অফিসের মিটিং চলতে চলতেই আচমকা 'ভ্যানিশ'! যে নিখোঁজের ঘটনায় রহস্য দানা বাঁধছে বিশ্বে

Nicola Bulley Mysterious Disappearance : এক সপ্তাহেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি নিকোলা বুলিকে। ৪৫ বছর বয়সি এই মহিলা গেলেনটা কোথায়?

ফাঁকা বেঞ্চে আর কিচ্ছু নেই, কেবল একটা মোবাইল পড়ে রয়েছে। এরকম ফাঁকা এলাকায় এভাবে একটা ফোন পড়ে আছে কেন! আর বেঞ্চের আশেপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে একটা কুকুর। চোখেমুখে অদ্ভুত একটা অস্থিরতা। কাউকে একটা খুঁজছে সে। কাকে খুঁজছে? তাহলে মোবাইল আর কুকুরের মালিক একজনই? কিন্তু এভাবে একটা ফোন পড়ে আছে কেন?

আশেপাশের মানুষজন ফোনটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতেই দেখল, কিছুক্ষণ আগেই সেখানে একটি অফিস মিটিং শেষ হয়েছে। তখনও মাইক্রোসফট টিম অ্যাপটি ফোনে খোলা রয়েছে। সেখান থেকেই দেখা যাচ্ছে ফোনের মালিকের নাম। নিকোলা বুলি (Nicola Bulley)। মিটিং চলতে চলতে কোথায় গেলেন তিনি? এভাবে ফোন আর নিজের পোষ্যকে একা ফেলে রেখে ভ্যানিশ হয়ে গেলেন?

এখান থেকেই ঘটনার শুরু। এই ঘটনাটি ঘটেছে ২৭ জানুয়ারি। তারপর এক সপ্তাহেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি নিকোলা বুলিকে। ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কশায়ারের ৪৫ বছর বয়সি এই মহিলা গেলেনটা কোথায়? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে ইংল্যান্ডে। রহস্যজনক এই ঘটনা অচিরেই গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এখনও পুলিশ তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে গোটা এলাকা। পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ সমস্ত জায়গা। একটাই বক্তব্য, নিকোলা বুলিকে যেভাবেই হোক, যে অবস্থাতেই হোক, খুঁজে বের করতে হবে।

কিন্তু ঠিক কী ঘটেছে? এখনও কিছুই জানা যাচ্ছে না। তার আগের কিছু ঘটনা পুলিশের সামনে এসেছে। প্রতিদিনের মতো ২৭ জানুয়ারিও নিকোলা বুলি তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছিলেন। তাদের বয়স ১০ বছরও পূর্ণ হয়নি। তারপর গাড়ি নিয়ে সোজা চলে যান সেন্ট মাইকেল গ্রামে। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি রেখে কুকুর উইলোকে নিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করেন। উইয়ের নদীর ধারের ফুটপাত ধরে হাঁটেন। মাঝে মাঝে সকালেই অফিসের মিটিং শুরু হয়। হাঁটতে হাঁটতেই অনলাইনে সেই মিটিংয়ে যোগ দেন নিকোলা। ওই সময় নদীর ধারে আরও অনেকেই আসেন। তাঁদের সঙ্গেও কথাবার্তা বলেন নিকোলা।

এটাই তাঁর রোজ সকালের রুটিন। ২৭ জানুয়ারিও তাই করছিলেন নিকোলা বুলি। কিন্তু তারপর কী হল, কেউ জানে না। উইয়ের নদীর ধারের ওই ফুটপাতেই শেষবার তাঁকে দেখা গিয়েছিল। সেখানে বসেই অনলাইন মিটিংয়ে যোগ দেন নিকোলা। মিটিং চলতে চলতেই তিনি হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। ওপার থেকেও কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারেননি। এভাবে হঠাৎ করেই কী করে কেউ নিরুদ্দেশ হতে পারে?

এই প্রশ্নই এখন তাড়া করছে পুলিশকে। সমস্ত রকম সম্ভাবনার দিক খুলে রেখেছে তারা। উইয়ের নদীর ধারেই যেহেতু এই ঘটনা ঘটেছে, তাই পা পিছলে সেখানে পড়ে গিয়ে ডুবে যাওয়াও আশ্চর্যের নয়। স্পিডবোটের মাধ্যমে একটানা তল্লাশি অভিযান চলছে। কিন্তু প্রায় ১০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও, কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। কাদের কাদের সঙ্গে কথা বলেছেন নিকোলা, জীবনে গত কয়েকদিন বা কয়েক বছরে বিশেষ কিছু ঘটেছে কিনা, সেই সমস্ত জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। খুন, অপহরণ বা অন্য কোনও অপরাধের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।

ইতিমধ্যেই নিকোলা বুলিকে নিয়ে নেট মাধ্যম উত্তাল। নিত্য নতুন তথ্য আর তত্ত্বের বন্যা বয়ে যাচ্ছে নেট জগতে। পাশাপাশি স্থানীয় বেশ কয়েকজন অন্য একটা ভয়ও পাচ্ছেন। উইয়ের নদীর ধারের সেন্ট মাইকেলস গ্রামে সাধারণত ভোরের দিকে কেউ হাঁটতে যান না। কেন, সেটা কেউ জানেন না। খারাপ আবহাওয়া অন্যতম কারণ হতে পারে, সেজন্য হয়তো অনেকে বেরোন না। নিকোলা বুলি নিজেও তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এই খারাপ আবহাওয়ার কথা বলেছিলেন। সেটাও জানতে পেরেছে পুলিশ।

আপাতত সবদিক ভেবে রেখেই জোর কদমে তদন্ত চালাচ্ছে তারা। নিকোলা বুলির পরিবারও অত্যন্ত চিন্তায়। বারবার সংবাদমাধ্যমের সামনে আকুতি মিনতি করছে তারা। নিকোলার দুই মেয়ে বারবার বলছে, মা ঠিক চলে আসবে। একটু বেড়াতে গিয়েছে হয়তো। এখনই চলে আসবে। দরজার দিকে ঠায় তাকিয়ে আছে তারা, কখন আসবে মা। সেই অপেক্ষাতেই দিন কাটাচ্ছে ল্যাঙ্কশায়ার।

More Articles