শূন্য থেকে শুরু, সব বিপত্তি পেরিয়ে নিজেদের ব্র‍্যান্ড গড়ে তুলেছেন এই দম্পতি

বহু কষ্টের মধ্যেও দেখে ফেলেন একটি স্বপ্ন, 'নিজের ব্যবসা গড়ার' আর বর্তমানে সেই স্বপ্ন সফল করার পথে ক্রমশ অগ্রসর হয়ে চলেছেন হাওড়ার বাসিন্দা এই ব্যক্তি।

মানুষের জীবনে সাফল্যের কাহিনি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়। তবে প্রত্যেক ক্ষেত্রে তার সাফল্যের শিখরে পৌঁছনোর নেপথ্যে অক্লান্ত পরিশ্রমের চিত্র একই থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিংবা খবরের কাগজে আমাদের সামনে এরকম বিভিন্ন মানুষের সাফল্যের কাহিনি উঠে আসে, যা আমাদের নতুন স্বপ্নে এবং এক নতুন উদ্দীপনায় উজ্জীবিত হতে সহায়তা করে। আবার বেশ কিছু প্রতিভার কথা এখানে তুলে ধরা হয়, যারা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করে। এক্ষেত্রে ভুবন বাদ্যকর থেকে শুরু করে রানু মণ্ডলের মতো শিল্পীরা উদাহরণ হতে পারেন।

 

আজ আপনাদের সামনে এমনই একটি সাফল্যের কাহিনি তুলে ধরছি। এমন এক ব্যক্তির কথা বলা হচ্ছে, যিনি শুরুটা করেছিলেন একটি চাকরি দিয়ে। কোনওমতে দু'বেলা খাবার জোগাড় করাই যেখানে ছিল মুশকিল, সেখান থেকে সেই ব্যক্তি দেখেছিলেন এক স্বপ্ন আর সেই স্বপ্নকে সত্যি করে বর্তমানে নিজের প্রচেষ্টায় তার সৃষ্ট ব্যবসাকে ধীরে ধীরে বড় করে চলেছেন তিনি। আজ তাঁর জীবনকাহিনি তুলে ধরা হবে।

 

স্বপ্নের পথে অগ্রসর হওয়া এই মানুষটির নাম নারায়ণকৃষ্ণ দাস। মধ্য হাওড়ার কদমতলা এলাকার বাসিন্দা ইনি। ৪৮ বছর বয়সি পেশায় ব্যবসায়ী এই ব্যক্তির উত্থান একদমই সহজ ছিল না। প্রতিটি পদে বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আজ তিনি ধীরে ধীরে নিজের ব্যবসাকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন। বর্তমান ব্যবসার উত্থানের শুরুটা সহজ না হলেও ধীরে ধীরে নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি চড়ে চলেছেন নারায়ণবাবু। বিভিন্ন মশলার সামগ্রী বিক্রি করার মাধ্যমে পথ শুরু করেন তিনি। তবে ব্যবসায় প্রথমেই সাফল্যের মুখ না দেখলেও হাল ছাড়েননি মধ্যবয়সি এই ব্যক্তি।

 

আরও পড়ুন: অল্প পুঁজিতে বিশেষ মুরগি পালন, লক্ষ টাকা রোজগারের হাতছানি, জেনে নিন কীভাবে

 

নিজ ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠা
অন্যদের থেকে জিনিসপত্র কিনে বিক্রি করেন প্রথমে। এইভাবেই ধীরে ধীরে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করেন তিনি এবং পরবর্তীকালে তৈরি করে ফেলেন নিজের 'ব্র্যান্ড'। বর্তমানে গোটা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যথা পুরুলিয়া, বর্ধমান, দুই ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, হুগলি, কলকাতা থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও নিজের 'আদর্শ' ব্র্যান্ডের মালপত্র বিক্রি করে চলেছেন। 'আদর্শ' (Adarsha) ব্র্যান্ডে বিভিন্ন রকমের পাঁপড় (মশলা ও নর্মাল) এবং বিভিন্ন খাদ্যমশলার সামগ্রী বিক্রি করছেন তিনি।

 

নারায়ণবাবুর কথায়, "চাকরি ছেড়ে যখন আমি ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমাদের পথ এতটুকু সহজ ছিল না। কিন্তু আমার পরিবার আমার পাশে সবসময় দাঁড়িয়েছিল। এর পরেই আমার স্ত্রী সুদীপা দাসের অনুপ্রেরণায় ধীরে ধীরে অল্প মালপত্র বিক্রি দিয়ে আরম্ভ করি আমরা; পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নিজেদের 'ব্র্যান্ড' নিয়ে আসার। রাস্তাটা মোটেও সহজ ছিল না, কিন্তু আমরা কখনওই হার মানিনি। ধীরে ধীরে আমাদের কোম্পানি সুদীপা এন্টারপ্রাইজ-এর নিজস্ব ব্র্যান্ড আদর্শ লঞ্চ করা হয় মার্কেটে এবং এরপর থেকে পাঁপড় এবং অন্যান্য মশলাসামগ্রী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে আমরা সরবরাহ করে থাকি।"

 

ওপেন মার্কেটের (Open Market) যাত্রা
শুধুমাত্র রেশন ব্যবস্থায় 'আদর্শ' ব্র্যান্ডের সামগ্রী সরবরাহ করেই থেমে থাকেননি নারায়ণবাবু এবং তাঁর স্ত্রী সুদীপা দেবী। পাশাপাশি সম্প্রতি ওপেন মার্কেটে ব্যবসার বিস্তার ঘটান তাঁরা। বর্তমানে একাধিক জেলায় বিভিন্ন দোকানে দোকানে Adarsha ব্র্যান্ডের পাঁপড় এবং চায়ের ব্যবসা শুরু করেছেন এই দম্পতি। ইতিমধ্যে বেশ সাফল্যের মুখ দেখতেও শুরু করেছে এই ব্যবসা। সুদীপা দেবীর কথায়, "রেশন ব্যবস্থায় আমাদের ব্র্যান্ড ইতিমধ্যেই বেশ সাফল্যতা অর্জন করেছে। কিন্তু আমরা এতে থেমে থাকতে চাইনি; আমাদের ইচ্ছা ছিল ওপেন মার্কেটের মাধ্যমে বিভিন্ন দোকানে দোকানে মালপত্র সরবরাহ করব আর সেই উদ্দেশ্যে খানিকটা সাফল্য আমরা ইতিমধ্যেই পেয়েছি। আদর্শ ব্র্যান্ডের চা এবং পাঁপড় ঘরে ঘরে মানুষ আপন করে নিয়েছে এবং বিশেষ করে চা তাদের বেশ পছন্দ হয়েছে। আমাদের এই যাত্রা একদম সহজ ছিল না। কিন্তু দৃঢ় মানসিকতা এবং কঠিন পরিশ্রমের জোরে এই পর্যায়ে আমরা পৌঁছতে পেরেছি।"

 

শুরুর দিনগুলোর চিত্র
জীবনের প্রথমভাগে একাধিক বাধার মুখোমুখি হয়েছিল এই দম্পতি। প্রথমে একটি ভালো কোম্পানিতে চাকরি করলেও কিছু মানুষের ষড়যন্ত্রের কারণে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন নারায়ণবাবু। সর্বদা সৎ উপায়ে উপার্জন করতে চাওয়া এই ব্যক্তি সেই সময় অসৎ ব্যক্তিদের সঙ্গে কোনওমতেই আপস করতে চাননি এবং পরবর্তীকালে অন্য এক কোম্পানিতে চাকরিতে ঢোকেন তিনি। তবে সেখানে তাঁর উপার্জন এতটাই কম ছিল যে, বিয়ের পর সংসার চালানোই যথেষ্ট মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কিছুতেই দমে যাননি তিনি! নতুন কোম্পানিতে চাকরি করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়াতে থাকেন তিনি। তবে সেই সময় বহু কষ্টের মধ্যেও দেখে ফেলেন একটি স্বপ্ন, 'নিজের ব্যবসা গড়ার' আর বর্তমানে সেই স্বপ্ন সফল করার পথে ক্রমশ অগ্রসর হয়ে চলেছেন হাওড়ার বাসিন্দা এই ব্যক্তি।

 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ওই দম্পতির কথায়, "আমরা বর্তমানে রেশন ব্যবস্থার পাশাপাশি ওপেন মার্কেটের মাধ্যমে আমাদের প্রোডাক্টগুলোকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছি। ইতিমধ্যে আমাদের আড়াইশো গ্রাম এবং আড়াই কেজি জারের চা মানুষের বেশ পছন্দ হতে শুরু করেছে। এর দাম আমরা এতটাই কম রেখেছি যে, ভালো কোয়ালিটির পাশাপাশি তারা এটি ক্রয় করে অনেক সাশ্রয় করতে পারবে। এবার পাঁপড় প্রসঙ্গে দেখতে গেলে, ১০০ ও ২০০ গ্রাম পাঁপড় কোয়ালিটির দিক থেকে এতটাই ভালো বানানো হয়েছে যে, একবার কেউ কিনলে পরবর্তীতে আবারও অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে আমাদের প্রোডাক্টগুলোর সঙ্গে বেশ কিছু গিফ্টও রাখা হয়েছে, যা অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়াবে।"

More Articles