সবচেয়ে লম্বা বাদ্যযন্ত্র ইউক্রেনের অহংকার, বিবাহরীতিও বিচিত্র সে দেশে

ইউক্রেন। রাশিয়ার পর সমগ্র ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম দেশ। এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত ছিল এই ইউক্রেন। সালটা ১৯৯১, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এল ইউক্রেন। নিজেদের ঘোষণা করল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে। রাশিয়ার মতো ইউক্রেনেও এক সময় ছিল স্লাভদের আধিপত্য। খনিজ সম্পদ এবং কৃষি ব্যবস্থা ইউক্রেন যথেষ্ট উন্নত। মানব উন্নয়ন সূচকের ক্ষেত্রে ৭৪ নং স্থানে অবস্থান করছে দেশটি। তবে শুধুমাত্র আলোকোজ্জ্বল ইতিহাস নয়, ইউক্রেনকে ঘিরে রয়েছে অন্ধকারের কালো চাদরও। এ যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার। দারিদ্র পরিমাণগত ভাবে এখানে বেশ বেশি, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশজোড়া দুর্নীতিও।

২৪ এ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করল ইউক্রেনের বিরুদ্ধে। অবস্থার প্রতিদিনই নতুন করে অবনতি হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে স্বৈরাচারী পুতিন সরকারের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের জনসাধারণ গড়ে তুলেছে এক প্রবল প্রতিরোধ। তাদের লড়াই মন জিতেছে সবার। তবে এই অসম লড়াই কতক্ষণ বাঁচাতে পারবে ইউক্রেনকে? এ প্রশ্নের উত্তর নেই। প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে ইউক্রেন সীমান্তে। বাঁচার আশায় জন্মভূমির মাটি শিকড়ের টানকে ভুলতে হচ্ছে। সমস্ত পিছুটান ভুলে অজানার উদ্দেশ্যে, অনিশ্চিত জীবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। অবশ্য ১৮-৬০ বছর বয়সী পুরুষদের জন্য সে আশাও যেন গুড়ে বালি, সে দেশের সরকার তাদের আবেদন করেছে দেশের সেনাবাহিনীতে যোগদানের। লড়াইয়ের আট দিন পার। এ যেন এক অতল মৃত্যুকূপ সাজানো আছে জেলেনস্কির জন্য। প্রতিদিন ইউক্রেনের উপর হামলার মাত্রা বাড়াচ্ছে রুশ বাহিনী। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি শুধু সময়ের অপেক্ষা? উত্তর দেবে সময়। কিন্তু ইউক্রেনে মানসভ্রমণ বন্ধ থাকে কেন, জেনে নেওয়া যাক সেই দেশের বিচিত্র সব ঘটনাপ্রবাহের কথা।

পারমাণবিক দুর্ঘটনা

১৯৮৬ সালের ২৬শে এপ্রিল। ইউক্রেনবাসী সেদিনও অন্যান্য অনেক রাতের মত তলিয়ে ছিলেন ঘুমের অতল সাগরে। কেউ হয়তো ঘুমের মধ্যেই বুনছিলেন সোনালী স্বপ্নের জাল। এমন সময় রাত ১.২৩ মিনিট নাগাদ প্রচন্ড বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো চেরনোবিল। পারমাণবিক চুল্লিতে সেদিনের বিস্ফোরণ ঘুম কেড়েছিল সাধারণ মানুষের। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয়েছিল ৪ জনের, পরবর্তী সময়ে মৃত্যু হয় আরও একত্রিশ জনের। তবে এরপরেও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন ছয় লক্ষেরও বেশী মানুষ।

সূর্যমুখীর দেশ

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সেই কবিতাটা মনে আছে? ' অনন্ত কুয়ার জলে চাঁদ পড়ে আছে' - কবিতায় শক্তি লিখেছিলেন "গোলাবাড়ি থেকে কিছু দূরে রবে সূর্যমুখী পাড়া" - ঠিক সেই রকমই ইউক্রেনকে সূর্যমুখীর দেশ বললে অত্যুক্তি করা হবে না। স্লোভেনিয়ার আয়তনের সমান অংশজুড়ে ইউক্রেনের চাষ হয় সূর্যমুখীর। বস্তুতপক্ষে ভারত যে পরিমাণ সূর্যমুখী তেল আমদানি করে তার ৮৫-৯০ শতাংশ আসে ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বে যে ভারতে ভোজ্য তেলের দাম বাড়বে এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। ভারতের উদ্দেশ্যে পাঠানো প্রায় চার হাজার টন সূর্যমুখী তেল যুদ্ধের কারণে সীমান্তে আটকে পড়া মধ্যবিত্তের হাত পড়তে বাধ্য।

গ্যাস ল্যাম্পের আবিষ্কার:- লুভিউ সিটি। ইউক্রেনের এই শহর অধিকারী এক বিরল কৃতিত্বের।১৮৫৩ সাল নাগাদ জন জে এবং ইগনেসি লুকাসিউজ - এই দুজনের হাত ধরে ইউক্রেনের লুভিউ সিটিতে তৈরি হয় গ্যাস ল্যাম্প।

লম্বা বাদ্যযন্ত্র

ট্রেমভিটা। হ্যাঁ এই নামেই সে পরিচিত সমগ্র ইউক্রেন জুড়ে। কি এই ট্রেমভিটা?ট্রেমভিটা হল বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা সংগীত যন্ত্রের নাম। ইউক্রেনে জন্ম বিবাহ অথবা মৃত্যু সবেতেই বাজানো হয় এই যন্ত্র।

গভীরতম পাতাল রেল স্টেশন

বিশ্বের গভীরতম পাতাল রেল স্টেশন অবস্থিত ইউক্রেনের বুকে। স্টেশনের নাম - আর্সেনালনা।

বিবাহ রীতি

ইউক্রেনের অধিবাসীদের বিবাহ রীতিতেও আছে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। এখানকার পুরুষরা বিয়ের সময় কনের বা হাতের পরিবর্তে ডান হাতে আংটি পরান।

রুটির ঝুড়ি

বিশ্বের গম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে সামনের সারিতে অবস্থান করছে জেলেনস্কির ইউক্রেন। ইউক্রেনের উর্বর কালো মাটি গম চাষের আদর্শ। বিপুল গম উৎপাদনের জন্য ইউক্রেনকে ' রুটির ঝুড়ি' বলে অভিহিত করা হয়।

কৃষ্ণ সাগরের আকাশে আর যুদ্ধের ঘনঘটা। উত্তেজনার পারদ চড়ছে ক্রমাগত। মহাশক্তিধর রাশিয়া আক্রমণের তীব্রতা কত বাড়িয়েছে ততই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই দিচ্ছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে পোল্যান্ড সহ বেশ কিছু রাষ্ট্র। ভারতও ইউক্রেনের জন্য বাড়িয়ে দিয়েছে মানবিক সাহায্যের হাত। যুদ্ধের ফলাফল অজানা, তবে তা যে সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের জন্য ভয়ের বার্তাবহ এ কথা অস্বীকার এর উপায় নেই। আপাতত একটাই প্রার্থনা, আগ্রাসন নীতিতে লাগাম দিক রাশিয়া, ইউক্রেন ফিরুক তার পুরনো ছন্দে। গুপী-বাঘার সেই লাইনটা আজ যেন অমোঘ সত্যি - 

"ওরে রাজ্যে রাজ্যে পরস্পরে

দ্বন্দ্বে অমঙ্গল-

তোরা যুদ্ধ ক′রে করবি কি তা বল!"

 

More Articles