একই পাত্রকে বিয়ে যমজ বোনের! ভারতে আবার ফিরবে বহুবিবাহ প্রথা?

Indian Marriage Act : দুই বোনই বিয়ে করেছেন একজন পাত্রকে, মহারাষ্ট্রের ঘটনা সামনে আসতেই উত্তাল নেট দুনিয়া

সুসজ্জিত বিয়ের মণ্ডপ, বরও হাজির সময় মতো। মালাবদলের সময়ে কনেকে নিয়ে আসার কথা উঠতেই অদ্ভুত কান্ড! একি একসঙ্গে দুজন কনে? দুজনেই বিয়ে করবেন এক ব্যক্তিকেই। ঘটনাটা শুনতে অবাক লাগলেও, সম্প্রতি এরকমই একটু খবর উঠে এসেছে শিরোনামে। নেট মাধ্যমে এই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজনা তুঙ্গে। অদ্ভুত এরকম বিয়েকে ঘিরে প্রাথমিকভাবে হাসির রেশ উঠলেও পাশাপাশি উঠে আসে অন্য একটি দিকও। ভারতবর্ষের আইন-নীতির প্রসঙ্গ তুলে অনেকেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে গণমাধ্যমে। প্রশ্ন উঠেছে এই বিয়ে কি আদেও বৈধ? আদেও কি মিলবে আইনি স্বীকৃতি?

মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার আকলুজ গ্রামে ২ ডিসেম্বর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ওই তিনজন। পাত্রী দুই যমজ বোন, নাম পিঙ্কি ও রিঙ্কি। দুজনকে দেখতেও অনেকটা একইরকমের। চট করে দেখে বোঝার জো নেই কোন জনের কী নাম। পেশাগত দিক থেকেও মিল রয়েছে দুজনের। দু'জনই পেশায় আইটি ইঞ্জিনিয়ার। মুম্বইয়ে একই প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তি কর্মী হিসেবে কর্মরত পিঙ্কি এবং রিঙ্কি। অপরদিকে পাত্র অতুলের বয়স ৩৬। মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার মালশিরাস তালুকের বাসিন্দা অতুল। মুম্বইয়ে তাঁর ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা রয়েছে। জানা যায়, মায়ের অসুখের সময় অতুলের থেকে গাড়ি ভাড়া করতেন দুই বোন। সেই সূত্রেই আলাপ শুরু। তারপর যাতায়াত বাড়তে থাকে পরিবারের মধ্যেও। সম্পর্ক আর কেবল গাড়ি ভাড়া দেওয়ায় আটকে থাকে না। পাশাপাশি বাবার অবর্তমানে অসহায় দুই বোনের ত্রাতা হয়ে ওঠেন অতুল। আর সেই থেকেই নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে পিঙ্কি এবং রিঙ্কির। তার জেরেই প্রেম। ছোট থেকেই দুই বোনের সব কিছুই এক সঙ্গে, কিন্তু তার রেশ যে শেষ পর্যন্ত প্রেমেও গড়াবে প্রাথমিকভাবে কেউই বোঝেননি। পরে বুঝতে পারেন দুই বোন একসঙ্গে প্রেমে পড়েছেন অতুলের। কিন্তু এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে রেষারেষি তো দূর, কোনরকম ঝামেলাও হয়নি। উপরন্তু একসঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতেও বসেছেন তাঁরা। এমনকী এ তে দুই বাড়ির সমর্থনও রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন : পায়ে চটিজুতো, প্রবেশ নিষেধ, জীবনে আর এশিয়াটিক সোসাইটি যাননি ঈশ্বরচন্দ্র

যদিও আইনের কাছে পার পায়নি যমজ বোনের ভালোবাসা। হিন্দু বিবাহ আইন অনুসারে, কোনও ব্যক্তির প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকাকালীন দ্বিতীয় বিয়ে করা যায় না। তার ওপর আবার একই সঙ্গে জোড়া বিয়ে! নৈব নৈব চ! সুতরাং, এই বিয়ে করা নিয়ে অতুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে থানায়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা অনুসারে অতুলের বিরুদ্ধে অকলুজ থানায় মামলা করেছেন এক হিন্দু যুবক। তাহলে কি পিঙ্কি, রিঙ্কির ভালোবাসার এই স্বীকৃতি আইনি কারণে বাতিল হবে? প্রশ্নটা বিঁধে রয়েছে।

ভালোবাসার নিয়মে এ ঘটনা না আটকালেও, আইনের নিয়মে তো আটকাবেই। একদিন আইন করে যে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল সমাজ, আজ সেই সমাজ যদি একে স্বীকৃতি দেয় তবে তো স্বর্গ থেকে টিকিধারী ব্রাহ্মণরা সব নেবে আসবেন। আঙুল নেড়ে তর্ক জুড়বেন। তাদের আরও খান কয়েক বিয়ে করার যে অপূর্ণ সাধ ছিল তা মেটানোর জন্য কাগজে বিজ্ঞাপনও দিতে পারেন! আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এগুলো ঘর অতীত মনে হলেও, আলোচনার প্রয়োজনে সে প্রসঙ্গ এসে পড়ে বৈকি!

আরও পড়ুন : ঘুরে ঘুরে সাবান বিক্রি থেকে বারবার বিবাহবিচ্ছেদ: মহাশ্বেতা দেবীর জীবনে ছিল নানা চড়াই-উতরাই

সময়টা ১৮৭১ সাল। ফের হুলুস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে বসলেন বিদ্যাসাগরমশাই। নতুন বই লিখলেন। এবারে কলমের তীর সরাসরি সমাজের কুলীন ব্রাহ্মণদের দিকে। সমাজে তখন জাঁকিয়ে বসে ‘বহুবিবাহ’। তিনি কিনা তাকেই আক্রমণ করে লিখলেন বহুবিবাহ শাস্ত্রবিরোধী, কুৎসিত প্রথা।বিদ্যাসাগরের কলম থেকে যেন চুঁইয়ে নামল শ্লেষ। তার সঙ্গে জুড়েছিল শাস্ত্রাদি থেকে উদ্ধৃতি, অকাট্য যুক্তি। সমাজের ওই জড়, কূপমন্ডুক অবস্থাকে নাড়িয়ে দেওয়া ছাড়া অবশ্য গতিও ছিল না। একটা ঘোর অন্ধকার নিয়ম গ্রাস করেছিল গোটা সময়কালকে। বিদ্যাসাগর ছাড়া আর কেই বা পারতেন অমন পাথরপ্রতিম প্রথায় ধাক্কা দিতে!ধাক্কাটি লেগেছিলও যথাস্থানেই। হয়তো তিনি ভালোই জানতেন ঠিক কোন গর্তে নাড়া দিতে হবে। সমাজকে একপ্রকার আড়াআড়ি বিভাজিত করে ফেললেন তিনি। ১৮৫৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়েছেন এই কুপ্রথা বিপরীতে। এ ঘিরে এমনিতেই উত্তাপ কম ছিল না, তার ওপর গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো এসে যোগ দিল তাঁর ওই বইখানা। তারপর জল আরও আরও অনেক গড়িয়েছে এ পথ দিয়ে। হাল ছাড়েননি তিনি। শক্ত করে রাস ধরেছেন সমাজের। নারীদের অধিকার নিয়ে একচুল জমিও ছাড়েননি মানুষটি।নানা বিরোধিতা, প্রতি আক্রমণ সয়েও শেষ পর্যন্ত জয় এসেছে। অবশ্য সেটাই তো বাঞ্ছনীয় ছিল।

সমাজে এখন চাইলেই কেউ একাধিক বিয়ে করতে পারেন না। আইনের জুজু এসে টুঁটি টিপে ধরে। অবশ্য অপরাধীর তো ফিকির খুঁজতে সময় লাগে না, তাই লুকিয়ে চুরিয়ে এ আইন ভেঙে চলেছে অনেকেই। আর কিছু মুসলিম সম্প্রদায় তো এখনও ব্যক্তিগত আইনের দোহাই দিয়ে একাধিক বিয়েকেই বৈধ বলে দাবি করেন। কিন্তু আজকের মহারাষ্ট্রের ঘটনাটি একেবারেই স্বতন্ত্র। এখানে কোনও জোর জুলুম নেই, নেই নিয়ম ভাঙ্গার কোন চতুরতাও। কেবল ভালোবাসাকে সম্বল করেই এই সিদ্ধান্ত ছিল তিন জনের। কিন্তু আইনের কাছে অনুভূতি নিয়ে আলাদা কোনও নিয়ম আছে কিনা তা অবশ্য জানা যায় না!

More Articles