সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমগুলো বিপণনের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?

Social Media Marketing বিপণন বা মার্কেটিংয়ের প্ল্যাটফর্ম হিসাবে বিভিন্ন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম উঠে এসেছে জনসংযোগের মাধ্যম হয়ে। তা কখনও টিভি, কখনও বেতার, কখনও হোর্ডিং, কখনও বিল আবার কখনও বা মাইকে প্রচার। দিন যত এগিয়েছে তত ধীরে ধীরে বদলাতে থেকেছে বিপণনের মাধ্যম। রেডিমেড মার্কেটে মার্কেটিং করার যে সুখ বা আনন্দ তার স্বাদ বুঝতে শুরু করেছে বড়ো বড়ো কোম্পানিগুলো। তাই এখন মলে গেলে দেখা যায় ব্যাংকের মার্কেটিং টিমের কর্মীরা ক্রেডিট কার্ড বিক্রির চেষ্টা করছেন। ভিড় স্টেশনের বাইরে দেখা যায় শেভিং কিট কোম্পানির কর্মীরা বিপণন করছেন অথবা ভিড় কোনও জায়গায় চা ওয়ালা চা বিক্রি করছেন। যুগ যত বদলেছে তার সাথে সাথে বদলেছে মানুষের চিন্তা ভাবনা। মানুষ আরও আধুনিক হয়েছে, উন্নত হয়েছে। মানুষের যোগাযোগের মাধ্যমগুলো যে বিপণন করার সেরা জায়গা তা বুঝতে পেরেছে মার্কেটিং এনালিসিস্টরা। আজকের দিনে বিপণন করার এরকমই একটা জায়গায় নাম হলো সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু কেন? সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে এমন কী আছে যা অন্য কোনও মিডিয়ার থেকে সোশ্যাল মিডিয়াকে আলাদা করে তোলে? আসুন জেনে নেওয়া যাক।

সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমগুলো বিপণনের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ছবি সৌজন্যে : Google

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে ৮ থেকে ৮০ যে কোনও বয়সের মানুষকেই খুঁজে পাওয়া যায়। ফেসবুক, টুইটার, ইন্সট্যাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর কোনোটাই ব্যবহার করেন না, এমন লোক খুঁজে বার করা দুষ্কর। এক সার্ভে অনুযায়ী পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৯% মানুষই কোনও না কোনও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকেন। ফলে বিপণন কোম্পানিগুলোর জন্য সুবর্ণ সুযোগই হলো এই বিশ্বজোড়া রেডিমেড বাজারে নিজের নিজের ব্র্যান্ডের প্রমোশন করা বা বিজ্ঞাপন দেওয়া। তার মুখ্য কারণগুলো হলো -

■ অকৃত্রিম কাস্টোমার বা ক্রেতাদের কাছে সহজেই পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ :

অন্য যে কোনও বিপণন মাধ্যমে যখন বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় তখন তার দর্শক বাছাই করা যায় না। সেই বিজ্ঞাপন পৌঁছে যায় এমন মানুষের কাছে যিনি হয়তো কখনও ওই প্রোডাক্ট কিনবেনই না কিংবা যিনি হয়তো এখন কেনার কথা ভাবছেন না কিংবা  হতে পারে তিনি ওই প্রোডাক্ট পছন্দই করেন না। ফলস্বরূপ বিজ্ঞাপনের প্রভাব বুঝতে বুঝতে সময় লাগে বেশ খানিকটা। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের কোম্পানির মার্কেটিং করার ফলাফল একেবারেই অন্যরকম। এখানে যে কোনও ব্যবসার টার্গেট অডিয়েন্সরা ইতিমধ্যেই সেই বিজনেস বা কোম্পানিগুলোর পেজ বা প্রোফাইল ফলো করে রাখে কারণ তারা সেই কোম্পানি দ্বারা উৎপাদিত প্রোডাক্টগুলো ইতিমধ্যেই ব্যবহার করেছেন এবং ভালোবাসেন। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে বাজার তৈরি করতে হয়না ব্যবসাদারদের কোনও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এবং ফলাফলও তারা হাতে নাতে পান। এ ছাড়াও ক্রেতাদের লাইক শেয়ার কমেন্টের মাধ্যমে বিক্রেতারা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়েন তাদের কাছেও যারা তাদের ক্রেতা নন। এ যেন কুয়ো ছেড়ে সমুদ্রে লাফ দেওয়ার এক এবং অনন্য সুযোগ।

■ নিজ সম্প্রদায় বা কমিউনিটির সৃষ্টি :

আমরা সুপারিশ পছন্দ করি। যেমন ধরুন আপনার বাড়িতে এসি নেই, আপনি প্রথমবারের জন্য এসি কেনার কথা ভাবছেন, সবার প্রথমে আপনার মাথায় যেটা আসবে সেটা হলো কোন এসি ভালো? ভালো বলতে টেকসই এবং পকেটফ্রেন্ডলি। আপনি কী করবেন এহেন মুহূর্তে? চেনা পরিচিতর মধ্যে জর বাড়িতে এসি আছে তার কাছ থেকে জানতে চাইবেন সে কোন এসি ব্যবহার করে এবং তার পারফরমেন্স কীরকম? সে যদি বলে যে সে যে কোম্পানির এসি ব্যবহার করছে তা খুবই ভালো, সে খুশি, তাহলে ৯৯% চান্স এটাই যে আপনিও সেই কোম্পানির এসিই কিনবেন। এটাকেই বলে সুপারিশ বা রেকমেন্ড করা। এই একই জিনিস হয় সোশ্যাল মিডিয়াতেও। যে কোনও কোম্পানির বিশ্বস্ত বা অনুগত ক্রেতারা নিজেদের চেনা পরিচিত লোকেদের না বন্ধুদের রেকমেন্ড করে একই প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে। কিন্তু কীভাবে? শেয়ার করে। সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফাঙ্কশন হলো শেয়ার। এই শেয়ার অপশনের মাধ্যমেই তৈরি হয় জন সংযোগ। মুহূর্তে যে কোনও খবর পৌঁছে যায় কোটি কোটি মানুষের কাছে। যখন কোনও ক্রেতা কোনও কোম্পানির কোনও প্রোডাক্ট ব্যবহার করে খুশি হয় তখন সে সেটা সোশ্যাল মিডিয়াতে জানালে খুব স্বাভাবিক ভাবেই আরো ১০ জনের কাছে পৌঁছে যায় সেই প্রোডাক্ট। আর এভাবেই যে কোনও কোম্পানি তৈরি করে নেয় নিজস্ব কমিউনিটি বা সম্প্রদায়। যারা তার সাফল্যের রাস্তা তৈরি করে দেয় বিনামূল্যে।

■ রেপুটেশন তৈরি করার সুযোগ :

টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে কোনও প্রোডাক্ট কিনে ব্যবহার করার পর খুশি না হলে অভিযোগ জানানোর কোনও সুযোগ পান? পান না তো। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে এই সুযোগ পাওয়া যায়। ক্রেতারা সরাসরি তাদের অভিযোগ জানাতে পারে কতৃপক্ষ কে। এবং তার অভিযোগ দেখতে পারে আরও হাজার হাজার ক্রেতা। এটা যেমন কোম্পানির রেপুটেশনের জন্য খারাপ, তেমনই অন্যদিকে ভালোও বটে। শুধু কোম্পানিগুলোকে কাস্টমারের অভিযোগের উত্তর দিতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। তাদের অভিযোগ শুনে কোনও সদুপায় বার করে দিতে পারলেই, সাথে সাথে আরও হাজার হাজার ক্রেতা দেখতে পাবে কোম্পানি তার ক্রেতাদের জন্য ঠিক কতটা তৎপর।

এ ছাড়াও ফিডব্যাক হিসাবে ক্রেতাদের ভালো ভালো অভিজ্ঞতাও থাকে। পেজ বা গ্রুপ সামলানোর জন্য, নেগেটিভ এবং পজিটিভ রিভিউ দুটোই সামলানোর জন্য চাই কেবল একটা এক্টিভ টিম। যারা সমস্ত ধরণের ফিডব্যাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উত্তর প্রদান করবে, নতুন নতুন স্ট্রাটেজি তৈরি করবে কোম্পানির রেপুটেশন বাড়ানোর।

■ কস্ট এফেক্টিভ :

সোশ্যাল মিডিয়া বিপণন ভীষণ ভীষণ কস্ট এফেক্টিভ। ফেসবুক, টুইটার ইন্সট্যাগ্রাম এর মত প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে নিজেদের ইউজারদের প্রায় সমস্ত তথ্য থাকে। যথা নাম, লোকেশন, বয়স, লিঙ্গ, পছন্দ অপছন্দ, বন্ধুতালিকা, রিসেন্ট ভিসিটস ইত্যাদি। যার ফলে কোম্পানিরা খুব সহজেই খুঁজে নিতে পারেন নিজের সম্ভাব্য ক্রেতাদের। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আপনি চাইলেই আপনার বিজ্ঞাপন শুধু তাদেরকেই দেখাতে পারেন যাদেরকে আপনার সম্ভাব্য ক্রেতা বলে মনে হয়। এরফলে আপনাকে বিজ্ঞাপনের জন্য বিশাল পরিমাণ টাকা খরচ করতে হয় না। কিন্তু অন্যান্য যে কোনও মিডিয়ায় আপনি এই সুযোগ পাবেন না।

ধরুন আপনি এমন একজন যিনি হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেন। আপনি যখন টিভিতে বিজ্ঞাপন দেন, তখন আপনার বিজ্ঞাপন পৌঁছায় সমস্ত ধরণের দর্শকের কাছে। যার মাথায় চুল আছে তার কাছে, যার নেই তার কাছেও। যার ফলে বিজ্ঞাপনের খরচ ও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি আপনার দর্শক বেছে নিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন শুধু তাদের কাছেই যাদের মাথায় চুল নেই। যার ফলে বিজ্ঞাপনের দাম ও কম হয় এবং বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতাও বেশি হয়।

সুতরাং আপনি যদি কখনও অবাক হন কেন বিপণনকারীরা সোশ্যাল মিডিয়াকে এত প্রাধান্য দেয় ইদানিং, তার উত্তরগুলো ওপরে সাজানো রইলো। সোশ্যাল মিডিয়া বিপণনের মাধ্যম হিসেবে অন্যান্য মাধ্যমগুলোর তুলনায় এখনো নতুন এবং বয়সে অনেক কম। তাই আশা করা যায় ভবিষ্যতে এই মিডিয়া আরও অনেক উন্নত এবং ভালো ভালো স্ট্র্যাটেজি নিয়ে সামনে আসবে। কিন্তু আপাতত বিপণনের মাধ্যম হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ার কোনও তুলনাই নেই।

 

সোর্স : www.webfx.com

More Articles