অভিশপ্ত বোয়িং ৭৮৭-৮! যে অভিযোগ উঠেছিল আগেই

Boeing 787 Dreamliner : এর আগে ২০২১ সালে আরেকজন অভিযোগকারী, জন বার্নেট, বলেছিলেন, বোয়িংয়ের উৎপাদন কারখানায় নিরাপত্তা পরীক্ষা উপেক্ষা করা হয় এবং ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়।

আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান দুর্ঘটনার পর বিমানটির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ফ্লাইট এআই১৭১ লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে আহমেদাবাদ থেকে উড়ানের কিছুক্ষণ পরেই ভেঙে পড়ে । এই ঘটনায় ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু-সদস্যের মধ্যে মাত্র একজন বেঁচে ফিরেছেন। দুর্ঘটনার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়, তবে বোয়িংয়ের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা নিয়ে পুরনো উদ্বেগগুলো আবার সামনে এসেছে।

দীর্ঘদিনের অভিযোগ

বছরের পর বছর ধরে বোয়িংয়ের কর্মী ও প্রকৌশলীরা ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করে আসছেন। ২০২৪ সালে বোয়িংয়ের প্রকৌশলী স্যাম সালেহপুর অভিযোগ করেন, বিমানের ফিউজলেজ বা প্রধান কাঠামোর অংশগুলো সঠিকভাবে জোড়া দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, উৎপাদনের সময় তাড়াহুড়ো করে কাজ করা হয়েছে, যা বিমানের কাঠামোর মজবুতি কমিয়ে দিতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তিনি আরও জানান, এই সমস্যা প্রায় ১,০০০ ড্রিমলাইনার বিমানে থাকতে পারে।

এর আগে ২০২১ সালে আরেকজন অভিযোগকারী, জন বার্নেট, বলেছিলেন, বোয়িংয়ের উৎপাদন কারখানায় নিরাপত্তা পরীক্ষা উপেক্ষা করা হয় এবং ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়। তিনি উল্লেখ করেন, উৎপাদনের সময় ধাতব টুকরো বা অন্যান্য আবর্জনা বিমানের যন্ত্রাংশে রয়ে যায়, যা বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। দুঃখজনকভাবে, ২০২৪ সালে বার্নেট মারা যান। তার অভিযোগগুলো এখনও তদন্তের অংশ।

তদন্ত যে ভাবে এগিয়েছে

এই অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বোয়িংয়ের উৎপাদন প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করে। ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই বছর ধরে ড্রিমলাইনারের সরবরাহ বন্ধ ছিল, কারণ ফিউজলেজে ছোট ছোট ফাঁক এবং অন্যান্য ত্রুটি পাওয়া গিয়েছিল। বোয়িং দাবি করে, তারা এই সমস্যাগুলো সমাধান করেছে এবং বিমানটি নিরাপদ। তবে সালেহপুরের মতে, এই ত্রুটিগুলো এখনও রয়ে গেছে। অভিযোগের জন্য বোয়িং তাঁকে কোনঠাসা করেছে।

আহমেদাবাদের দুর্ঘটনার পর এফএএ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) ভারতের তদন্তে সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, বিমানটি উড়ানের পরপরই পাইলট একটি মে-ডে কল করেছিলেন, যা জরুরি অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইঞ্জিনে সমস্যা বা উইং ফ্ল্যাপের ত্রুটি এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে, তবে এখনও কিছুই নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না।

বোয়িংয়ের দাবি

বোয়িং তাদের ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের নিরাপত্তা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বলে দাবি করেছে। তারা বলছে, বিমানটি ব্যাপক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে। বিমানের কাঠামো দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ, দাবি তাদের। অভিযোগকারীদের দাবি অস্বীকার করে বোয়িং বলেছে, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি বিমানের নিরাপত্তায় কোনো ব্যাঘাত।ঘটায়নি। তবে সমালোচকরা বলছেন, বোয়িংয়ের উৎপাদন তাড়াহুড়ো করার প্রবণতা রয়েছে।

ড্রিমলাইনারের বৈশিষ্ট্য

৭৮৭ ড্রিমলাইনার তার উন্নত প্রযুক্তি ও জ্বালানি দক্ষতার জন্য বিখ্যাত। এর অর্ধেক কাঠামো কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি, যা বিমানটিকে হালকা এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী করে। এটি রোলস-রয়েস ট্রেন্ট ১০০০ বা জিই জিইএনএক্স ইঞ্জিন দিয়ে চলে, যা এর দীর্ঘ পথের যাত্রাকে সম্ভব করে। ২০১১ সালে প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রার পর থেকে এটি বিশ্বব্যাপী ১১০০টির বেশি বিমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এই দুর্ঘটনা এই মডেলের প্রথম মারাত্মক ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

ভবিষ্যৎ প্রশ্ন

আহমেদাবাদের দুর্ঘটনা বোয়িংয়ের জন্য একটি বড় ধাক্কা। কেবল তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়াই নয়, তাদের নিরাপত্তা এবং অভিযোগকারীদের প্রতি আচরণের ওপরও আলো ফেলছে এই ঘটনা। এত প্রাণের দায় কার? ফাঁক কোথায়, কতটা গলদ অবহেলা করা হল, জানতে চাইছে গোটা দেশ।

More Articles