মানুষ নয়, খাবার থেকে ওষুধ ডেলিভারি করবে ড্রোন! কাজ খাবে যন্ত্র?

শুধু মাত্র খাবার নয়, গ্রসারি সার্ভিস, ওষুধ পরিষেবাকেও এর আওতায় আনার কথা ভাবনা চিন্তা করেছে ।

এতদিন বাইকে বা সাইকেলে করে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের অর্ডার বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিংবা ওষুধ পৌঁছে যেত আমার আপনার কাছে। এখন থেকে এসব জিনিস পৌঁছবে ব্যাটারি চালিত ড্রোন।বিশ্বাস হচ্ছে না তো? কিন্তু অবিশ্বাস্য হলে ও এটাই সত্যি। বিদেশে চালু থাকলে ও ভারতে এই প্রথম ড্রোনে ডেলিভারি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সুইগি, ফ্লিপকার্ট , জোম্যাটোর মত সংস্থাগুলি। পরীক্ষামূলক ভাবেই ডেলিভারিতে ড্রোন ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে ডেলিভারি সংস্থাগুলি। শুধু মাত্র খাবার নয়, নিজেদের গ্রসারি সার্ভিস, ওষুধ পরিষেবাকেও এর আওতায় আনার কথা ভাবনা চিন্তা করেছে ।

কোথায় শুরু হচ্ছে এই পরিষেবা?

কিছুদিন আগে এক বিবৃতিতে সুইগি জানায় বেঙ্গালুরু এবং দিল্লি ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে এই ড্রোন সার্ভিস শুরু করা হবে। প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালে বেঙ্গালুরুতে এই ড্রোন ডেলিভারির দায়িত্বে থাকবে গারুদা অ্যারোস্পেস প্রাইভেট লিমিটেড এবং নয়াদিল্লিতে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্কাইএয়ার মবিলিটি প্রাইভেট লিমিটেড কে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা চালাবে ANRA, টেকইগল এবং মারুত ড্রোনটেক প্রাইভেট লিমিটেডের মত সংস্থাগুলি। প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের ফলাফল দ্বিতীয়বার পরীক্ষানিরীক্ষার যাবতীয় পরিকল্পনা স্থির করা হবে।

এছাড়া ও লাস্ট মাইল ডেলিভারি ফার্মের জিপ ইলেকট্রিক ও ভারতের বাজারে শুরু কোর্টে চলেছে ডেলিভারিতে ড্রোন পরিষেবা। প্রাথমিক ভাবে জিপ ইলেকট্রিক ড্রোন ডেলিভারির জন্য TSAW ড্রোনের সঙ্গে চুক্তি করেছে। প্রথম পর্যায়ে ডেলিভারির জন্য ২০০ টি ড্রোন বাজারে আনা হবে। বর্তমানে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, মুম্বই ও পুনেতে বিভিন্ন দ্রব্য সরবরাহ করবে ড্রোনগুলি।

ড্রোন ডেলিভারির নিয়মগুলি কী?

২০২১ সালে ভারতে নতুন ড্রোন পলিসি চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সময় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়েছিলেন, ২০৩০ এর মধ্যে ভারতকে আন্তর্জাতিক ড্রোন হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ই কমার্স ক্ষেত্রগুলিতে ড্রোনের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সরকার পুরোনো বিয়ন্ড ভিসুয়াল লাইন অফ সাইট সংক্ষেপে ‘বি ভি এল ও স’ সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করে। কেন্দ্রীয় সরকার এখনও অবধি সুইগি সহ আরও ২০ টি ই কমার্স কোম্পানির ক্ষেত্রে ড্রোন ডেলিভারির অনুমতি দিয়েছে।

ড্রোন ডেলিভারিতে ফ্লিপকার্ট ও জোম্যাটো

শুধু সুইগি নয়, ড্রোন ডেলিভারি শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে ই-কমার্স সংস্থা ফ্লিপকার্ট ও ফুড ডেলিভারি সংস্থা জোম্যাটোর। ফ্লিপকার্ট এর আরেক শাখা ফ্লিপকার্ট হেলথ স্কাই এয়ার মবিলিটি কোম্পানির সঙ্গে পার্টনারশিপে ওষুধ ডেলিভারির পরিকল্পনা করেছে। পশ্চিমবঙ্গে ফ্লিপকার্ট এর সবথেকে বড় লজিস্টিক হাব থেকেই কলকাতা শহর ও শহরতলিতে ওষুধ ডেলিভারি করা হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ফ্লিপকার্ট।

প্রত্যেকদিন ২০ টি ড্রোন ডেলিভারি করা হবে। প্রতিটি ডেলিভারিতে ৫ কিলো করে ওষুধ ১৬ কিমি এলাকা জুড়ে সরবরাহ করবে ফ্লিপকার্ট। এই প্রসঙ্গে ফ্লিপকার্ট এর সহযোগী ড্রোন ডেলিভারি সংস্থা স্কাই এয়ারের সিইও অঙ্কিত কুমার জানিয়েছেন, ‘ ফ্লিপকার্টের সঙ্গে যৌথভাবে এই কাজ করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। ড্রোন ডেলিভারির মাধ্যমে সহজেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় দ্রুত ওষুধ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে’।

২০১৯ সালেই প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে ড্রোনের মাধ্যমে খাবার ডেলিভারির পরীক্ষা শুরু করে বিখ্যাত খাবার ডেলিভারি সংস্থা জোম্যাটো।তখন ও অবধি ভারতে কোনো প্রয়োজনীয় দ্রব্য বা খাবার ডেলিভারিতে ড্রোন ব্যবহারের সবুজ সংকেত দেয়নি কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক। সেই সময়ই পরীক্ষামূলক ভাবে ৫ কিলো ওজনের খাবার নিয়ে ড্রোন ডেলিভারি দেওয়ার চেষ্টা করে জোম্যাটো। এই ৫ কিলো খাবার নিয়ে ৫ কিমি দূরত্বে খাবার পৌঁছে দিতে সময় লেগেছিল মাত্র ১০ মিনিট। সেখান থেকেই ফুড ডেলিভারিতে ড্রোন ব্যবহারের পরিকল্পনা করে জোম্যাটো। এতে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই নির্দিষ্ট স্থানে খাবার পৌঁছে দেওয়া যাবে।

ভারতে ড্রোন ডেলিভারির ভবিষ্যত ?

ভারতে প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। ২০২১ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ভারতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৩৪.৪ শতাংশ। আগে ভারতে বেসরকারি ক্ষেত্রে বা ই কমার্সের ক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সেইসব নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পথে হেঁটেছি কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের ড্রোন সংক্রান্ত নতুন নীতির ফলেই বহু ই কমার্স সংস্থা ব্যবসায়িক বৃদ্ধির জন্য ড্রোন ডেলিভারির পথে হাঁটছে।

কিন্তু এই ড্রোন ডেলিভারি কিছু স্বাভাবিক প্রশ্ন উস্কে দিচ্ছে। কম সময়ের মধ্যে দ্রুত ডেলিভারির জন্য ড্রোনের ব্যবহার যত বাড়বে তত নিজেদের ডেলিভারি বয়দের চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটবে বেসরকারি সংস্থাগুলো। যার ফলে বাড়বে বেকারত্ব। আবার দ্রুত ড্রোন ডেলিভারির ক্ষেত্রে নিশ্চিত ভাবেই পণ্যের দাম বাড়ানোর পথেই হাঁটবে ই কমার্স সংস্থাগুলি। এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে যা ফের সাধারণ মানুষকে অসুবিধায় ফেলতে পারে।

More Articles