ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হল দেহ, মৃত্যুতেও যে রহস্য রেখে গেলেন একেন বাবুর স্রষ্টা সুজন দাশগুপ্ত

Eken Babu : পর্দার একেন বাবু চরিত্রের স্রষ্টা তিনিই, আকস্মিক মৃত্যু হল লেখক সুজন দাশগুপ্ত-এর

আচমকা শোকের ছায়া। বিনা নোটিশে চলে গেলেন সাহিত্যিক সুজন দাশগুপ্ত। বুধবার সকালে ১০ টা পাঁচ নাগাদ কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন নিজ ফ্ল্যাট থেকেই উদ্ধার করা হয় দেহ। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, তাঁর স্ত্রী একদিন আগেই গিয়েছেন শান্তিনিকেতনে, তাই বাড়িতে একাই ছিলেন তিনি। সকালে পরিচারিকা এসে বারবার বেল বাজানোর পরও যখন দরজা খুলছেন না তিনি, তখন বাধ্য হয়ে লোক ডাকাডাকি করতে হয়। অবশেষে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখা যায় মারা গিয়েছেন লেখক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, সঠিকভাবে কিছুই বলা যায়নি মৃত্যুর কারণ।

সাহিত্যিক সুজন দাশগুপ্ত, নামটা চিনতে অসুবিধা হলেও, একেন বাবুকে দিব্যি চেনেন বাঙালি। সুজন দাশগুপ্তই একেনবাবুর স্রষ্টা। হইচই-এর হাত ধরেই জনপ্রিয়তা পায় একেনবাবু। পর্দায় একেন বাবু বলতে আমরা চিনি অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তীকে। তবে এহেন নতুন একটা চরিত্রের আসল স্রষ্টা থেকেছেন খানিকটা আড়ালেই। বয়স আশি ছুঁইছুঁই। আদতে আমেরিকা নিবাসী। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে সেখানেই রয়েছেন লেখক। সুজনবাবু একা নন, তাঁর স্ত্রী এবং কন্যা দুজনেই লেখালিখি করেন। যদিও বেশ কয়েকমাস হল রয়েছেন কলকাতায়। একেন বাবু চরিত্রটিও তৈরি হয় স্বামী স্ত্রী দুজনের সৌজন্যেই। তারপর লেখক তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান।

আরও পড়ুন - ‘জটায়ুর চরিত্রে আমাকে মানাবে, কখনও ভাবিনি’: অনির্বাণ চক্রবর্তী

বেঁটেখাটো, গোলগাল চেহারা, মাথায় প্রশস্ত টাক, প্রতিটি বাক্যে ভুলভাল কথা বলেন, এহেন চরিত্রের একজন পেশায় গোয়েন্দা। শুনতে অবাক লাগলেও বাঙালি ইতিমধ্যেই পরিচিত এই চরিত্রের সঙ্গে। অন্দরে রীতিমত জাঁকিয়ে বসেছেন একেন বাবু। প্রচলিত গোয়েন্দা চরিত্রের চেহারার ধারণাকে এক লহমায় ভেঙে দেয় একেন বাবু। প্রথমটায় অবাক লাগলেও, জনপ্রিয়তা পেতে সময় লাগে না বেশি। গোয়েন্দাকে আইকনিক হতে হবেই এমন ভাবনা চিন্তা থেকে বেরিয়ে একজন সাধারণ, ঘরোয়া, পেটুক বাঙালিকে তুলে আনা হয় চরিত্রে। যিনি সরকারি বিভাগে একটা চাকরি করেন, মজার ছলে রহস্য সমাধান করেন। ভুল ভাল রান্না করেন, অথচ খেতে অসম্ভব ভালোবাসেন, আর হ্যাঁ বউকে ভয় পান। নিপাট মধ্যবিত্ত বাঙালি বলতে ঠিক যা বোঝায়, তাই।

এমন একটা গোয়েন্দা চরিত্র সম্পর্কে কোনও ধারণাই আগে ছিল না বাঙালির। কিরীটি, ব্যোমকেশ, ফেলুদার মতো চেহারা নয় অথচ জনপ্রিয়তা পেতে বেশি সময় লাগেনি। পদ্মনাভ দাশগুপ্তের লেখনীতে চিত্রনাট্যের খানিক অদলবদল হলেও লেখক সুজন দাশগুপ্তের মর্যাদা কমে না এক রত্তিও। এখনও পর্যন্ত মোট ছয়টি সিজন দেখানো হয়েছে হইচই-এ। দর্শকদের তুমুল উৎসাহ দেখে নতুন গল্পের কথা ভেবেছেন লেখক। জনিজেই একটি সাক্ষাৎকারে একবার বলেন, “দর্শকের এত আগ্রহ এত ভালবাসা পেয়ে সত্যিই আপ্লুত। আমার একেন এখন সবার।” তবে গল্পের একেন বন্দুক ধরত না, পর্দায় চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে বন্দুক ধরে একেন, তাড়া করে আততায়ীদের। যদিও এই বদলে একটুও আক্ষেপ ছিল না লেখক সুজন দাশগুপ্তের। বরং বারবার নিজে মুখে স্বীকার করে গিয়েছেন চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ এবং অভিনেতা অনির্বাণ-এর ভূমিকার কথা। কিন্তু আচমকা এই মৃত্যু যেন মেনে নাইট পারছেন না কেউই। এখনও অবধি সঠিক কারণ জানা যায়নি। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। আরও নতুন একটু গোয়েন্দা চরিত্র তৈরির ভাবনা ছকে ফেলেছিলেন ইতিমধ্যেই, আক্ষেপ একটাই বাঙালির আর চেনা হল না নতুন সেই গোয়েন্দাকে।

More Articles