চারদিকে কড়া পুলিশি পাহারা! কেমন ছিল বিদ্যাসাগরের প্রথম বিধবা বিবাহের বন্দোবস্ত?

First Widow Remarriage: সুকিয়া স্ট্রিটের এই বাড়িটির বর্তমান ঠিকানা ৪৮ নং কৈলাস বসু স্ট্রিট।

বীরসিংহ গ্রামের বুক চিরে যে রাস্তাটা সোজা চলে গিয়েছে কলকাতার দিকে সেই রাস্তা ধরেই হাঁটছেন এক প্রৌঢ়,তাকে নানান প্রশ্নে ব্যস্ত করে তুলছে তার সঙ্গে অক্লান্তভাবে হেঁটে যাওয়া ছোট্ট ছেলেটি। পথের পাঁচালীর অপু যেমন বাবার সঙ্গে প্রথমবারের মতো গ্রামের সীমানা ছাড়িয়ে যাবার সময় তার কৌতূহলের ডালি উপুড় করে দিয়েছিল মেদনীপুরের অখ্যাত রাস্তা ধরে হেঁটে চলা এই ছোট্ট ছেলেটিও যেন সেই কথা মনে করিয়ে দেয়। কলকাতা এসে বড়বাজারের সিংহীবাড়িতে আশ্রয়গ্রহণ করল ছেলেটি, যে কালে - কালান্তরে পরিণত হলো একটি বটবৃক্ষে।যার ছায়ায় বিনা সংকোচে আশ্রয় গ্রহণ করতো বাংলা তথা ভারতের প্রতিটি মানুষ।

সালটা ১৮৫৬। মেদনীপুর থেকে সেদিন যে ছেলেটি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য প্রথম কল্লোলিনী তিলোত্তমার বুকে পা রেখেছিল সেই ছেলেটিই ১৮৫৬ সালে ঘটিয়ে ফেলল এক অভাবনীয় কাণ্ড। এই সময় থেকেই পাশ্চাত্য সভ্যতার আলোয় আলোকিত হতে শুরু করেছে শহর কলকাতা।এমন সময় মেদনীপুরের সেই ছেলেটির হাত ধরে শুরু হলো সমাজ - সংস্কার আন্দোলন,বিধবাদের পুনর্বিবাহের জন্য আন্দোলন।অন্যদিকে এই খবর রক্ষণশীলদের কানে পৌঁছতেই রে রে করে উঠলেন তারা। এ কী কাণ্ড! বিয়ে, তাও আবার বিধবাদের? বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত বাধা আসতে থাকল।কিন্তু সেই দামাল ছেলে দমবার বান্দা নন।ততদিনে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বিদ্যাসাগর নামে।

তিনি বিধবা বিবাহের সমর্থনে ৯৮৭ জন আধুনিক মনস্ক মানুষই স্বাক্ষর সমন্বিত প্রায় আঠেরো পাতার একটি সুদীর্ঘ চিঠি পাঠালেন ইন্ডিয়ান লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে।কিন্তু সেখানেও বিপত্তি,বিধবা  বিবাহের বিরোধিতা করে চিঠি দিলেন প্রায় দশ হাজার মানুষ।যদিও শেষ পর্যন্ত জয় হল বিদ্যাসাগরের। অনেক টালবাহানার পর ১৮৫৬ সালে হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়ন হল।

কিন্তু বিদ্যাসাগর এখানেই থেমে থাকলেন না তিনি যে সবার থেকে আলাদা,ভিন্ন পথের পথিক। এরপর তিনি উদ্যোগী হলেন প্রথম বিধবা বিবাহ সুসম্পন্ন করতে। ব্রহ্মাণ্ড মুখার্জি এবং লক্ষণী দেবীর কন্যা ছিলেন কালিমতী। কালিমতীর প্রথম বিয়ে হয় মাত্র চার বছর বয়সে,অর্থ্যাৎ সে যখন নিতান্তই শিশু।ছয় বছর বয়সে মৃত্যু হল কালীমতির স্বামীর। দশ বছর বয়সে পুনর্বার তাঁর বিয়ে হয় শ্রীশচন্দ্রের সাথে।

বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে সাতপাকে আবদ্ধ হল কালীমতি এবং শ্রীশচন্দ্র একইসঙ্গে স্থান পেলেন ইতিহাসের পাতায়।দিনটা ছিল ১৮৫৬ সালের ৭ই ডিসেম্বর।সুকিয়া স্ট্রিটের ১২ নম্বর বাড়িতে থাকতেন রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বাড়িতেই অনুষ্ঠিত হল এই শুভ পরিণয়।

সুকিয়া স্ট্রিটের এই বাড়িটির বর্তমান ঠিকানা ৪৮ নং কৈলাস বসু স্ট্রিট। সেদিন প্রথম বিবাহের অনুষ্ঠানে ছিল কড়া পুলিশ পাহারা। প্রথম বিধবা বিবাহ নিয়ে অশান্তির আশঙ্কা ছিল স্বয়ং বিদ্যাসাগরের। কলকাতার এমন অনেক নাম না জানা অলিগলি আমাদের অজান্তে সঙ্গী করেছে ইতিহাসকে।অথচ ইতিহাস তাঁদের মনে রাখেনি।

 

More Articles