রূপান্তরকামী হয় গাছও! প্রতি ঋতুতে কীভাবে লিঙ্গ বদলায় আখরোট গাছ?

Walnut Tree: যে নিয়মে মহিলা এবং পুরুষ আখরোট গাছগুলিকে তাদের ৫০:৫০ অনুপাতে ভারসাম্য বজায় রাখে তা অনেকটা প্রাণীর যৌন ক্রোমোজোমের কাজ করার মতোই।

মানুষ যৌন পরিচয় বদল করতে পারে। সামাজিক নানা ভ্রূকূটিকে উপেক্ষা করে বহু লড়াই করেই রূপান্তরকামীরা নিজেদের পছন্দমতো হয়ে ওঠেন, মনেও এমনকী শরীরেও। মানুষের মতো এমন রূপান্তরণ কি প্রাণীদের ঘটে? বা গাছপালাদের? অদ্ভুত এই প্রশ্নের উত্তর প্রকৃতি যত্নে রেখেছে নিজের কাছেই। দেখা গেছে, আখরোট গাছগুলি সময়মতো পুরুষ হয়ে ওঠে, কখনও আবার স্ত্রী। দেখা গেছে, একটি লিঙ্গের ফুল প্রথমে ফোটে এবং দ্বিতীয় লিঙ্গের ফুলটি দ্বিতীয় দফায় ফোটে।

সেই ১৮৭৭ সালেই চার্লস ডারউইন আখরোট গাছগুলির স্ত্রী ফুল বা পুরুষ ফুলের এই বিষয়টি উল্লেখ করে গেছিলেন। ঘরে লাগানো আখরোট গাছের পাশাপাশি জঙ্গলে হওয়া আখরোট গাছের মধ্যেও এই বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে। ১৯৮০-র দশকে স্নাতক ছাত্র স্কট গ্লিসন আবিষ্কার করেছিলেন যে বিষয়টির নেপথ্যে আছে একটি নির্দিষ্ট জেনেটিক গঠন। তবে সেটি কীভাবে কাজ করে সেই সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই জানা বাকি।

আরও পড়ুন- গাছ সত্যিই হাঁটে? বটগাছের এই অভাবনীয় ঘটনার আড়ালে কোন সত্য?

ইউসি ডেভিসের জনসংখ্যা জীববিজ্ঞানের স্নাতক পড়ুয়া জেফ গ্রোহ বলেছিলেন, আখরোট এবং পেকানের একটি অস্থায়ী দ্বিরূপতা রয়েছে যেখানে তারা এক একটি ঋতুতে আলাদা করে পুরুষ এবং মহিলা ফুলের জন্ম দেয়।। তবে ১৮০০-র দশক থেকে বিষয়টি জানা থাকলেও আণবিক স্তরে তা নিয়ে কিছু বিশদ জানা যায়নি।

জেফ গ্রোহ এবং অন্যন্যরা জাগল্যানডেকেই (Juglandaceae) গাছের পরিবারে লিঙ্গ নির্ধারণ নিয়ে কাজ অরেছেন। বিবর্তন এবং বাস্তুবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গ্রাহাম কুপের সহায়তায় আখরোটের প্রজনন নিয়ে বিশদে পরীক্ষা করার জন্য ক্যাম্পাসে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার কালো আখরোট গাছের থেকে নানা তথ্য ও নমুনা সংগ্রহ করেছেন তারা। কোনটি প্রথমে মহিলা এবং কোনটি প্রথমে পুরুষ ছিল এই নিয়ে কাজ করতে করতে তারা এই গাছগুলির জিনোমগুলিকে ক্রমানুসারে তৈরি করেন।

আরও পড়ুন-কলম্বাস নাম দিয়েছিলেন ‘মৃত্যুর আপেল’! এই গাছ ছুঁলেই যেতে পারে প্রাণ!

দেখা গেছে যে, আখরোটের ক্ষেত্রে গ্লিসন জিনের দু'টি রূপ শনাক্ত হয়েছে যা ফুল ফোটার সময় লিঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে। বিজ্ঞানীরা অন্তত নয়টি প্রজাতির আখরোটের মধ্যে এই জিনের দু'টি রূপ দেখেছেন। তারা আরও দেখেছেন যে, বিষয়টি দীর্ঘ সময় ধরে, প্রায় ৪০ মিলিয়ন বছর ধরে চলে আসছে। পেকান গাছের ক্ষেত্রেও তারা আবিষ্কার করেন যে, এদেরও ফুলের একটি নিজস্ব কৌশল রয়েছে যা একটি স্বতন্ত্র জেনেটিক নিয়মে নিয়ন্ত্রিত। পেকানের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ মিলিয়ন বছর আগে থেকে এই বিবর্তন চলে আসছে। এত দীর্ঘ সময় ধরে বৈচিত্র্য বজায় রাখা খুবই স্বাভাবিক। লিঙ্গ নির্ধারণের একটি স্পষ্ট সমান্তরাল নিয়ম এখানে আছে

যে নিয়মে মহিলা এবং পুরুষ আখরোট গাছগুলিকে তাদের ৫০:৫০ অনুপাতে ভারসাম্য বজায় রাখে তা অনেকটা প্রাণীর যৌন ক্রোমোজোমের কাজ করার মতোই। মানুষের (পাশাপাশি অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের) দু'টি কাঠামোগত রূপ রয়েছে, X এবং Y ক্রোমোজোম। এগুলি মোটামুটিভাবে ভারসাম্য বজায় রেখেই চলে। কোনও একটির প্রভাব অন্যটির সঙ্গে মিলনের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে।সুতরাং, মানুষের মতো শুধু গাছের প্রাণ আছে তাই নয়, গাছ আর মানুষ খুব আলাদাও নয়। হ্যাঁ, হতে পারে তা আমাদের সীমিত চিন্তাশক্তির বাইরে, তবে প্রকৃতি এখানে বিভেদ করেনি, বৈচিত্র্যকেই মান্যতা দিয়েছে।

More Articles