ছুটির দিনে ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ সারুন একসঙ্গে! সহজেই বাড়িতে বানাতে পারেন এই খাবারগুলি

রবিবার সকালে আর তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে চাই না। আর যখন উঠি, তখন লাঞ্চের সময় এসে যায়। তখন শুরু হয় লেট মর্নিং ব্রাঞ্চ। বন্ধু-বান্ধব, পরিবার নিয়ে বসে গল্পগুজব করতে করতে খাওয়াদাওয়া।

বর্ষা এসে গেছে। সকালে উঠে দেখলেন, বাইরে সুন্দর বৃষ্টি পড়ছে আর আবহাওয়াও তেমন মনোরম। বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চাইছে না। আবার শুয়ে পড়লেন, যখন উঠলেন, তখন ঘড়ি দেখে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। তখন ব্রেকফাস্ট করবেন না কি লাঞ্চ খাবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। আবার, আগের দিন রাতে বন্ধুর সঙ্গে পার্টি করে ফিরেছেন আর সকালে উঠে মাথার যন্ত্রণায় দুনিয়া অন্ধকার দেখছেন, তাই সকালটা ঘুমিয়েই কাটালেন। যখন উঠলেন, তখন লাঞ্চ খাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। আমরা সবাই কোনও না কোনও সময় এইরকম সিচুয়েশনের শিকার হয়েছি। হয় ইচ্ছে করে ব্রেকফাস্ট মিস করে গেছি, নয়তো ব্রেকফাস্ট করার সময় পাইনি। তো এই অবস্থায় কী করা যায়। ব্রেকফাস্ট করার সময় নেই কিন্তু দুপুরের খাবারের সময় হয়ে যাচ্ছে এই পরিস্থিতিতে আপনার মুশকিল আসান করবে ‘ব্রাঞ্চ’ অর্থাৎ ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চের সমন্বয়। এই ‘ব্রাঞ্চ’ শব্দটি আসলে পশ্চিমের সংস্কৃতি থেকে এসেছে। ‘লেট ব্রেকফাস্ট’ আর ‘আর্লি লাঞ্চ’ মিলে হয় ব্রাঞ্চ।

কিন্তু আসলে ব্রাঞ্চ কী? আনন্দবাজার পত্রিকা-য় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে একটি ম্যাগাজিনে প্রথম ‘ব্রাঞ্চ’ কথাটি উল্লেখ করা হয়। কলকাতার এক বিখ্যাত রেস্তোরাঁর শেফের কথায়, আসলে ব্রাঞ্চের কনসেপ্ট হল অলসভাবে উইকএন্ড এঞ্জয় করা। সারা সপ্তাহ কাজ করার পর সপ্তাহান্তে আমরা একটু অলস হয়ে পড়ি। শনিবার রাতে লেটনাইট পার্টি, বা লেটনাইট মুভি, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, এইসব করেই কেটে যায়। তারপর রবিবার সকালে আর তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে চাই না। আর যখন উঠি, তখন লাঞ্চের সময় এসে যায়। তখন শুরু হয় লেট মর্নিং ব্রাঞ্চ। বন্ধু-বান্ধব, পরিবার নিয়ে বসে গল্পগুজব করতে করতে খাওয়াদাওয়া। এই আর কী!

উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ইউরোপীয় পুরুষদের হাত ধরে ব্রাঞ্চের উৎপত্তি। সারা সপ্তাহ কাজ করে রবিবার একটু দেরি করে উঠে তারপর বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করতেন, সেই থেকেই ‘ব্রাঞ্চ’-এর শুরু। তবে প্রথমদিকে পুরুষদের এই ব্রাঞ্চে মহিলাদের কোনও স্থান ছিল না। আরও পরে এই ব্রাঞ্চ যখন ইউরোপ থেকে আমেরিকায় আসে, তখন মহিলাদের প্রবেশ ঘটে এই ব্রাঞ্চে। ব্রাঞ্চের মেনুতে পুরুষদের জন্য থাকত ককটেল আর মহিলাদের জন্য ছিল মকটেল। প্রথমে এই ব্রাঞ্চ ব্যাপারটা সমাজের অভিজাত শ্রেণির মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে তা সমাজের মধ্যবিত্তদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এইভাবেই মানুষের মধ্যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ব্রাঞ্চ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

সামনে উইকএন্ড আসছে। যাঁরা যাঁরা সকালে উঠতে চাইছেন না, ভাবছেন, এই সপ্তাহে ব্রাঞ্চ করেই কাটাবেন, তাঁদের জন্য রইল কিছু ব্রাঞ্চ রেসিপি যা অল্প সময়ের মধ্যে বাড়িতে বসেই বানিয়ে নিতে পারবেন। রেস্তোরাঁর মতো রান্না বাড়িতেই।

ম‍্যাচা শেক
আপনার ব্রাঞ্চ শুরু করার এক দুর্দান্ত উপায় হল এই Matcha shake। ১৫ মিনিটেরও কম সময়ে তৈরি হয় এই শেক। আপনার ক্ষুধার্ত পেটকে ভরিয়ে রাখার ভালো উপায়।

উপকরণ
২ টেবিল চামচ Matcha পাউডার, ৫০০ গ্রাম দুধ, ১টি ছোট বাটিতে খোসাছাড়ানো আম টুকরো করা, ১টি পাকা কলা, চিনি (ইচ্ছে হলে), ১ চা-চামচ কেশর, ২-৩ টেবিল চামচ ফ্রেস ক্রিম।

পদ্ধতি

একটি ব্লেন্ডারে দুধ, ছোট করে টুকরো করা আম, পাকা কলা, কেশর, ফ্রেস ক্রিম এবং Matcha পাউডার ঢেলে দিন। এরপর সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। দেখবেন, যাতে স্মুদির মতো টেক্সচার আসে। এরপর ব্লেন্ড হয়ে গেলে তার মধ্যে আপনি যদি চান, তবেই চিনি যোগ করুন, নাহলে না। এরপর তা একটি সার্ভিং গ্লাসে ঢেলে ৩০ মিনিটের জন্য ঠান্ডা করে নিন। চিলড হয়ে এলে সার্ভ করুন Matcha shake।

কিউকাম্বার পপস উইথ টোফু
লো ক্যালোরি এই ডায়েট ফুড অত্যন্ত সুস্বাদু এবং অনেক সহজ উপায়েই বানানো যায়। শুধু উইকএন্ড নয়, সপ্তাহের কাজের দিনেও যখন আপনি অবিরাম মিটিংয়ে ব্যস্ত, সেই সময় আপনার ক্ষুধা নিবারণে এর জুড়ি মেলা ভার।

উপকরণ
১টি বড় আকারের শশাকে মাঝারি সাইজে কেটে নিতে হবে, ১০০ গ্রাম গ্রেটেড মশালা টোফু, ১ চা চামচ সূক্ষ্মভাবে কাটা আদা-রসুন, ৩-৪ টেবিল চামচ সূক্ষ্মভাবে কাটা পেঁয়াজ, ১-২টি সূক্ষ্মভাবে কাটা কাঁচা লঙ্কা, ২-৩ টেবিল চামচ সূক্ষ্মভাবে কাটা টম্যাটো, ১ চা চামচ কালো গোলমরিচ গুঁড়ো, সন্ধক লবন বা রক সল্ট (স্বাদ মতো), ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল বা আপনার কাছে যা রান্নার তেল আছে।

পদ্ধতি

একটি শশা নিয়ে তার খোসা ছাড়িয়ে মিডিয়াম সাইজে কেটে নিতে হবে। এরপর কেটে নেওয়া শশার ভেতরের অংশ চামচ দিয়ে বের করে নিয়ে আলাদা একটি বাটিতে রাখতে হবে। এরপর তুলে রাখা শশার অংশ চামচ দিয়ে এমনভাবে ম্যাশ করতে হবে যাতে তার মধ্যে কোনরকম দানার মতো কিছু না থাকে। এরপর একটি ননস্টিক প্যানে অলিভ অয়েল বা আপনার রান্নার তেল দিয়ে গরম হতে দিন। তারপর তেল গরম হয়ে উঠলে তাতে কেটে রাখা আদা, রসুন, পেঁয়াজ আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে তা সাঁতলাতে থাকুন যতক্ষণ তা বাদামি হয়ে আসছে। পেঁয়াজে বাদামি রঙ আসলেই তাতে গোলমরিচ গুঁড়ো, লেবুর রস মিশিয়ে দিন এবং ১.৩০-২ মিনিট অবধি রান্না করুন লো থেকে মিডিয়াম ফ্লেমে। এরপর নুন, গ্রেটেড টোফু, আর টম্যাটো দিয়ে আরও ৩-৫ মিনিট রান্না করুন। রান্না হওয়ার পর গ্যাস বন্ধ করার আগে ম্যাশড শশাটা মিশিয়ে একটু হাল্কা ভাবে নেড়ে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিন। তারপর সমস্ত উপকরণ ঠাণ্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হয়ে এলে মিডিয়াম সাইজে কাটা শশার ভেতর পুর ভরে পরিবেশন করুন Cucumber pops with tofu।

হার্বড স্পাইসি চিকেন
বাইরে অঝোরধারায় বৃষ্টি পড়ছে, আর মনে হচ্ছে, ইশ! এই সময় যদি মশলাদার, ঝাল ঝাল কিন্তু হেলদি কিছু খাওয়া যেত। মুরগির মাংসের ওপর লাল লাল, গরম গরম সসের প্রলেপ আর তার সঙ্গে গরম ব্ল্যাক কফি। উফ! শুনেই জিভে জল চলে এল।

উপকরণ

৩০০ গ্রাম বোনলেস চিকেন, নুন আর লঙ্কা স্বাদমতো, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ চা চামচ সূক্ষ্মভাবে কাটা কাঁচা লঙ্কা, ১ চা চামচ সূক্ষ্মভাবে কাটা ধনে পাতা, ২ টেবিল চামচ কোরানো আনারস, দেড় চা চামচ অরিগানো, ১ চা চামচ চিলি ফ্লেক্স, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল।

মশলার পেস্ট

১টি টম্যাটো, ১টি পেঁয়াজ, ২-৩টে শুকনো লঙ্কা, ২টো রসুন কোয়া, ১ চা চামচ হালকা পুড়িয়ে নেওয়া আদা। একটি ব্লেন্ডারে খোসা ছাড়ানো টম্যাটো, একটু নুন, লেবুর রস এবং বাকি উপকরণ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে।

পদ্ধতি

চিকেনের মধ্যে বানানো মশলা পেস্ট, নুন, লেবুর রস এবং গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে ম্যারিনেট করে নিতে হবে। একটি নন-স্টিক প্যানে অলিভ অয়েল গরম করে কাঁচা লঙ্কা, অরিগেনো, চিলি ফ্লেক্স, ধনে পাতা এবং কোরানো আনারস দিয়ে ৩-৪ মিনিট লো ফ্লেমে ভালো করে সাঁতলাতে হবে। এরপর ম্যারিনেট করা চিকেন থাই কড়াইতে দিয়ে ঢেকে ঢেকে ৪ মিনিট লো ফ্লেমে রান্না করতে হবে। এরপর চিকেন দুই সাইডেই ভালো ভাবে রান্না হলে গ্যাস বন্ধ করুন। তারপর কাটা চামচ বা ছুরি দিয়ে চিকেন টাকে লম্বা লম্বা টুকরো করে নিন এবং গরম গরম সস দিয়ে পরিবেশন করুন।

ওয়াটারমেলন অ্যান্ড ফেটা স্যালাড
স্বাস্থ্যকর এবং মুখরোচক এই স্যালাডটি গরমকালের টপ চয়েস। আম, আনারস এবং সবুজ আপেল দিয়েও তৈরি করা যায়।

উপকরণ

৫০০ গ্রাম আনারস ছোট টুকরো করে কাটা, একটা ছোট কাপের মাপে গ্রেট করা ফেটা চিজ, ২ টেবিল চামচ ফ্লাক্স সিডস (শণের বীজ), ৩ টেবিল চামচ চিয়ার বীজ (চিয়া সিডস), ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ মধু (ইচ্ছে হলে)।

পদ্ধতি

একটি বাটিতে সমস্ত উপকরণ মিশিয়ে ১৫ মিনিট ফ্রিজে রেখে দিন তারপর পরিবেশন করুন।

সতেড হোল ক্র‍্যাব উইথ পোচড এগস
আপনার সান্ধ্য ভোজের জন্য আদর্শ এই ডিশ। অদ্ভুত রকমের সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর এই খাবার আপনার মন পরিতৃপ্ত করে তুলবে। যারা সামুদ্রিক মাছ এবং ডিমের লোভ দুটোই সামলাতে পারেন তাদের জন্য তৈরি হয় এই ডিশ। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করলে লাইকের বন্যা বইতে বাধ্য।

উপকরণ

ডিম ২টো, ২টো বড় মাপের কাঁকড়া (নুন, আদা, রসুন, কাঁচা লঙ্কা এবং লেবুর রস দিয়ে ম্যারিনেট করা), নুন, কালো গোলমরিচ গুঁড়ো, ৪ টেবিল চামচ বাটার, ১ চা চামচ লেবুর রস।

পদ্ধতি

একটি নন-স্টিক প্যানে ১ টেবিল চামচ বাটার গরম করে তারমধ্যে ২টি ডিমের পোচ বানিয়ে নিয়ে আলাদা তুলে রাখুন। এরপর ওই একই প্যানে ২ টেবিল চামচ বাটার গরম করে তার মধ্যে ৫ মিনিট ধরে সেদ্ধ করা কাঁকড়া দিয়ে দিন। এরপর ৫-৭ মিনিট ধরে কাঁকড়াটাকে ঢেকে ঢেকে রান্না করুন যাতে দুই পাশই সমানভাবে রান্না হয়। এরপর রান্না হয়ে যাওয়ার পর একটু বাটার, লেবুর রস আর কালো গোলমরিচ গুঁড়ো কাঁকড়ার ওপর ছড়িয়ে দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

কখন ব্রাঞ্চ খাবেন

ব্রাঞ্চ খাওয়ার কিন্তু কোনও ধরা-বাঁধা নিয়ম নেই। তবে সকালের খাবার মিস হলে একটু আগে খাওয়ার চেষ্টা করুন। সবচেয়ে ভালো সময় হল ১২-১২.৩০ টার মধ্যে।

এই গেল উইকএন্ডে বাড়িতে বসে ব্রাঞ্চ তৈরির রেসিপি। শুধু রবিবারেই যে ব্রাঞ্চের ব্যবস্থা করবেন, এমন নয়। ছুটির দিন পেলেই নিজেদের কাজের হাত থেকে রেহাই দিতে ব্রাঞ্চের প্ল্যান করতেই পারেন। আবার সামনেই পুজো আসছে। রাত জেগে ঠাকুর দেখে সকালে উঠে আর রান্না করতে না চাইলে ব্রাঞ্চ করে নিলেই হবে। অল্প সময় স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য ব্রাঞ্চ বেস্ট অপশন।

 

More Articles