মিসাইল নয় ইউরোপকে একজোট করতে জেলেনস্কির অস্ত্র ফোন

ক্রমশ কৌশলী নেতা হয়ে উঠছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আগুনে পুড়ে খাঁটি সোনার মতই রূপ ধারণ করছে ভলোদিমিরের রণকৌশল। শেষ আটদিনে পুতিনের সৈন্যবাহিনী কার্যত ছাইয়ের গাদায় পরিণত  করেছেন তাঁর ইউক্রেনকে। চারিদিক শুধু গোলাবারুদের শব্দে কেঁপে উঠছে বারবার। কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না রুশ সেনাবাহিনীকে। কিন্তু প্রথমদিকের ধকল সামলে নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন জেলেনস্কি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ভূয়সী প্রসংশা করেছেন তাঁর। রাতারাতি পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তনের পিছনে কার্যকর অস্ত্র হিসেব কাজ করেছে জেলেনেস্কির টেলিফোন।

গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিয়েভে নিজের দফতরে বসে জেলেনস্কি একের পর এক পশ্চিমী নেতাদের সাথে ফোন করে কথা বলেছেন।আর  তার জেরেই পশ্চিমা দেশগুলির অবস্থান বদলাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। কিছু সময় আগেও যা ছিল ভাবনার অতীত।এ মুহূর্তে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পশ্চিমা দেশগুলি। আর এই নিষেধাজ্ঞা যে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে রাশিয়ার জন্য তাও মেনে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তাঁর এই টেলিফোন অস্ত্র যে পুতিনের পারমাণবিক বোমার মতোই কার্যকারী তারই প্রমাণ পশ্চিমা দেশগুলির  একচেটিয়া নিষেধাজ্ঞা। রাশিয়া প্রথম যখন হামলা চালায় ইউক্রেনে তখন দিশেহারা হয়ে সব মিত্র দেশগুলির কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন জেলেনস্কি। যুদ্ধের ময়দানে সবাই যে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন তার আক্ষেপও করেছেন ট্যুইট করে। বারংবার টেলিফোনে করে রাষ্ট্র নেতাদের সাথে কথা বলাতেই পরিস্থিতি ইতিবাচক মোড় নিয়েছে।পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন একের পর এক পশ্চিমি দেশগুলি। ইউরোপীয় এক নেতার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘আমরা তাঁর এই কর্মকাণ্ডে বিস্মিত হয়েছি। তিনি শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনকে বাঁচাতে বা রাশিয়াকে পরিবর্তন করতে হয়তো পারবেন না হয়তো। তবে তিনি ইউরোপের অবস্থান বদলে ফেলেছেন।’

কাদের ফোন করেছেন জেলনস্কি?

জেলেনস্কি তাঁর দফতরে বসে রাষ্ট্রনেতাদের সাথে যে পরিমাণ টেলিফোনালাপ করছেন তার একটি বিশদ ব্যাখ্যাও তুলে ধরেছে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, গত শনিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরোঁর সঙ্গে প্রথম কথা বলেন জেলেনস্কি। এরপর ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন, ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি, সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ইগনাজিও ক্যাসিস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, চেজ রিপাবলিকের প্রধানমন্ত্রী পেট্র ফিয়ালা, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় তাঁর। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে কথা বলেও সাহায্য চান জেলেনস্কি।এমনকি ভ্যাটিকানের পোপের সাথেও ফোনালাপ করেছেন ইউক্রেনের রাষ্ট্রনেতা। বিশেষজ্ঞদের মতে ইউক্রেনে রাজনৈতিক পটভূমিকা কিছুদিনের মধ্যে যেভাবে বদলে গেছে তা নজিরবিহীন, বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীতে।

 এক সপ্তাহের ব্যবধানে জার্মানি বদলে গিয়েছে ১৮০ ডিগ্রি। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে জার্মানি ঘোষণা করেছে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করবে। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যয়ও জিডিপির ২ শতাংশতে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একই পথে হেঁটে ইতালি প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি দেশকে রাশিয়ান গ্যাস থেকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। রাশিয়ান গ্যাসে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে জার্মানিও।তুর্কি সহ পশিমা দেশগুলির রাষ্ট্র নেতারা পুতিনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুদ্ধ থামানর জন্য। বরিস জনসন বলেছেন, ইংল্যান্ডের অর্থনীতিতে খারাপ অর্থের কোন স্থান নেই। সিএনএনের সমীক্ষা রিপোর্ট বলেছে ৮৩% আমেরিকান মনে করেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা জরুরী। জেলেনেস্কির মানবিক আবেদনে এককাট্টা পশ্চিমা নেতারা।

মঙ্গলবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে সদস্য পদ চেয়ে আবেদন করে ইউক্রেন। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সেই আবেদনে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগোষ্ঠীর প্রাথমিক সম্মতি মেলায় মঙ্গলবার রাতেই ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ভার্চুয়াল বক্তৃতা দেন প্রেসিডেন্ট।  রুশ হামলা প্রতিরোধে জন্য সাহায্যের আবেদনও জানান তিনি। ইউরোপের ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য জেলেনস্কি বলেন, ‘‘প্রমাণ করুন সঙ্কটের এই মুহূর্তে আপনারা ইউক্রেনের পাশে আছেন।’ রাশিয়ার অস্ত্রের বিরুদ্ধে জেলেনস্কির ফোনই ধারলো অস্ত্র রাশিয়াকে একঘরে করতে ।  

 

More Articles