মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝে রহস্যময় 'সুপার-আর্থ'! পৃথিবীকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে এই গ্রহই?
Super Earth: বৃহস্পতি হচ্ছে সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ। পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৩১৮ গুণ বড় এটি
নবগ্রহ থেকে কান ধরে বের করে দেওয়া হয়েছে প্লুটোকে। এখন আটটি গ্রহ নিয়ে সৌর জগতের সংসার। সৌরজগতের ব্যাপ্তি লিখে শব্দ খরচা অহেতুক। সেই বিপুল বিশ্বের এই একটি সংসারে সামান্য বদল হলেই তোলপাড় পড়ে যায়। একটি মাত্র গ্রহে রয়েছে মানুষ, সেই মনুষ্যজাতির অস্তিত্বই পড়ে সংকটে। সৌর জগতের গঠন এবং বিবর্তন নিয়ে এখনও ঢালাও গবেষণা চলছে। আটটি গ্রহ সূর্যকে ঘিরে ঘুরে চলেছে ঠিকই, তবে এর মাঝেও রয়েছে অনাবিষ্কৃত নানা বিষয়। রয়েছে এমন কিছু পদার্থের বা অংশের উপস্থিতি যা এখনও ব্যাখ্যাতীত। এমনই একটি বিষয় হচ্ছে 'সুপার-আর্থ'! মানে পৃথিবী ছাড়াও রয়েছে অন্য এক পৃথিবী?
গবেষকরা একটি গবেষণায় দেখেছেন যে মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যে একটি সুপার-আর্থ রয়েছে। সে থাকলে অসুবিধা বিশেষ ছিল না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই সুপার আর্থ আমাদের গোবেচারা পৃথিবীকে সৌরজগতের বাইরে ঠেলে ফেলে দিতে পারে। মানে, এই একরত্তি গ্রহের সমস্ত জীবন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সুপার-আর্থ হচ্ছে এমন গ্রহ যেগুলি পৃথিবীর চেয়ে বিপুল ও বিশাল কিন্তু নেপচুন এবং ইউরেনাসের মতো বরফের দৈত্যের চেয়ে হালকা।
বিজ্ঞানীরা একটি বিষয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন। এ যাবৎ যেসব নক্ষত্র জগৎ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে সুপার-আর্থ আছে ঠিকই। তবে তার বেশিরভাগেরই আকার বিশাল টেরেস্টিয়াল ও গ্যাসীয় গ্রহের আকারের মাঝামাঝি। আমাদের সৌরজগতে কিন্তু এমন কিছুই ছিল না। আবার এদিকে, বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে মঙ্গল গ্রহ এবং বৃহস্পতির মধ্যেকার লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার জুড়ে এমনই কিছু খুঁজে পাওয়ার আশা করছেন, যেখানে অন্য কিছুই আর নেই।
আরও পড়ুন- ভেঙে পড়ল সূর্যের এক জ্বলন্ত অংশ! ছিটকে আসবে কি পৃথিবীর দিকেই?
"সৌরজগতের স্থাপত্য এবং পৃথিবীর বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই বোঝাপড়াটিই। গ্রহ বিজ্ঞানীরা প্রায়ই চান যেন দু'টি গ্রহের মধ্যে কিছু থাকে। এটিকে নষ্ট রিয়েল এস্টেটের মতো মনে হয়," বলছেন ইউসিআর অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট স্টিফেন কেন। গবেষকরা মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মধ্যে একটি গ্রহের গতিশীলতাকে নানাভাবে খতিয়ে দেখে অন্যান্য সমস্ত গ্রহের কক্ষপথের উপর এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেছেন। গবেষকরা দেখেছেন, এই সুপার আর্থ কেবল পৃথিবী নয়, সৌরজগতের জন্যও বিপর্যয়কর।
প্ল্যানেটারি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, এই গ্রহটি অর্থাৎ এই সুপার আর্থ বৃহস্পতিকে তার কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেবে এবং এটি সৌরজগতকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য যথেষ্ট বড় একটি বিষয়। এই সুপার আর্থ গ্রহটি বৃহস্পতিকে যদি ধাক্কা মারে তাহলে সেই ধাক্কার চোট গিয়ে পড়বে পৃথিবীর উপরেও। মুহূর্তে টালমাটাল হয়ে যাবে এই সৌরজগৎ। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীই চান, আরও একখানা অতিরিক্ত গ্রহ থাকলে ভালো হতো। থাকলে যে কী হতে পারে তার আশঙ্কাটাই ভয়াবহ। তবে আশার কথা হচ্ছে, এই সুপার আর্থ সংক্রান্ত গবেষণা সবটাই হাইপোথেটিক্যাল। মানে সুপার আর্থ আছে এমনটা ধরে নিয়ে গবেষণা চলছে। আসলে এমন কোনও অতিরিক্ত গ্রহ আমাদের সৌরজগতে নেই।
আরও পড়ুন- এমনও সম্ভব! পৃথিবীতে বাক্সের মধ্যে তৈরি হল সূর্য, অসাধ্যসাধন বিজ্ঞানীদের
বৃহস্পতি হচ্ছে সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ। পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৩১৮ গুণ বড় এটি। বৃহস্পতির মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রও তাই বিশাল। কোনও সামান্যতম বস্তুও যদি বৃহস্পতির কক্ষপথে সামান্য ব্যাঘাত ঘটায় তাহলে আমাদের সৌরজগতের রুটিন এক্কেবারে ঘেঁটে যাবে। গবেষকরা বলছেন, এই সুপার আর্থ বুধ এবং শুক্রকে তাদের কক্ষপথ থেকে ছিটকে বের করে দিতে পারে এবং ইউরেনাস আর নেপচুনের কক্ষপথকেও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
আর পৃথিবী যদি একবার নিজের কক্ষপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে যায় তবে সর্বনাশ। সূর্যকে ঘিরে যদি আর পৃথিবী না ঘোরে, তবে পৃথিবীর পরিবর্তিত কক্ষপথ এই গ্রহকে আর বাসযোগ্য রাখবে না। সৌরজগৎ আসলে অদ্ভুত এক সূক্ষ্ম সুরে বাঁধা। যেন এক বিশাল ঘড়ি, তার অজস্র নাটবল্টু, অজস্র তার, অনন্ত চাকা। সবটা এক নির্দিষ্ট সুরে বাঁধা। কোথাও যদি ক্ষুদ্রতম নাটবল্টুটিও আলগা হয়ে যায় তাহলে ভেঙে পড়বে সবটাই। তাই সুপার আর্থ এসে যে আমাদের এই সাধের গ্রহটিকে চিরকালের মতো বাতিল করে দেবে না এমন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, বরং উল্টোটাই বেশি সম্ভবপর।