কুড়ি লাখে মেলে একটা! বিরল নীল চিংড়ির ছবি ঘিরে আলোড়ন বিশ্বজুড়ে
সম্প্রতি পোর্টল্যান্ডের উপকূলে নীল চিংড়ির দেখা মিলেছে। লার্স জোহান লারসন নামে এক ব্যক্তি নীল চিংড়ির ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন।
অজানাকে জানার অদম্য ইচ্ছে মানুষের বহুকালের। আর সেই নেশাতেই আসমুদ্রহিমাচল চষে বেড়াচ্ছে মানুষ। এই চলার পথেই কখনও কখনও এমন জিনিসের সম্মুখীন হয়ে পড়তে হয়, তখন বিস্ময় ছাড়া আর কিছুই থাকে না। পৃথিবী সৃষ্টির এতকাল পরেও কত প্রাণী বা গাছকে আজও আমরা সেভাবে চিনি না। সচরাচর চোখেও পড়ে না আমাদের। এই বিরল প্রজাতিগুলির সম্পর্কে আরও জানতে প্রয়োজন এদের সংরক্ষণ। তেমনই একটি প্রজাতি হলো নীল চিংড়ি। আমরা কম-বেশি সবাই চিংড়ি মাছ খেতে পছন্দ। ডাব চিংড়ি, চিংড়ি ভাপার মতো খাবারগুলির কথা শুনলেই জিভে জল আসে বাঙালির। কিন্তু ক'জনই বা জানি নীল চিংড়ির কথা! চিংড়ি সাধারণত বাদামি বা লাল রঙের হয়। তাই শুনে অবাক লাগলেও সত্যি নীল চিংড়ির অস্তিত্ব আছে এবং বিভিন্ন সময় এই মাছ দেখাও গেছে।
সম্প্রতি পোর্টল্যান্ডের উপকূলে নীল চিংড়ির দেখা মিলেছে। লার্স জোহান লারসন নামে এক ব্যক্তি নীল চিংড়ির ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। ট্যুইটারে তিনি ছবিটির সঙ্গে ক্যাপশনে লেখেন, "পোর্টল্যান্ডের উপকূল থেকে এটি ধরা পড়েছে। তবে এটিকে আবার জলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে যাতে এটি আরও বড় হওয়ার সুযোগ পায়।" লারসনের তোলা ছবি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ট্যুইটারে পাঁচ লক্ষ মানুষ পোস্টটি লাইক করেছেন এবং চল্লিশ হাজারেরও বেশি বার পোস্টটি রিট্যুইট করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসে আমেরিকাতে নীল চিংড়ির দেখা পাওয়া যায়।
This blue Lobster was caught off the coast of Portland yesterday and returned to the water to continue to grow. Blue lobsters are one in two million. pic.twitter.com/6chTk7PoLP
— Lars-Johan Larsson (@LarsJohanL) July 3, 2022
নীল রংয়ের চিংড়ি নিয়ে এর আগেও বিস্তর গবেষণা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা চিংড়ি মাছের এমন অদ্ভুত রঙের পিছনে লুকিয়ে থাকা রহস্যের কথাও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, জিনগত অস্বাভাবিকতার কারণেই এর রং নীল হয়। এদের শরীরে অন্য চিংড়ির তুলনায় একটি বিশেষ প্রোটিন বেশি থাকে। ফলে এদের রক্তের রং নীল হয়। এরা বিরল প্রজাতির চিংড়ি। লারসন ছবিতে সেকথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ২০ লাখ চিংড়ির মধ্যে একটি নীল চিংড়ি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন: শূন্য থেকে শুরু করে পৌঁছে গেছেন শীর্ষে, এই ধনকুবেরদের জীবন হতে পারে আপনার অনুপ্রেরণা
বিবিসি-র রিপোর্ট বলছে, সমুদ্রের গভীর জলে আত্মরক্ষার কারণে এদের গায়ের রং গাঢ় নীল হয়। তবে জল থেকে তুলে রান্না করার সময় এগুলি অন্যান্য যে কোনও চিংড়ির মতোই লাল রং ধারণ করে। নীল রঙের মতোই ভিন্ন রঙের চিংড়ি থাকলেও সেগুলি বিরল থেকে বিরলতম। যেমন, হলুদ রঙের চিংড়ি প্রতি ৩০ লাখে একটি হয়। আবার ক্রিস্টাল চিংড়ি এক কোটিতে একটা পাওয়া যায়।
২০১৬ সালে ম্যাসাচুসেটসের এক চিংড়ি বিক্রেতা ওয়েন নিকারসন কেপ কডের উপকূলে বিরল নীল চিংড়ি ধরেছিলেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, ১৯৯০ সালে প্রথম নীল চিংড়ি ধরা পড়েছিল তাঁর হাতে।গত বছর প্রথম নীল কটন ক্যান্ডি গলদা চিংড়ি ধরা পড়ে জালে। বিল কোপারস্মিথ নামক এক ভদ্রলোকের হাতে ধরা পড়ে সেই মাছ। বিল ৪০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। নিজের নাতনির নামে 'হাদি' নামও রাখেন সেটির। তবে বিল সেটি সমুদ্রে ছেড়ে না দিয়ে কোম্পানির অ্যাকোয়ারিয়ামে জায়গা দিয়েছিলেন।
তবে লারসনের দেওয়া নীল চিংড়ির ছবি মন ছুঁয়েছে বহু নেট-নাগরিকের। অনেকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন লারসনের পদক্ষেপকে। অনেকে আবার নীল রঙের চিংড়ি দেখে তাজ্জব বনে গেছেন। একজন লিখেছেন, 'এত বছর বয়স হয়ে গেল, এই প্রথম নীল চিংড়ি দেখছি।' আরেকজন লিখেছেন, 'আমার সৌভাগ্য যে এমন বিরল প্রাণী দেখলাম। আশ্চর্য! লাল রঙের বদলে নীল রঙের।' তৃতীয় একজন রসিকতা করে লিখেছেন, 'নীল রঙের বলেই সবসময় ধরা পড়ে আবার নীল রঙের হওয়ায় ছাড়াও পেয়ে যায়।'
কিছু জন আবার জানিয়েছেন, তাঁরাও কখনও কখনও এমন এই বিরল নীল চিংড়ি ধরেছেন। 'আমরাও ১৫ বছর আগে নর্থ হ্যাভেনে একটি গলদা চিংড়ি ধরেছিলাম। তবে আমরাও তাকে জলেই ছেড়ে দিই।' আরও একজন লিখেছেন, '১৯৯৩ সালে লং আইল্যান্ড সাউন্ডে গ্রীষ্মের সময় নীল রঙের একটি গলদা চিংড়ি ধরেছিলাম।' তবে সেই চিংড়ির দীর্ঘায়ুর কথা ভেবে তিনি একটি অ্যাকোয়ারিয়ামে সেটাকে দান করে দেন।।তিনি আরও বলেছেন যে, সেটি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর ছিল।