নিশ্চিন্ত চাকরি ছেড়ে বাছলেন স্বপ্নকেই, যেভাবে ‘সবজিওয়ালা’ হয়ে উঠলেন আইএএস প্রবেশ শর্মা

Pravesh Sharma : আইএএস-এর চাকরি ছেড়ে সবজির ব্যবসা, কীভাবে এই বয়সেও স্বপ্ন পূরণ করছেন মধ্যপ্রদেশের প্রবেশ শর্মা?

এম.এ পাশ চাওয়ালি থেকে শুরু করে এম বি এ পাশ ফুচকাওয়ালা, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এই শব্দবন্ধগুলি বেশ পরিচিত। বরং বলা ভালো, ভাইরালও। শিক্ষাকে এমন বিষম প্রকারে ব্যবহার করতে কি সত্যিই চেয়েছিল আজকের প্রজন্ম? নাকি কোনও দম চাপা পরিস্থিতিই বাধ্য করেছে এই পরিণতিকে বেছে নিতে? যদিও এই তর্কের বিষয়বস্তু এই প্রতিবেদন নয়, তবুও যেন কোথাও একটা প্রচ্ছন্ন যোগ থেকেই যায়। বিষম পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অথবা অকালে দাঁড়িয়েও স্বপ্ন দেখার জেদ, নিয়মমাফিক পথ চলার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস জোগায়।

তবে আজকের গল্পটা কোনও ভাঙাচোরা সময়ের শিকার হয়ে জীবনের বাঁক বদল ঘটানোর নয়, বরং নেশাকে ভালোবেসে নিশ্চিন্ত পেশাকে ছেড়ে বেরিয়ে এসে স্বপ্নপূরণের গল্প। আর এই গল্পের নায়ক যে মানুষটি তাঁর নাম প্রবেশ শর্মা। বর্তমান পরিচয় একজন সবজি বিক্রেতা। তবে এর নেপথ্যে যে অতীত লুকিয়ে রয়েছে তা সহজেই তাক লাগায়। উদাহরণ তৈরি করে আরও পাঁচজনের সামনে।

আরও পড়ুন - ক্ষমতার বিরুদ্ধে স্মৃতির লড়াই! কেন দেখতেই হবে ইন্দুবালা ভাতের হোটেল?

প্রবেশ শর্মা, মোটেই সাধারণ কেউ ছিলেন না। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যে চাকরির জন্য রীতিমতো হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হয়, দীর্ঘদিনের চেষ্টার পরে তিবেই আসে সুদিন। সেই নিশ্চিন্ত চাকরিকে অনায়াসে ছেড়ে সবজির ব্যবসায় কেন এলেন তা বিস্ময় বটে। ১৯৮২ সালের ব্যাচের মধ্যপ্রদেশ ক্যাডারের আইএএস অফিসার ছিলেন প্রবেশ শর্মা। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে তিনি যুক্ত ছিলেন এই কাজে। উজ্জ্বল কর্মজীবন ছেড়ে ২০১৬ সালে তিনি বেরিয়ে আসেন। সরকারি কর্মচারী হিসেবে কাজে ইস্তফা দেন। স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর চালু করেন একটি অনলাইন পোর্টাল, যা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে গ্রাহকদের কাছে তাজা ফল এবং সবজি সরবরাহ করতে পারবে।

‘সবজিওয়ালা’ নামের একটি অনলাইন অ্যাপের স্রষ্টা তিনি। যদিও আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ইতিউতি গজিয়ে ওঠা স্টার্ট-আপের জগতে এটিকে আলাদা করে তোলার জন্য কোনও অভিনব নাম বা কৌশল ব্যবহার করেননি তিনি। সাধারণ টাটকা শাক, সবজি, ফল কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই তিনি তৈরি করেন এই নতুন অ্যাপটি।

‘সবজিওয়ালা’ অ্যাপটি ২০১৬ সালে দ্বারকায় ডেলিভারি দিয়ে প্রথম পথ চলা শুরু করে। তার পর ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে তার বিস্তৃতি। পরবর্তীতে এটি জনকপুরীর সহ পাশাপাশি অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায়, সবজিওয়ালা প্রাথমিক ভাবে একটি অনলাইন-অর্ডারিং অ্যাপ হিসাবে কাজ শুরু করে। এখানে বাজারে মতো দর কষাকষির ঝামেলা ছাড়াই ন্যায্য মূল্যে তাজা শাক, সবজি, ফল পাওয়া যায় সহজেই। এর জন্য কোনও রকম দোকানে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বসেই অর্ডার করা যায়। ঝড় জল বৃষ্টি সব ঋতুতেই দরজায় উপস্থিত হবে প্রয়োজনীয় সব জিনিস।

চটকদার নাম অথবা আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের থেকে জিনিসের গুণগত মান এবং সাশ্রয়ী মূল্যের দিকেই বিশেষ করে নজর দিতে চেয়েছেন প্রবেশবাবু। গ্রাহক সুবিধাকেই তিনি রাখতে চেয়েছেন সর্বাগ্রে। কোনও মল বা সুপার মার্কেটের সাহায্যে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ নয়, বরং সরাসরি দেশের কৃষির ভিতকে চাঙ্গা করতেই উদ্যোগ নেন প্রবেশ শর্মা। তিনি মূলত কৃষিকে ঘিরেই একটি উদ্যোগ তৈরি করতে চেয়েছিলেন যাতে সরাসরি উপকৃত হন কৃষকরা। পাশাপাশি ন্যায্য মূল্যে টাটকা জিনিস পেতে পারেন ক্রেতারাও।

আরও পড়ুন - কোচের প্রিয় ছাত্র ছিলেন না, তবু কোন মন্ত্রে ভারত জয় করলেন সচিন?

প্রথম জীবনে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন প্রবেশ শর্মা। এরপর আইএএস পরীক্ষায় পাশ করে যোগ দেন ভারতীয় কৃষি বিভাগে। মধ্যপ্রদেশের কৃষি সচিব হিসেবে শুরু করে কর্মজীবন। কাজের সূত্রে বিভিন্ন সময়ে কৃষি উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিলের ভারতের প্রতিনিধি এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের কৃষি-ব্যবসা কনসোর্টিয়াম (SFAC) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মতো বিশিষ্ট পদে দায়ভার সামলেছেন তিনি। ফলে পরবর্তী জীবনে নিজের ব্যবসার ক্ষেত্রেও সহায়তা করে এইসব। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে, কৃষক-উৎপাদক সংস্থাগুলির সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করার জন্য সবজিওয়ালাকে কামাটান ফার্ম টেক প্রাইভেট লিমিটেড-এ প্রসারিত করেছিলেন প্রবেশ শর্মা।

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যখন একটা সরকারি চাকরির জন্য হাপিত্যেশ করে থাকতে হয় দিনের পর দিন, যখন চাকরির জন্য গাছতলায় রাত কাটাতে হয় পরীক্ষার্থীদের ঠিক তখন এই শিব কিছুর বিপরীতে দাঁড়িয়ে এই বয়সে এসেও উদাহরণ তৈরি করেন মধ্যপ্রদেশের প্রবেশ শর্মা। স্বপ্ন আর জেদ সম্বল করেও যে জীবনে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব তা যেন অচিরেই মিলে যায় তাঁর গল্পে।

More Articles