পাহাড়ের কোলে ট্রেনযাত্রা, মনেই হবে না দেশে আছেন! পুজোয় যেতে হলে প্রস্তুতি নিন এখনই

একটা পরিকল্পনা তো দরকার! যাবেন কোথায়? দেখবেনই বা কী? আপনাদের সেই সমস্যার সমাধান করতেই পুজোয় ভ্রমণের উপযুক্ত বেশ কিছু জায়গার নাম জানিয়ে রাখা যাক।

পুজো এলেই কু-ঝিকঝিক। ট্রেন-হুইসলের আওয়াজ নিয়ে এখনকার প্রজন্মে আর কতটুকু রোমাঞ্চ রয়েছে বলা মুশকিল, তবে বাঙালির ভ্রমণ এখনও তার প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। শরতের গাঢ় সবুজ মাটির ওপর নীল আকাশ, তার গায়ে সাদা মেঘ, সঙ্গে হালকা শীতের আমেজ। দশমী পেরোলেই মনটা ছুটি ছুটি করে ওঠে। স্কুল তো ছুটিই। তাই একছুটে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন বহু মানুষই। তা বেরবেন তো নিশ্চয়ই, কিন্তু একটা পরিকল্পনা তো দরকার! যাবেন কোথায়? দেখবেনই বা কী? আপনাদের সেই সমস্যার সমাধান করতেই পুজোয় ভ্রমণের উপযুক্ত বেশ কিছু জায়গার নাম জানিয়ে রাখা যাক।

দার্জিলিং-এর ঘুম
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের এটিই উচ্চতম পয়েন্ট। ঘুম শহরটিকে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই পর্যন্তই টয়ট্রেন যায়। স্টিম ইঞ্জিন টানা এই টয় ট্রেনের ভিস্তাডম কোচগুলির বিরাট বিরাট জানলা দিয়ে দু'দিকের সবুজ পাহাড়, অপূর্ব প্রকৃতি দেখতে দেখতে যাত্রা আরও মনোরম হয়ে উঠবে। ঘুমে যেতে গেলে আপনাকে সোজা পৌঁছে যেতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। সেখান থেকে ঘুমগামী কোনও একটি ট্রেন বুক করে ফেলুন। ঘুম যাওয়ার আদর্শ সময় বা সিজন হলো অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর অবধি, এই সময় তাপমাত্রা থাকে ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি। থাকুন, ঘুরে ফিরে দেখুন ঘুম এবং ইয়াগা চোলিং-এর মনাস্ট্রি, টয় ট্রেনের যাত্রা তো পাচ্ছেনই, হার্ব গার্ডেনে নানা ধরনের সুগন্ধ অনুভব করুন, সঙ্গে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘার পরিষ্কার ভিউ। ঘুম শহরে এখন হোমস্টে থেকে বিলাসবহুল হোটেল, সবই রয়েছে।

ঘুম স্টেশন

ইন্দোরের পাতালপানি, মধ্যপ্রদেশ
ছুটিতে যারা একটু মজা করতে চান আর চার-পাঁচটা ছুটি কাটাতে আসা মানুষের সঙ্গে, তাদের জন্য এই পর্যটন কেন্দ্রটি আদর্শ। চারদিকে ঘন জঙ্গল, পাথুরে জমি। তারই মাঝে প্রায় তিনশো ফুট উঁচু এই ওয়াটার ফলস। কথিত, এই নিচের জলাশয়টি অতল, চলে গিয়েছে পাতাল পর্যন্ত। সেই থেকেই এর নাম পাতালপানি। সারাদিন আরাম করে কাটান প্রকৃতির মধ্যে, জলাশয়ে বোটিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে। সবুজ প্রকৃতির মাঝখানে পিকনিকের সুযোগ রয়েছে। ফলসের চারপাশ জুড়ে রয়েছে নানা ধরনের ওয়াটার স্পোর্টিং-এর সুযোগ। পাতালপানির যোগাযোগও অত্যন্ত ভালো। ট্রেন বা ফ্লাইটে সোজা ইন্দোরের ‘মাহো’-তে চলে যান। সেখান থেকে চড়ে বসুন ৫২৯৬৫/৬৬ মাহো-পাতালপানি-কলাকুণ্ড রুটের হেরিটেজ ট্রেনে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর, মানে মূলত বর্ষাকাল পাতালপানি ভ্রমণে যাওয়ার আদর্শ সময়। টইটম্বুর জলাশয় উপভোগ করতে পারবেন এই সময় গেলে। ঝরনার সামনে একটা পিকনিক বাস্কেট নিয়ে বসুন, গল্প করুন, হালকা কিছু খান। ছুটি উপভোগ করুন। উত্তেজনা চাইলে রিভার-র‍্যাফটিং করার সুযোগ রয়েছে, বেলুনে চড়ার সুযোগ রয়েছে, রয়েছে ট্রেকের সুযোগও। ঝরনার কাছেই একটা ক্যম্পিং ট্রিপ হয়, যেতে পারেন সেখানেও। এছাড়া ইন্দোরের রালামণ্ডল বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। মাত্র ঘণ্টাখানেকের হাঁটা পথ। পাখি দেখার নেশা থাকলে সময় কীভাবে কেটে যাবে, বুঝতেই পারবেন না।

ম্যাঙ্গালোর, কর্নাটক

ভাবছেন ম্যাঙ্গালোর তো কাঠখোট্টা শহর মশাই, ম্যাঙ্গালোরে আবার কেউ ঘুরতে যায়! শহর বটে, কিন্তু ঘোরার জায়গা কম নেই ম্যাঙ্গালোরে। প্রথমত, ম্যাঙ্গালোর আপনাকে আসতে হবে রেলপথে। পশ্চিমঘাট পর্বতের গা বেয়ে সে এক অপূর্ব যাত্রাপথ। শহরে পৌঁছনোর পরে বিশ্রাম নিন, তারপর বেরিয়ে পড়ুন। সমুদ্রতট, সুন্দর সুন্দর সব বাগান, পুরনো মন্দির এবং চার্চ– দেখার আছে অনেককিছুই। ব্যাঙ্গালোর থেকে ১৬৫৩৯/৪০ যশবন্তপুর-ম্যাঙ্গালোর এক্সপ্রেস ধরে সোজা ম্যঙ্গালোর। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ শীতকাল এই অঞ্চল ভ্রমণের জন্য আদর্শ। সেসময় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির বেশি ওঠে না এখানে। পানাম্বারের তটে দেখতে পাবেন ডলফিন, মহাঠোভরা শ্রী মঙ্গলাদেবী মন্দিরে দিতে পারেন পুজো, এখানে শক্তি পূজিত হন, তান্নিরভাবী বিচে সমুদ্রের ঢেউয়ে করতে পারেন সার্ফিং-ও। অ্যালোয়সিয়াস চ্যাপেলের অভূতপূর্ব কারুকার্য উপভোগ করতে পারেন, ‘গোলি বাজে, চুরুমুরি করি রোটি’ খেয়ে দেখতে পারেন, অঞ্জন ফ্রাইটাও বেশ।

জিরো ভ্যালি

জিরো ভ্যালি, অরুণাচলপ্রদেশ
যদি ছুটিতে হইহুল্লোড় পছন্দ করেন, তাহলে অরুণাচল প্রদেশ আপনার জন্যে নয়। কিন্তু যাঁরা একটু শান্তি পছন্দ করেন, নিরিবিলি পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য এ আদর্শ জায়গা। জিরো ভ্যালির সংগীত উৎসব বিখ্যাত। পর্যটকরা এখানকার স্থির, শান্ত জীবনের গন্ধ পেতেই বহুদূর হেঁটে এখানে আসেন। পথে নানা গ্রাম পড়ে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে চোখ ফেরানো যায় না। এইখানে আপাতনি জাতির বাস। এই জাতিকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। এদের সংস্কৃতি, নানান উৎসব, বাঁশের খেলা এসব পর্যটকদের মুগ্ধ করে। ১৫৯০৭/০৮ তিনসুকিয়া-নাহারলাগুন এক্সপ্রেস ধরে একেবারে চলে যান নাহারলাগুন। সেখানে থেকে চার ঘণ্টা ট্যাক্সিতে, জিরো ভ্যালি পৌঁছে যাবেন। মে থেকে অক্টোবর-নভেম্বর এই অঞ্চল ভ্রমণের আদর্শ সময়। আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা এবং সহনীয় এ-সময়। জিরো ভ্যালিতে গিয়ে আপাতনি ট্রাইবের প্রধানের সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানান। যদি প্রধান দেখা করেন, তাঁর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে বসে গল্পের সুযোগ পাবেন। একটা সাইকেল ভাড়া করে জিরো ভ্যালির আশপাশের গ্রামগুলি ঘুরে দেখতে পারেন। চারদিনের ট্যালে ভ্যালি ট্রেকও করতে পারেন, ঘন বনের মধ্যে দিয়ে নানা রঙের ফুলে ভরা রাস্তা। পাঙ্গে উপত্যকার কাছে ক্যাম্প করে থাকুন। আকাশভরা তারার নিচে কেটে যাবে অপূর্ব রাত। এমন সব মায়াময় মুহূর্তে ভরা এই জিরো ভ্যালি।

More Articles