কোনও চিড় নেই এক্স রে রিপোর্টে! কীভাবে ভুল চিকিৎসায় আজীবনের মতো পঙ্গু হলেন তসলিমা?

Taslima Nasreen: তসলিমা জানিয়েছিলেন তিনি চাননি অপারেশন করাতে। ফিক্সেশান পদ্ধতিতেই যেতে চেয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশি মুসলিম রোগী। নিজেকে এভাবেই দেখছেন বিখ্যাত ও বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। গত কয়েকদিন ধরেই নিজের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করেছেন তিনি, আর তাতে যা লিখেছেন তাতে আম নাগরিকের উদ্বেগও বেড়েছে। তসলিমা নিজে চিকিৎসক হয়ে পড়েছেন ভুল চিকিৎসার ফাঁপরে! হাসপাতালে শুয়ে নিজেরই চিকিৎসা শিক্ষাকে এখন ধিক্কার দিচ্ছেন তসলিমা। তাঁর অভিযোগ, পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। কোনও রকম ফ্র্যাকচার ছাড়াই তাঁর হিপ জয়েন্ট, ফিমার কেটে অথর্ব করে দেওয়া হয়েছে লেখিকাকে! নিজে নিজের এক্স রে রিপোর্ট দেখে আরেকটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখেছেন তিনি।

তসলিমা কয়েকদিন আগে পড়ে যান। ব্যাপক চোটও পান। বড় সাইজের পাজামা পরে হাঁটছিলেন ঘরে, নিজেরই চপ্পলে আটকে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। হাঁটুতে ব্যথা হয়, বরফ দেন, ভলিনিও। তাতেও ব্যথা না কমায় তাঁর আশঙ্কা হয়, হাঁটুর লিগামেন্টে হয়তো লেগেছে। বিশদে জানতে হাসপাতালে যান। এক্সরে আর সিটিস্ক্যান করে হাড়ের ডাক্তার তাঁকে জানান, পায়ের ফিমার নামের হাড়টির গলায় একখানা চিড় ধরেছে। চিকিৎসা হিসেবে চিকিৎসক জানান, ইন্টারনাল ফিক্সেশান, মানে চিড়ের জায়গায় স্ক্রু লাগিয়ে বসিয়ে দেওয়া আর দ্বিতীয়টা হিপ রিপ্লেসমেন্ট। হিপ কেটে প্লাস্টিক মেটাল দিয়ে একটা নকল হিপ বানিয়ে বসিয়ে দেওয়া।

তসলিমা লিখছেন,

"ধিক্কার দিচ্ছি নিজেকে। ধিক্কার দিচ্ছি এতকালের আমার মেডিক্যাল জ্ঞানকে। আমাকে হাসপাতালে মিথ্যে কথা বলা হয়েছিল যে আমার হিপ বোন ভেঙেছে। আমার জীবনে কোনও জয়েন্ট পেইন ছিল না, জয়েন্ট ডিজিজ ছিল না। আমাকে মিথ্যে কথা বলে, ফিমার ফ্র্যাকচারের ট্রিটমেন্টের নামে আমার হিপ জয়েন্ট কেটে, ফিমার কেটে ফেলে দিয়ে আমাকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ধিক্কার দিচ্ছি আমি কেন ক্রিমিনাল টিমের ট্র্যাপে পড়লাম। আজ আমি এক্সরে রিপোর্ট দেখলাম আমার। আমার কোথাও কোনও ফ্র্যাকচার হয়নি সেদিন। ফ্র্যাকচার হয়নি বলে আমার হিপ জয়েন্টে কোনও ব্যথা ছিল না, কোনও সুয়েলিং ছিল না।

আমাকে বাংলাদেশি মুসলিম রোগী হিসেবে দেখা হয়েছে। যার কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে অপারেশন করা হবে। সেই নিরীহ রোগী দেশে ফিরে যাবে এবং ভেবে সুখ পাবে যে তার ট্রিটমেন্ট হয়েছে।"

 

তসলিমা নাসরিন নিজেও পেশায় চিকিৎসক। তাঁর সঙ্গেই যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে আম জনতার সঙ্গে চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে কী প্রহসন ঘটে ভেবেই আঁতকে উঠছেন অনেকে। তসলিমা জানিয়েছিলেন তিনি চাননি অপারেশন করাতে। ফিক্সেশান পদ্ধতিতেই যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রোগীর মতামতকে অগ্রাহ্য করে প্রথমেই হাঁটু বদলে ফেলা হয়। তসলিমা লিখেছেন, “আমার হিপ জয়েন্ট কেটে ফেলে দিয়ে টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করা হলো। একটা পঙ্গু মানুষের জীবন আমাকে দেওয়া হলো।”

 

More Articles