টাকা জমানোর রেজোলিউশান, নিজেকেই দেখিয়ে দিন, প্রমাণ করুন আপনিও পারেন

২০২১ কে বিদায় জানিয়ে হাজির নতুন বছর ২০২২। প্রতিবছর সারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মানুষ ৩১ ডিসেম্বর একটা না একটা রেজোলিউশন পরবর্তী বছরের জন্য নির্ধারণ করেন। ওজন কমানো থেকে শুরু করে, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বন্ধ করা, মদ্যপান বন্ধ করা থেকে শুরু করে, নিজের কোনও স্টার্ট-আপ তৈরির ভাবনা, এমন কতই না রেজোলিউশনে ভরা থাকে আমাদের ডায়েরি, কিংবা স্ল্যামবুকের প্রথম পাতাটা। রেজোলিউশনগুলি যে ভালো, তা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই।  কিন্তু তারুণ্যের ঝোঁকে এই রেজিলিউশানে সঞ্চয়কে অনেকেই গুরুত্ব দেন না। এর মাশুল অনেককেই দিতে হয় গোটা জীবন ধরে। তাই আমরা চাই ২০২২ এ আপনি ভাবুন পুরো পরিবারের ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য। ভবিষ্যতের জন্য শুরু করুন টাকা সঞ্চয়।

অবশ্য় এ কথা বলা যত সহজ, টাকা সঞ্চয় করা কিন্তু মোটেও ততটা সহজ কাজ নয়। আমাদের সকলের আয়ের পরিমাণ আলাদা আলাদা রকমের হয়ে থাকে, তার সাথেই আমাদের সকলের প্রয়োজনগুলো একে অন্যের থেকে আলাদা। এ কারণেই, সকলের টাকা সঞ্চয় করার ক্ষমতা এবং পন্থা একে অন্যের থেকে আলাদা হবেই। কিন্তু যদি আপনি নিজের ভবিষ্যৎকে আর্থিক দিক থেকে সুরক্ষিত রাখতে চান, তাহলে আপনাকে এখন থেকেই ভাবনাচিন্তা শুরু করতে হবে। যদি আপনি আপনার ভবিষ্যতের জন্য টাকা সঞ্চয় করতে আগ্রহী থাকেন, তাহলে আমরা আপনাকে জানাতে চলেছি এমন কিছু সহজ উপায় যা ব্যবহারে আপনি খুব সহজেই টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন। 

আপনার প্রতিদিনের খরচের দিকে নজর রাখুন 

টাকা পয়সা সঞ্চয় করতে গেলে প্রথমেই আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হল আপনার প্রতিদিনের খরচের হিসাব এর দিকে নজর রাখতে হবে। প্রতিদিন যদি আপনি কিছু কিছু করে টাকা সঞ্চয় করতে পারেন, তাহলে আপনার কোনো সমস্যাই হবে না। বেহিসাবি ভাবে টাকা খরচ করলে কখনোই আপনি টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন না। আপনাকে প্রথমে জানতে হবে কোন জিনিসটি আপনার সত্যিই প্রয়োজন, আর কোন জিনিসটার বিকল্প আপনি পাবেন।

যে জিনিসের বিকল্প আপনি সহজে এবং স্বল্প মূল্যে পেয়ে যাবেন, সেই জিনিসটি কেনা বন্ধ করুন। হিসাব রাখুন আপনার মাসিক বা দৈনিক আয় এর কত শতাংশ আপনার মাসিক বা দৈনিক খরচে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। পারলে প্রতি মাসের খরচ একটা ক্যাশবুক অথবা হিসাবের খাতায় লিখে রাখতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন, ঠিক কতটা টাকা আপনি প্রতিমাসে খরচ করছেন, এবং কত টাকা আপনি সঞ্চয় করতে পারলেন। প্রতিদিন যদি আপনি সারা দিনে মাত্র ১০ মিনিট সময় এর জন্য খরচ করেন, তাহলেই আপনার মাসের ব্যয়ের পরিমাণ অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। 

প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট বাজেট নির্ধারণ করুন  

এতক্ষণে যখন আপনি জেনে গেছেন আপনার প্রতি মাসে মোটামুটি কত টাকা খরচ হয়, তাহলে এখন আপনি আপনার প্রত্যেক মাসের একটি আলাদা বাজেট নির্ধারণ করতে পারবেন। যদি আপনার প্রতি মাসের বাজেট নির্ধারিত থাকে, তাহলে আপনি অতিরিক্ত খরচ করা থেকে বিরত থাকবেন। একই সাথে, আপনি প্রত্যেক মাসের শুরুতে কিছু পরিমাণ টাকা অতিরিক্ত সঞ্চয় করতে পারবেন, যা পরবর্তীতে আপনাকে সাহায্যই করবে। তবে মাসিক বাজেট নির্ধারণ করার আগে আপনি অবশ্যই কিছু জিনিস খেয়াল রাখবেন। 

মাসিক আয়

আপনার প্রত্যেক মাসের খরচ সম্পূর্ণরূপে নির্ধারিত হবে আপনার মাসিক আয় এর উপর। যদি আপনি সঠিক ভাবে নিজের আর্থিক প্ল্যানিং করতে চান তাহলে আপনার মাসিক আয় থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় এর জন্য রেখে, তারপর আপনার মাসিক বাজেট নির্ধারণ করুন। আপনার মাসিক আয় ও যেরকম হবে তার ওপরেই আপনার ভবিষ্যতের সঞ্চয় এবং আপনার প্রতিমাসের খরচের পরিমাণ নির্ভর করতে চলেছে। 

মাসিক ব্যয়

মাসিক আয়ের পর আপনার মাসিক খরচের একটা হিসাব আপনাকে রাখতে হবে। আর এই মাসিক খরচের উপরে নির্ভর করবে আপনার প্রতি মাসের বাজেট। মনে করুন আপনি প্রতিমাসে ৩০,০০০ টাকা খরচ করে থাকেন। তাহলে অবশ্যই আপনার মাসিক বাজেট ৩০,০০০ টাকার বেশি রাখতে পারবেন না। 

মাঝে মধ্যে বিশেষ কিছু কেনার জন্য আলাদা বাজেট তৈরি করুন 

প্রত্যেক মাসের একটা বাজেট নির্ধারিত থাকলেও, কখনো কখনো এরকম হতেই পারে, আপনার হয়তো কোন বিশেষ একটা পোশাক কিনতে হল, কিংবা অন্য কোন জিনিস কিনতে হল যা আপনার বাজেটের মধ্যে ধরা নেই। প্রতিদিন এক মাস কিংবা দু মাস অন্তর এরকম ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই প্রত্যেক মাসে এরকম কিছু খরচের জন্য আলাদা কিছু বাজেট ধরে রাখুন। 

আপৎকালীন সময়ের জন্য আলাদা বাজেট রাখুন 

প্রয়োজনীয় কিছু কেনার খরচ বাদ দিয়েও আপৎকালীন সময়ের জন্য কিছু বাজেট রাখুন। তবে হ্যাঁ, আপনার সঞ্চয় এ ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে। 

এছাড়া যদি আপনার বাজেটের মধ্যে আরও কিছু যুক্ত করার মত থাকে, তাহলে তা আপনি যুক্ত করতে পারেন।

প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করুন 

আপনি যদি আপনার বাজেট নির্ধারণ করতে চান এবং সেই অনুযায়ী নিজের সঞ্চয় অব্যাহত রাখতে চান তাহলে আপনাকে আগে বুঝতে হবে, কোন জিনিসটি আপনার প্রয়োজন এবং কোনটি আপনার প্রয়োজন না। যে সমস্ত জিনিস না হলে আপনার চলবে না, সেগুলির জন্য খরচ করুন। আর যে জিনিস আপনার না কিনলেও চলে যাবে, সেগুলোর জন্য বিনা কারণে খরচ করবেন না। 

আপনার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য, জল, যাতায়াতের খরচ, মোবাইল পরিষেবা এবং ইন্টারনেটের খরচ রয়েছে। এছাড়া আপনার কাজের জন্য যদি এমন কোন জিনিসের প্রয়োজন হয় যা না হলে আপনার চলবে না, তাহলে সেগুলো আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। অন্যদিকে, বিলাসিতার পণ্য কিছুটা হলেও বর্জন করার চেষ্টা করুন, নতুবা আপনার পক্ষে টাকা জমানো বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে। যদি আপনার বিলাসিতার কোন জিনিস কিনতেই হয় তাহলে তার জন্য আলাদা রকমের বাজেট তৈরি করুন, এবং সেই হিসেবে খরচ করুন। 

বাজেট নির্ধারণ করার সময় একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন, ভালো ভাবে জীবন যাপন করা মানেই কিন্তু প্রচুর টাকা উড়িয়ে দেওয়া নয়। যদি আপনি সাধারণ জিনিসের মাধ্যমে ভালোভাবে আপনার জীবন চালাতে পারেন, তাহলে অবশ্যই আপনি ভালো সঞ্চয় করতে পারবেন ভবিষ্যতে। অন্যরা যা করছে, সেটাই আপনাকে করতে হবে সেরকমটা কখনোই না, খরচ করুন সব সময় নিজের প্রয়োজন অনুসারে।

যেমন ধরুন, আপনার চেনা পরিচিত কেউ ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন বিদেশে। কিন্তু আপনার কাছে বিদেশে যাওয়ার মত বাজেট নেই। তার জন্য আফশোস না করে, নিজের দেশের মধ্যেই, অথবা নিজের রাজ্যের মধ্যেই কোন একটা ভালো জায়গা বেছে নিন ছুটি কাটানোর। সেখানে আপনার পুরো পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে গিয়ে কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসুন। আপনার খরচটা কমবে, সাথেই আপনার ছুটি কাটানোও হবে। 

মাসিক সঞ্চয়ের একটা টার্গেট সেট করে ফেলুন 

যদি আপনি সঠিক পদ্ধতিতে নিজের টাকা সঞ্চয় করতে চান তাহলে অবশ্যই মাসিক সঞ্চয় এর একটি টার্গেট তৈরি করুন। দরকার পড়লে আপনি ব্যাঙ্কে একটা রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এই ধরনের রেকারিং অ্যাকাউন্টে আপনাকে প্রতি মাসে একটা ন্যূনতম টাকা জমা দিতে হয়। এই ধরনের অ্যাকাউন্ট যদি আপনার থাকে তাহলে আপনি সেট করতে পারবেন প্রতি মাসের সঞ্চয় এর টার্গেট।

তবে মনে রাখবেন, রেকারিং অ্যাকাউন্ট খুললে কিন্তু আপনাকে প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবেই, নতুবা ব্যাঙ্ক আপনার সেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটতে শুরু করে। এই ধরনের অ্যাকাউন্ট থাকলে আপনার সুদের হার যেমন বাড়বে, তেমনি আপনি প্রত্যেক মাসে নিয়মিতভাবে সঞ্চয় করতে পারবেন, আর আপনার কষ্টার্জিত টাকা থাকবে একদম সুরক্ষিত। 

তবে এসবের পরেও, টাকা সঞ্চয় করতে আপনার সবচেয়ে আগে যেটা লাগবে সেটা হল আপনার সদিচ্ছা। জীবনে কখনো কোনো আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন না হতে চাইলে সবার আগে কম বয়স থেকেই টাকা সঞ্চয় করা শুরু করে দিন। এছাড়াও আপনার নিজের টাকার উপর আপনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকাটাও দরকার। আর যদি আপনার এরকম একটি সদিচ্ছা থাকে, যে আপনি টাকা সঞ্চয় করতে শুরু করবেন, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করে দিন। আর উপরে নির্দেশ মেনে চললে খুব শীঘ্রই আপনি সাফল্য অর্জন করেও নিয়ে পারবেন। তবে হ্যাঁ, যদি আপনি একটু বেশি খরচ করা মানুষ হন, তাহলে কিন্তু আপনার টাকা সঞ্চয় করতে একটু সমস্যা হবে। আপনাকে টাকা সঞ্চয় করতে হলে আপনার সদিচ্ছা তো লাগবেই, সঙ্গেই আপনার খরচের পরিমাণটাও কমাতে হবে, নতুবা আপনি কখনোই নিজের টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন না।

More Articles