দুবাইয়ের সবচেয়ে বড় প্রাসাদ এখন আম্বানির, কীভাবে সেজে উঠছে অন্দরমহল?

ভারতীয়রা, দুবাইয়ের সর্বোচ্চ স্থাবর-সম্পত্তির ক্রেতা দীর্ঘদিন যাবৎ। এইবার সেই তালিকায় যোগ হলো মুকেশ আম্বানির নামও।

আম্বানি পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ আলোচনার শীর্ষে থেকেছে বরাবরই। ইদানীং, আদানির ছায়ায় তা একটু ম্লান হয়ে গিয়েছিল। তবে ফের আরেকবার আন্তর্জাল সরগরম। কেন্দ্রে আম্বানি। দুবাইয়ে সমুদ্রতটের ধারে এক বিরাট ভিলা কিনে ফেলেছেন মুকেশ। রিলায়েন্সের ইন্ডাস্ট্রির তরফ থেকে ৮০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে কেনা হয়েছে ভিলাটি। অর্থাৎ, ভারতীয় মুদ্রায় ৬৪০ কোটি ২৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। শহরের সবথেকে বড় প্রাসাদটিই কিনে ফেলেছেন আম্বানি। যদিও ব্যাপারটা গোপন রাখতেই চেয়েছিলেন, কিন্তু বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত দুই ব্যক্তির কাছ থেকে সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই আরও একবার চর্চার কেন্দ্রে রিলায়েন্স।

পাম জুমেইরাহ্-র সম্পত্তিটি এই বছরেরই গোড়ার দিকে কেনা হয় মুকেশের কনিষ্ঠ পুত্র অনন্তের নামে। সূত্রের মারফতে জানা গিয়েছে, ক্রেতার পরিচয় এবং আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি গোপনই রাখতে চেয়েছিলেন তাঁরা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পাম-আকৃতি এই দ্বীপটি কৃত্রিম উপায়ে তৈরি। তারই উত্তরাংশে সমুদ্রতটে এই বিরাট ভিলা। ভিলায় বেডরুমের সংখ্যা দশ। একটি প্রাইভেট স্পা-সহ রয়েছে ইনডোর ও আউটডোর পুল।

দুবাইয়ের নাম এককালে অন্ধকার জগতের জন্য চর্চিত ছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই বিলাসের সঙ্গে দুবাইয়ের নাম যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। এর অন্যতম কারণ দুবাইয়ের সরকারি নীতি। অত্যন্ত ধনবান পুঁজিপতি বা বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের ওপর নির্ভরশীল একটি বড় বাজার তারা তৈরি করতে পেরেছে। দুবাইয়ের সরকার তাই এইসব পুঁজিপতিদের দীর্ঘমেয়াদি গোল্ডেন ভিসা দিয়ে থাকে। যাতে করে এই অঞ্চলের নাগরিক না হয়েও, বিদেশি হিসেবেই দীর্ঘদিন বসবাস করতে পারে ব্যবসায়ীরা। দুবাইয়ের ব্যবসায় অন্যতম বৃহৎ ক্রেতা হিসেবে এইসব ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি তাদের অর্থনীতিকে পোক্ত করে। এঁদের বাস্তু-মালিকানা পেতে বিন্দুমাত্র অসুবিধে হয় না। দুবাইয়ের এই বিরাট ভিলার মালিক এখন ইংল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যাম, তাঁর স্ত্রী ভিক্টোরিয়া এবং বলিউডের মেগাস্টার শাহরুখ খানের প্রতিবেশী।

আরও পড়ুন: মাত্র ৯ সেকেন্ড! তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাবে নয়ডার টুইন টাওয়ার, তাকিয়ে গোটা দেশ

ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী আম্বানির ৯৩.৩ বিলিয়ন ডলারের এই বিরাট রাজত্বের তিনজন উত্তরাধিকারী। অনন্ত তাঁদের মধ্যে অন‌্যতম। নিজের সাম্রাজ্যকে গ্রিন এনার্জি, প্রযুক্তি, ই-কমার্স— ইত্যাদি নানা শাখায় বাড়িয়ে তুলেছেন মুকেশ। এখন তাঁর বয়েস ৬৯। বিশ্বের একাদশতম ধনী প্রৌঢ় তাই নিজের রাজত্ব ধীরে ধীরে সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। তথ্য সূত্রে খবর, বিদেশে স্থাবর সম্পত্তি ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে আম্বানি পরিবার। তিন সন্তানই পশ্চিমে দ্বিতীয় আবাসন কেনার পরিকল্পনা করছিলেন বেশ কিছু দিন ধরে। গত বছরও আম্বানি পরিবারের বড় ছেলে আকাশের জন্য ৭৯ মিলিয়ন ডলার খরচা করে স্টোক পার্ক লিমিটেড কেনা হয়েছে রিলায়েন্সের তরফে। স্থাবর-সম্পত্তিটির মধ্যে একটি জর্জিয়ান যুগের প্রাসাদও রয়েছে। সম্প্রতি রিলায়েন্স জিও ইনফোকম লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়েছে আকাশকে। আকাশের যমজ বোন ইশা নিউ ইয়র্কে একটি আবাসন কিনতে চলেছেন বলেও খবর।

খুব গোপনে বিক্রয়ের পালা সারতে চেয়েছিল রিলায়েন্স। দুবাইয়ে বসবাসকারী তাদের এক কর্মচারীর মাধ্যমেই গোটা ব্যাপারটা সেরে ফেলা হয়েছে। যাঁরা এই তথ্য ফাঁস করেছেন, তাঁদেরই একজন জানান, কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে ভিলাটি নিজের মতো করে সাজিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে আম্বানি পরিবার। নিরাপত্তার জন্যও খরচ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। আম্বানির বহু দিনের বন্ধু, রিলায়েন্স গ্রুপের ডিরেক্টর অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স এবং পার্লামেন্টের সদস্য পরিমল নাথওয়ানি ভিলাটির দেখাশোনা করবেন বলেই খবর। যদিও আম্বানিদের প্রধান আবাসন অ্যান্টালিয়াই থাকছে। মুম্বইয়ের এই আবাসনটি ২৭ তলা, রয়েছে আস্ত একটি হেলিপ্যাড, ১৬৮ গাড়ি পার্ক করার মতো বন্দোবস্ত, ৫০ জন বসে উপভোগ করতে পারেন এমন সিনেমা হল, একটা বিশাল বলরুম এবং নটি এলিভেটর।

যদিও এই সম্পত্তি ক্রয়ের ব্যাপারে কোনওরকম উত্তর আসেনি রিলায়েন্স-এর তরফে।

পাম জুমেইরাহ্ দ্বীপটিকে বিলাসের প্রাণকেন্দ্র বলা যায়। বিলাসবহুল প্রাসাদ ছাড়াও পশ হোটেল, গ্লিৎজি ক্লাব, স্পা, রেস্তোরাঁ এবং বেশ কিছু অ্যাপার্টমেন্ট টাওয়ার রয়েছে এই দ্বীপে, যেখান থেকে পার্সিয়ান গাল্ফ-এর মনোরম নীল জল দেখা যায়। ২০০১ সাল নাগাদ দ্বীপটির নির্মাণকার্য শুরু হয়েছিল। ২০০৭ নাগাদ এতে লোকজন থাকতে শুরু করেন। দুবাইয়ের স্থাবর সম্পত্তির যে বাজার, তা এই অঞ্চলের মোট অর্থনীতির তিন ভাগের একভাগ। এর জন্যই বড় মাপের আবাসন ক্রেতাদের আপ্যায়ন করে দুবাই। যদিও বছরসাতেক এই বাজারে মন্দা চলছিল। উপরন্তু অতিমারীর ধাক্কা। এই সমস্ত সামলে আবার একটু একটু করে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে দুবাই। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, দুই মিলিয়ন ডিয়ারম বা তার থেকে বেশি মূল্যের স্থাবর-সম্পত্তি ক্রয় করলে বিনিয়োগকারী তথা ক্রেতাদের দশ বছরের ভিসা দেবে দুবাই সরকার।

ইউনাইটেড আরব এমিরেটস-এর ৮০ শতাংশের বেশি বাসিন্দাই বিদেশি। বিগত কয়েক দশক ধরে এঁরাই এই অঞ্চলের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। বেশিরভাগ মানুষই প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করেন, এবং সেই টাকায় সম্পত্তি কেনেন, অথবা বিশ্বের বৃহত্তম মলগুলিতে কেনাকাটা সারেন। বিশেষত ভারতীয়রা, দুবাইয়ের সর্বোচ্চ স্থাবর-সম্পত্তির ক্রেতা দীর্ঘদিন যাবৎ। এইবার সেই তালিকায় যোগ হলো মুকেশ আম্বানির নামও।

More Articles