গাড়িতে ঘষটে নিয়ে যাওয়া যুবতীর মাথার ঘিলু অবধি মেলেনি! ভয়াবহ যে তথ্য উঠে এল ময়নাতদন্তে

Delhi Sultanpuri Accident: গাড়িতে টেনে নিয়ে যাওয়া অঞ্জলির দেহে ৪০টি বাহ্যিক আঘাত রয়েছে, তাঁর মাথার খুলির গোড়ার অংশ ভেঙে গেছে এবং মাথার ঘিলুও পাওয়া যায়নি।

দিল্লির রাস্তায় গাড়ির নিচে আটকে যুবতীর দেহ ছেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া আর মৃত্যুর ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে। অনেকেই মনে করেছিলেন, বর্ষবরণের রাতে নিছকই গাড়ির নিচে আটকে দেহ ঘষে নিয়ে যাওয়া নয় এর সঙ্গে রয়েছে যৌন হেনস্থার ঘটনাও। তবে কোনও ধরনের যৌন নিপীড়নের প্রমাণ মেলেনি পরীক্ষায়, জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে দিল্লির মৃত যুবতীর "গোপনাঙ্গে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই।" যুবতী অঞ্জলি সিংয়ের সন্দেহ করেছিলেন যে বিষয়টা কেবল মেয়ের স্কুটিকে গাড়ির ধাক্কা মারা আর তারপর ১৩ কিলোমিটার দেহ টেনে ছেঁচড়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নয়। তাঁর মেয়ের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে যৌন নিগ্রহও। তবে আরও যা যা তথ্য মিলেছে ওই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে রীতিমতো শিউরে উঠতে হয় ওই দুর্ঘটনার বীভৎসতায়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গাড়িতে টেনে নিয়ে যাওয়া অঞ্জলির দেহে ৪০টি বাহ্যিক আঘাত রয়েছে, তাঁর মাথার খুলির গোড়ার অংশ ভেঙে গেছে এবং মাথার ঘিলুও পাওয়া যায়নি।

আঘাতের তীব্রতা এমনই ছিল যে অঞ্জলির পাঁজরগুলি পিঠ থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল, চামড়া সম্পূর্ণরূপে উঠে গিয়েছিল। 'শক এবং রক্তক্ষরণ'-কেই যুবতীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। সমস্ত আঘাতগুলি এতই তীব্র যে তা সম্মিলিতভাবে মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। মৌলানা আজাদ মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের একটি বোর্ড ময়নাতদন্তের এই রিপোর্ট তৈরি করেছেন। যুবতীর দেহের আরও পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য, সোয়াবের নমুনা এবং তাঁর জিন্সের টুকরোগুলিও সংরক্ষণ করা হয়েছে। গাড়িতে থাকা পাঁচজনকেই ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত হত্যা, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো এবং অবহেলার কারণে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। পুলিশ অবশ্য আগেই জানিয়েছিল, যৌন নিপীড়নের কোনও প্রমাণ মেলেনি।

ওইদিন অঞ্জলির সঙ্গে ছিলেন তাঁর বান্ধবী নিধিও। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ২০ বছর বয়সী অঞ্জলি একজন ইভেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি আর তাঁর বন্ধু নিধি স্কুটিতে করে একসঙ্গেই ফিরছিলেন। যখন মারুতি ব্যালেনো গাড়িটি সজোরে তাঁর স্কুটিতে ধাক্কা মারে নিধি অক্ষত অবস্থায়, ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান কিন্তু অঞ্জলির পা আর পোশাক গাড়ির অ্যাক্সেলে আটকে যায়। নিধি এই সম্পূর্ণ ঘটনার একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যক্ষদর্শী বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন-টেনে হিঁচড়ে তরুণীকে নিয়ে গেল গাড়ি, রক্তে ভাসল রাস্তা, দিল্লিতে নারী সুরক্ষা এখনও বিশ বাঁও জলে?

সেদিন অঞ্জলির সঙ্গে থাকা বন্ধু নিধি, যিনি ভয়ে বন্ধুকে বিপদে পড়তে দেখেও পালিয়ে যান, পরে পুলিশকে জানিয়েছেন, গাড়ির তলায় আটকে গিয়ে ক্রমাগত চিৎকার করছিলেন অঞ্জলি কিন্তু ওই যুবকরা গাড়ি থামাননি। "আমি ভয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাই এবং কাউকে ঘটনাটি জানাইনি," বলেছেন নিধি।

বর্ষবরণের একটি পার্টি সেরে ১ জানুয়ারি রাত ১.৪৫ নাগাদ একটি হোটেল থেকে বের হওয়ার পর অঞ্জলি যে পথ দিয়ে ফিরছিলেন সেই পথটি বিশদে দেখার পরে দুর্ঘটনার বিশদ বিবরণ প্রকাশ করে পুলিশ৷ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে দুই মহিলা একটি স্কুটিতে হোটেল থেকে বের হচ্ছেন। দুর্ঘটনার স্থান সুলতানপুরী এলাকা থেকে জায়গাটি খুব দূরে নয়।

গাড়িতে থাকা সব যুবকই স্বীকার করেছেন যে তারা মদ্যপ ছিলেন। স্কুটিতে ধাক্কা মারার পরে তারা খানিক ঘাবড়ে গিয়ে তড়িঘড়ি সেখান থেকে পালাতে যান। কিন্তু কেউই বুঝতে পারেননি গাড়ির নিচে একজন মহিলাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।

ওই মারুতি ব্যালেনো গাড়িটি অঞ্জলিকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় প্রায় ১৩ কিলোমিটার। তখন গাড়ির ভেতর একজন যুবক কানঝাওয়ালার কাছে একটি ইউ-টার্নে দেখতে পান গাড়ির নিচে একটি হাত বেরিয়ে আছে। তারা গাড়ি থামালে যুবতীর দেহ পড়ে যায় এবং তারা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান।

পুলিশ জানিয়েছে, দীপক খান্না অর্থাৎ যে যুবক গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তিনি বার কয়েক বলেছিলেন যে তার মনে হচ্ছে গাড়ির নীচে কিছু আটকে আছে। কিন্তু বাকিরা কেউই পাত্তা না দেওয়ায় গাড়ি থামানো হয়নি।

More Articles