হাতে মাত্র পাঁচ বছর, দাউদাউ আগুনে ফুটবে বিশ্ব! ভয়াবহ ইঙ্গিত সমীক্ষায়

Environment : এল নিনোই আসল কালপ্রিট! কীভাবে পরিবেশের ওপর প্রভাব বিস্তার এটি?

ঘড়িতে সবে মাত্র সকাল সাতটা, অথচ রোদের বহর দেখলে দুপুর বারোটা ভেবে ভ্রম হবে প্রায় দিনই। ক্যালেন্ডার মেনে গ্রীষ্মকাল শুরু হওয়ার দিন তো কবেই পুরনো হয়ে গিয়েছে। এখন প্রতি বছরই গরমের দাপট টেক্কা দিচ্ছে গত বছরের সমস্ত হিসাবকে। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে কঠিন থেকে কঠিনতর সময় অপেক্ষা করছে সামনের বছরগুলিতে। আরও আরও গরমের দাপটের জুজু ইতোমধ্যেই বেশ জোরালো হয়ে ঠেকেছে বিশ্ব আবহাওয়া মানচিত্রে। এবার সেই আশঙ্কাকে একপ্রকার স্বীকৃতি দিল জাতিসংঘের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোজিক্যাল অর্গানাইজেশন বা ডব্লিউএমও। গত ১৭ মে বুধবার এক বৈঠকের শেষে ডব্লিউএমও জানায়, আগামী পাঁচ বছর রেকর্ড তাপমাত্রা দেখতে চলেছে বিশ্ব। আবহাওয়ার চরম পরিবর্তন নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে তাঁরা মূলত এল নিনোর অবস্থান এবং গ্রিন গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ হিসাব করেই উপসংহারে পৌঁছেছেন বলে দাবি।

এতদিনের হিসেবে খতিয়ে দেখে জানা যাচ্ছে যে, উষ্ণতার নিরিখে এগিয়ে থাকা আটটি বছরই হল ২০১৫ থেকে ২০২২। এবার সেই তালিকায় যোগ হয়েছে চলতি বছরটিও। এমনকী ছাপিয়ে গিয়েছে পুরনো সমস্ত উষ্ণতার গ্রাফকে। তবে এটুকুই চূড়ান্ত নয় বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরও বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হল এই সাম্প্রতিক বৈঠক শেষে। ডব্লিউএমও বলেছে, ২০২৩ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে অন্তত একটি বছরে বিশ্বের ভূপৃষ্ঠের বার্ষিক তাপমাত্রা আগের চেয়েও দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হবে। এর ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা তৈরি হবে বলেও জানিয়েছে ডব্লিউএমও।

আরও পড়ুন - মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝে রহস্যময় ‘সুপার-আর্থ’! পৃথিবীকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে এই গ্রহই?

এদিক ইতোমধ্যেই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় দেড় ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি আটকানোর জন্য গত কয়েকটি জলবায়ু সম্মেলনে প্রভূত আলোচনাও হয়েছে। এবার সেই আগুনে নতুন করে ঘৃতাহুতি দিল ডব্লিউএমও সংস্থাটি। দেড় ডিগ্রির থেকেও বাড়তে পারে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা। কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি ঘনিয়ে আসছে? এই প্রশ্নের উত্তরে একটি বিশেষ জলবায়ু পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। এই পরিস্থিতির জন্য মূলত এল নিনোকেই দায়ী করছে সংস্থা। কিন্তু কী এই এল নিনো? কীভাবেই বা এটি প্রভাব বিস্তার করে জলবায়ুর ওপর?

এল নিনো হল আবহাওয়ার একটি স্বাভাবিক অবস্থান। সহজ করে বলতে গেলে এল নিনো আবহাওয়া গরম করে, অন্যদিকে লা নিনা আবহাওয়া ঠান্ডা করে। আক্ষরিক অর্থে এল নিনো মানে ছোট ছেলে। স্প্যানিশ ভাষায় একে বলা হয় ছোট্ট যীশু। ১৬০০ সালে দক্ষিণ আমেরিকার মৎস্যজীবীরা প্রথম প্রশান্ত মহাসাগরে এই আবহাওয়ার পরিবর্তনের বিষয়টি নজরে আনেন। এদিকে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে প্রতি তিন ও সাত বছর অন্তর এই ধরণের আবহাওয়ার বদল ঘটে। বায়ু, সমুদ্র স্রোত, সমুদ্রের ও আবহাওয়ার ভারসাম্য নষ্ট হওয়া এবং বায়োস্ফিয়ারের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার জেরে এই পরিস্থিতি তৈরি হয় বলেই জানান পরিবেশবিদরা।

আরও পড়ুন - জলের তলায় চলে যাবে পুরো কলকাতা? যে ভয়ংকর বিপদের ইঙ্গিত দিল আন্তর্জাতিক সমীক্ষা

এল নিনো তৈরি হলে আবহাওয়ার ঠিক কী ধরনের পরিবর্তন হয়?

আগেই বলা হয়েছে, এল নিনো হল লা নিনার ঠিক বিপরীত পরিস্থিতি। অর্থাৎ লা নিন যেভাবে পরিবেশ ঠাণ্ডা করে এল নিন সেভাবেই গরম করে। এল নিনো তৈরি হলে তার জেরে ঠান্ডা জল কোনওভাবেই ভৌম তলে আসতে পারে না। ফলে জল অস্বাভাবিকভাবে গরম হয়ে যায়। সমুদ্রের জল গরম হয়ে যাওয়ায় তা মৎস্য চাষের ওপর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে পাশাপাশি এল নিনোর প্রভাবে প্রচন্ড খরা পরিস্থিতি তৈরি হয় বিভিন্ন অংশে। শুধু তাই নয়, প্রশান্ত মহাসাগরে সাইক্লোন ও টাইফুনের প্রবনতাও বাড়িয়ে দেয় এই এল নিনো।

এদিকে, ডব্লিউএমওর বৈঠক শেষে জানো হয়েছে যে, আগামী দিনে এল নিনো তৈরি হলেও পাশাপাশি লা নিনা তৈরি হওয়ার কোনও রকম সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। তাই তাপমাত্রা ব্যালেন্স হওয়ার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। যার জেরে ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে আবহাওয়ার পারদ। আর এই পরিস্থিতিই বিশ্ব উষ্ণায়নের দিকে ক্রমেই ঠেলে দিচ্ছে পৃথিবীকে। এর প্রভাবে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য, খাদ্যভাণ্ডার এবং সার্বিক পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে, তেমনই অন্যদিকে কোথাও প্রবল খরা, কোথাও আবার প্রবল বন্যা হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে। আর এই খরা এবং বন্যা ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপদও। সঙ্গে একাধিক রোগের ভ্রুকুটি তো থাকছেই। তাই ডব্লিউএমও আগামী এই কঠিন পরিস্থিতির কথা ভেবে তড়িঘড়ি সতর্কতা জারি করল।

More Articles