পূর্ণতা পায়নি ভালোবাসা, আত্মহত্যার পর যেভাবে বিয়ের বাঁধনে জুড়লেন গুজরাতের 'রোমিও-জুলিয়েট'

Gujarat Lover's statue Marriage Viral : পাত্র-কনে, দু’জনেরই পরিবারের চোখে জল। সেই ভিডিও নেট দুনিয়ায় ভাইরালও হল রীতিমতো। কারণটা কী?

গ্রামের ভেতর দু’টি মূর্তি। আবক্ষ মূর্তি, যেমনটা হরদম দেখা যায় ভারতের রাস্তায়, পার্কে। সেরকমই দু’টি মূর্তি; কিন্তু কোথাও যেন আলাদা। ছেলেটির চাপদাড়ি, চোখে সানগ্লাস, পরিপাটি করে কাটা ফ্যাশনেবল চুল। আর মেয়েটিও একদম সাদাসিধে। দু’জনকেই সাজানো হয়েছে বর-বধূ বেশে। কেউ রক্তমাংসের মানুষ নন, দুই আবক্ষ মূর্তি! আর তাদেরই কিনা বিয়ে হবে! দুটো মূর্তির বিয়ে কী করে হবে? কিন্তু গুজরাতের এই গ্রামে এমন ঘটনাই ঘটল। পাত্র-কনে, দু’জনেরই পরিবারের চোখে জল। সেই ভিডিও নেট দুনিয়ায় ভাইরালও হল রীতিমতো। কিন্তু এর পেছনে কারণটা কী?

গুজরাতের তাপি গ্রামের এই ভালোবাসার গল্প এই মুহূর্তে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন ছবি দেখে অনেকেই চোখের জল ফেলেছেন। কেউ কেউ ফিরে গিয়েছেন নিজেদের ভালোবাসার কাহিনিতে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন গণেশ আর রঞ্জনা। তাপি গ্রামেই থাকতেন দু’জনে। রঞ্জনাকে দেখে প্রেমে পড়ে যান গণেশ। ওদিক থেকেও সাড়া আসে। এরপর শুরু হয় দুজনের প্রেমের কাহিনি। ঠিক যেন তাপি গ্রামের ‘রোমিও-জুলিয়েট’!

আরও পড়ুন : সঙ্গমরত যুগলের ওপর গরম আঠা, শেষে কুপিয়ে খুন, তান্ত্রিকের বীভৎস প্রতিশোধের সাক্ষী ভারত

একটু একটু করে গাঢ় হয় প্রেমের সম্পর্ক। একসময় গণেশ আর রঞ্জনা ঠিক করেন, এই ভালোবাসাকে পরিণতি দেবেন তাঁরা। বিয়ে করে সুখের সংসার তৈরি করবেন। ভালোবাসায় ভরা থাকবে সেই ঘরটি। দুই যুবক যুবতীর চোখেই ঘুরছে অজস্র স্বপ্ন। এর মধ্যেই দুই পরিবারের কাছেই ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে যায়। তাঁরা দুজনেই বিয়ে করতে চান, এমন কথাও জানিয়ে দেন গণেশ-রঞ্জনা। এরপরই শুরু হয় ঝড়।

দুই পরিবারের কেউই এই সম্পর্ক মানতে রাজি নয়। বিশেষ করে ছেলের বাড়ির দিক থেকে প্রবল আপত্তি ওঠে। কেন? রঞ্জনা যে সম্পর্কে গণেশদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় হয়! এই বিয়ে হলে যে লোকে ছি ছি করবে! লোকে হাজার একটা কথা শোনাবে! পরিবারের মান সম্মান কোথায় থাকবে তখন? একেবারে সটান বারণ করে দেয় তারা। এই বিয়ে কিছুতেই হবে না! সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসো দু’জনে।

কিন্তু সেটা মানতে পারেননি গণেশ-রঞ্জনা। আলাদা সংসার করে যে তাঁরা থাকতে পারবেন না। শেষমেশ চরম সিদ্ধান্তই নিয়ে নিলেন। ২০২২ সালের আগস্ট মাস। গ্রামেই গণেশ ও রঞ্জনা একসঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ভালোবাসার স্বপ্ন একেবারে ধসে পড়ে। একসঙ্গেই পরিণতির দিকে এগিয়ে গেলেন তাপি গ্রামের ‘রোমিও-জুলিয়েট’।

আরও পড়ুন : বাঙালির নিজস্ব প্রেমের ‘আইকন’! ঐন্দ্রিলা সব্যসাচীর প্রেম কেন হার মানাবে সিনেমাকেও

এরপরই বোধোদয় হয় দুই পরিবারের। সন্তানদের এভাবে মৃত্যু মানতে পারেননি কেউ। গণেশ-রঞ্জনা, দুজনের পরিবারই একসঙ্গে বসে। কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রত্যেকে। তাঁদের জেদের জন্যই এমনটা হল, মেনে নিলেন সবাই। তারপরই যুগলের শেষ ইচ্ছে পূরণ করার তোড়জোড় শুরু হয়। গ্রামের ভেতরেই দু’জনের আবক্ষ মূর্তি তৈরি করা হয়। সম্প্রতি সেই দু’টি মূর্তিরই বিয়ে দেওয়া হয়। একেবারে পুরোহিত ডেকে মালাবদল থেকে সিঁদুরদান – সবটাই করা হয়। এভাবেই মৃত্যুর পরও গণেশ-রঞ্জনা একসঙ্গে জুড়ে রইলেন। কেবল একটাই আফসোস, বেঁচে থাকতে দুই পরিবার মেনে নিলে একটা সুখী ছবি তৈরি হতো তাপি গ্রামে।

More Articles