিধানসভা নির্বাচনের জন্যে শিরমনি অকালি দলের হয়ে নিয়মিত প্রচার করেছেন।

মাত্র ৪২ বছর বয়সে দীপ নিভল, নিভে গেল অগুনতি সম্ভাবনা।

More Articles