খ্রিস্টের সময়কার বিলুপ্ত খেজুর গাছকে কীভাবে ফিরিয়ে আনলেন বিজ্ঞানীরা?
Methuselah Plam Tree : ১৯৬৩-'৬৫ সালের মাসাদা খননকার্যের সময়, প্রত্নতাত্ত্বিকরা হেরোড দ্য গ্রেটের দুর্গের নীচে শুকনো মাটির পাত্রে সংরক্ষিত কয়েক ডজন খেজুরের বীজ আবিষ্কার করেন। পরে, রেডিওকার্বন বিশ্লেষণে জানতে পারা যায় সে...
দু-হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে, জুডেয়ান খেজুর গাছ (Phoenix dactylifera) শুধুমাত্র প্রাচীন কিছু গ্রন্থেই বেঁচে ছিল। তারপর, ২০০৫ সালে, বিজ্ঞানীরা মাসাদার হেরোডের দুর্গ ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করে জুডেয়ান খেজুরের একটি বীজ, সেই বীজকে তাঁরা অঙ্কুরিত করেন, এবং যা থেকে জন্ম নেয় ‘মেথুসেলাহ’। এই মেথুসেলাহ হল হিব্রু বাইবেলের সব থেকে দীর্ঘজীবী চরিত্র! এই চরিত্রের নামেই রাখা হয়েছে গাছটির নাম।
১৯৬৩-'৬৫ সালের মাসাদা খননকার্যের সময়, প্রত্নতাত্ত্বিকরা হেরোড দ্য গ্রেটের দুর্গের নীচে শুকনো মাটির পাত্রে সংরক্ষিত কয়েক ডজন খেজুরের বীজ আবিষ্কার করেন। পরে, রেডিওকার্বন বিশ্লেষণে জানতে পারা যায় সেইসব বীজের বয়স হল ১৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। অর্থাৎ ঠিক বীজগুলি যিশুর সমসাময়িক। এই বীজগুলি বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ে চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুপ্ত অবস্থায় ছিল, যতক্ষণ না ড. সারাহ স্যালন ২০০৫ সালে উদ্ভিদবিজ্ঞানী ডঃ এলেন সলোওয়েকে সেগুলি অঙ্কুরিত করার চেষ্টা করেন!
আরও পড়ুন-
আহত ঘাস কীভাবে বিপদ থেকে বাঁচায় অন্যান্য গাছেদের?
মেথুসেলাহর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে, গবেষকরা মাসাদা, কুমরান এবং ডেড সি পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে ৩২টি সুষ্ঠ সংরক্ষিত বীজ নির্বাচন করেন। তাঁরা সেগুলি রোপণ করেন, জল দেন এবং সাবধানে পর্যবেক্ষণ করেন। ২০২০ সালের মধ্যে, আরও ছয়টি গাছ অঙ্কুরিত হয় এবং স্থায়ী ভাবে বেড়ে ওঠে। গাছগুলির নাম দেওয়া হয়েছে, অ্যাডাম, জোনাহ, উরিয়েল, বোয়াজ, জুডিথ এবং হ্যানা। জেনেটিক্স নিশ্চিত করেছে যে এই চারাগুলির উৎস খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ-১ম শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় ১ম-২য় শতাব্দীর মধ্যে বিস্তৃত ছিল।

মেথুসেলাহ খেজুর গাছ
শুধুমাত্র স্ত্রী খেজুর গাছেই ফল ধরে। মেথুসেলাহ যেহেতু পুরুষ গাছ তাই এই গাছটির ভূমিকা কেবল পরাগদাতা হিসেবেই সীমাবদ্ধ। ২০১৫ সালে, হ্যানা নামক খেজুর গাছের স্ত্রী চারাকে নিষিক্ত করার জন্য মেথুসেলাহ-র পরাগ ব্যবহার করা হয়। ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে, গাছটিতে ফল আসে। প্রথম বছর ফলন হয় ১১১টি খেজুর, এবং পরের বছর প্রায় ৭০০টি। এবং এভাবেই, প্রায় ২,০০০ বছর পর প্রাচীন খেজুর গাছের এই জাতটি আবার ফল দেওয়া শুরু করে!

মাসাদা ন্যাশনাল পার্ক
আরও পড়ুন-
রূপান্তরকামী হয় গাছও! প্রতি ঋতুতে কীভাবে লিঙ্গ বদলায় আখরোট গাছ?
এই পুনরুজ্জীবিত গাছগুলি সাধারণত শারীরিকভাবে শক্তিশালী এবং পরিচিত খেজুর গাছের চেয়ে বেশ বড় হয়। এবং এই সব গাছের ফলের স্বাদ-ও পরিচিত খেজুরের থেকে ভিন্ন।চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যে জুডান খেজুর গাছকে বিলুপ্ত বলে মনে করা হত। গাছটি জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামাজিক উত্থান-পতনের কারণে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। তবুও আজ, এই চারাগুলি ইজরায়েলের কিবুটজ কেতুরাতে বেড়ে উঠছে এবং গবেষকরা টিস্যু কালচারের মাধ্যমে গাছগুলির বাণিজ্যিক প্রসারের জন্য কাজ করছেন।

Whatsapp
