লিভারের মাত্র ২৫ শতাংশ কার্যকর! কঠিন অসুখ সত্ত্বেও কীভাবে এত ফিট বিগ বি

Amitabh Bachhan: অমিতাভ বচ্চনের লিভারের মাত্র ২৫ শতাংশ কার্যকর! তা সত্ত্বেও কীভাবে এত ফিট এবং অ্যাক্টিভ তিনি?

আজ অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিন। জীবনের ৮০তম বছরে পৌঁছলেন বলিউডের বিগ বি। এই বয়সে এসেও অমিতাভ বচ্চনের অ্যাক্টিভ লাইফস্টাইল প্রেরণা জোগায় তরুণদের। আজকাল তো চল্লিশ পেরনোর আগেই বার্ধক্যের ছাপ পড়ে যাচ্ছে মানুষের মধ্যে। সাধারণত আমরা দেখি, ষাটের পর কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পর বেশিরভাগ মানুষই আরাম আর বিশ্রামেই দিন কাটান। আর এখানেই ব্যতিক্রম অমিতাভ বচ্চন! কারণ কাজ থেকে অবসর নেওয়া তো দূর, আশি বছর বয়সে এসেও চুটিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি! পরিচিতরা বলেন, এখনও প্রতিদিন গড়ে ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন বলিউডের এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, এই বয়সেও তাঁর কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা রয়েছে।

কিন্তু অনেকেই জানেন না, অমিতাভ বচ্চনের লিভারের মাত্র ২৫ শতাংশ কার্যকর! ভেবে অবাক লাগছে না? এই বয়সে লিভারের এত জটিল সমস্যায় ভোগা সত্ত্বেও কীভাবে এত ফিট এবং অ্যাক্টিভ তিনি? দিল্লির শ্রীগঙ্গারাম হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. অনিল অরোরা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, যদি কোনও ব্যক্তির লিভার ১৫-২০ শতাংশও ঠিকঠাক কাজ করে, তবে তিনি মোটামুটি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। লিভারের পুনঃবৃদ্ধির ক্ষমতা রয়েছে। তবে যদি একদম প্রাথমিক অবস্থাতেই লিভারের সমস্যা ধরা পড়ে এবং সঠিক চিকিৎসা হয়, তাহলে তা চিন্তার বিষয় নয়। যদিও বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে লিভারের কার্যকারিতা একবার কমে গেলে তা পুনরায় বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। মনে করা হয়, ৭৫-৮০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সিরোসিসের কারণে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অমিতাভ বচ্চনের ক্ষেত্রেও সেটিই হয়েছে। তবে এতে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। বিগ বি-র এখনও ২০-২৫ শতাংশ লিভার কার্যকর এবং ওঁর যে ধরনের অ্যাক্টিভ লাইফস্টাইল, তাতে ওঁর শারীরিক কোনও সমস্যা হবে না।

আরও পড়ুন: বিষাক্ত কাশির সিরাপে শিশুমৃত্যু! ভারতে মিলছে অবাধে, কীভাবে তিলে তিলে প্রাণ নেয় ‘ওষুধ’

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, লিভার সিরোসিসের কারণ এবং লক্ষণগুলি কী কী?
লিভারের নানারকম রোগের মধ্যে লিভার সিরোসিসকে চূড়ান্ত পর্যায়ের একটি রোগ বলে গণ্য করা হয়। সত্যি বলতে এটি এতটাই মারাত্মক যে এর সঠিক কোন চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো ডাক্তাররা খুঁজে বের করতে পারেননি। ডা. অনিল অরোরার মতে লিভারের সমস্যার চারটি প্রধান কারণ হলো- অ্যালকোহল সেবন, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হেপাটাইটিস (বি এবং সি)। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই চারটি কারণের জন্যই লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের লিভার দুর্বল হতে শুরু করে। লিভারের অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ম মেনে চলা উচিত সিরোসিস এড়ানোর জন্য। যদি একদম প্রথম পর্যায়ে এটি ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রাখা যায়। তাই এই রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে এই রোগটি ধরা পরলে নিয়মিত ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। অ্যাপেলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস, বিখ্যাত লেখক সাদাত হাসান মান্টো এই রোগের শিকার হয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত কেউই বেশিদিন আর বাঁচেননি। তবে তাদের এই রোগটি ধরা পড়েছিল একদম শেষ পর্যায়ে। সুতরাং, এই রোগের লক্ষণ সম্পর্কে আমাদের আগে থেকে অবগত থাকতে হবে। লিভারের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত এই রোগটির লক্ষণ সাধারণত প্রকাশ পায় না। সিরোসিসের প্রধান কয়েকটি লক্ষণ হলো-

  • ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া
  • পা, গোড়ালি ও পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া
  • সহজেই রক্তপাত হওয়া বা ক্ষত সৃষ্টি হওয়া
  • বমিভাব
  • ক্লান্তি
  • চুলকানি
  • হাতের পাতা লাল হয়ে যাওয়া
  • খিদে কমে যাওয়া
  • ওজন হ্রাস পাওয়া
  • অ্যাসাইটিস বা পেটে জল জমে যাওয়া
  • ঝিমুনিভাব, বিভ্রান্তি এবং কথা জড়িয়ে যাওয়া

নানা ধরনের রোগ লিভারের ক্ষতি করার মাধ্যমে সিরোসিস সৃষ্টি করতে পারে। এর বিভিন্ন কারণগুলি হলো-

  • অনিয়ন্ত্রিত ধূমপান এবং মদ্যপান
  • হিমোক্রোমাটোসিস বা শরীরে লোহার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া
  • আলফা-১ অ্যান্টিট্রিপসিনের মাত্রা হ্রাস পাওয়া
  • জন্মগত মধুমেহ-জনিত রোগ যেমন গ্লাইকোজেন স্টোরেজ ডিজিজ বা গ্যালাক্টোসিমিয়া
  • নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগের কারণে লিভারে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া
  • বিলিয়ারি আর্টেসিয়া, যাতে পিত্তনালীর অসম বা অস্বাভাবিক গঠন হয়
  • সিফিলিস-জাতীয় যৌন সংক্রমণ
  • প্রাইমারি বিলিয়ারি সিরোসিস অর্থাৎ পিত্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া

ডা. অরোরার মতে লিভারের সমস্যা বা সিরোসিস এড়াতে, আমাদের উচিত ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা এবং হেপাটাইটিস ভ্যাকসিন নেওয়া। এছাড়াও যারা ধূমপান ও মদ্যপান করেন তাদের অনতিবিলম্বে এটি বন্ধ করতে হবে এবং জাঙ্ক ফুড খাওয়া কমাতে হবে। যাদের স্থূলতার সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ এবং সতেজ রাখতে হবে। নচেৎ লিভারের সমস্যা অবশ্যম্ভাবী। লিভারকে সুস্থ রাখতে পুষ্টিগুণে ভরপুর ডায়েট নিতে হবে। এছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ে হেপাটাইটিস পরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়।

এই তো গেল কী করতে হবে তার কথা। তবে লিভার সিরোসিসের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে কিভাবে ফিট রাখেন অমিতাভ বচ্চন ? আসুন জেনে নেওয়া যাক -

ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে শতহস্ত দূরে:
অনেক ফিল্মে হয় তো অমিতাভ বচ্চনকে ধূমপান করতে দেখা যায়। কিন্তু বাস্তব জীবনে ধূমপান বা মদ্যপান থেকে শতহস্ত দূরেই থাকেন বিগ বি। আসলে ধূমপান আর মদ্যপানের মতো অভ্যেস আমাদের শরীরের প্রচুর ক্ষতি করে দেয়। আগে একটুআধটু ধূমপান করেলেও লিভারের সমস্যার পর থেকে একেবারেই সেই অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছেন অমিতাভ বচ্চন।

চা-কফি নৈব নৈব চ
শোনা যায়, কেরিয়ারের প্রথম দিকে কফি পানের প্রতি ঝোঁক ছিল অমিতাভের। অবশ্য বর্তমানে চা বা কফি, কোনওটাই আর খান না তিনি। লিভারের সমস্যা থাকলে চা এবং কফির মধ্যে উপস্থিত ক্যাফিন শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়।

আমিষ খাবার সম্পূর্ণ বন্ধ
আগে আমিষ খাবারই খেতেন অমিতাভ। কিন্তু সম্প্রতি নিজের একটি পোস্টে জানিয়েছিলেন যে, তিনি ও তাঁর স্ত্রী জয়া বচ্চন, দু'জনেই আমিষ খাবার খাওয়ার অভ্যেস ত্যাগ করেছেন। সম্পূর্ণ নিরামিষ খাবারই খান তাঁরা। আমিষ খাবার ত্যাগ করলে লিভারে ফ্যাট জমার প্রবণতা কমে।

কড়া ডায়েট প্ল্যান
অমিতাভ বচ্চনের রোজকার খাবারের তালিকা থেকে কয়েকটি বিষয় জানা গিয়েছে। ফিট থাকার জন্য তিনি রোজ তুলসীপাতা খান, পান করেন ডাবের জল, আমলকীর জুস, কলা, খেজুর, আপেল ইত্যাদি গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে প্রতিদিন নিয়ম করে প্রচুর জল পান করেন এই অভিনেতা। যা তাঁকে ফিট ও তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও মিষ্টি বা বিভিন্ন ধরনের কেক-পেস্ট্রি জাতীয় খাবার সাধারণত এড়িয়ে যান অমিতাভ।

নিয়মিত শরীরচর্চা
প্রতিদিন শরীরচর্চা এবং ব্যায়াম করা অমিতাভ বচ্চনের ডেলি রুটিনের মধ্যে পরে। প্রতিদিন সকালে তিনি হাঁটতে যান এবং যোগাসনও অভ্যেস করেন। আর বর্ষীয়ান এই অভিনেতার ফিটনেসের সবচেয়ে বড় রহস্যটাই হলো শরীরচর্চা।

More Articles