৩ দিনে ৩ ব্যাঙ্কের বিশাল পতন, সমস্ত বিশ্বকে নিয়েই ডুবতে বসেছে আমেরিকা?

America Bank Crisis: ২০০৮ সালের আর্থিক সঙ্কটের পর ২০২৩ এর এই ব্যাঙ্ক বিপর্যয় ফের এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

আমেরিকার আর্থিক ব্যবস্থা নিরাপদ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশ্বাস দিয়েছিলেন ঠিকই, তবে সে কথা যে কতখানি ভিত্তিহীন তা প্রমাণ করে সোমবার বিশ্বজুড়ে ব্যাঙ্কের শেয়ারের দাম হু হু করে কমে যায়। ভেঙে পড়ে মার্কিন ঋণদাতা সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক (SVB) এবং সিগনেচার ব্যাঙ্ক। গ্রাহকদের আমানত রক্ষার জন্য পদক্ষেপ করতে হয় কর্তৃপক্ষকে। তবে এই পদক্ষেপে আশ্বস্ত হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের আশঙ্কা, অন্যান্য ঋণদাতা ব্যাঙ্কগুলিও বসে যেতে পারে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী শেয়ারের দাম ব্যাপক কমে যাবে। সোমবারই, স্পেনের স্যান্টান্ডার এবং জার্মানির কমার্জব্যাঙ্কের শেয়ারের দাম ১০% এরও বেশি পড়ে যায়। ২০০৮ সালের পর লাগাতার এমন বড় ব্যাঙ্ক বিপর্যয় এই প্রথম।

এই বিপর্যয় থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে অর্থের জোগান রয়েছে বলে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে, ছোট ছোট একাধিক মার্কিন ব্যাঙ্কগুলি আরও খারাপ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই অস্থিরতার কারণেই আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ এখন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ধার্য করা সুদের হার বাড়ানোর পরিকল্পনাকে স্থগিত করেছে।

জো বাইডেন জানিয়েছিলেন, সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্কে অর্থ যারা জমা রেখেছেন, তাদের সমস্ত নগদ টাকা নিরাপদে থাকবে আর সরকার তাঁদের আমানত সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। তহবিলে নিজেদের 'অ্যাক্সেস' না থাকায় কর্মীদের এবং অন্যান্য পরিষেবা প্রদানকারীদের টাকা দিতে না পারার সঙ্কটে পড়েন অনেক গ্রাহক।

আরও পড়ুন- যেভাবে ব্যাঙ্ক বদলে দিতে পারে দেশের ভাগ্য! নোবেলজয়ী ত্রয়ীর এই ম্যাজিকে তাকিয়ে বিশ্ব

কেন সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্কের এই পতন?

সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে ঋণ প্রদান করে থাকে। মার্কিন নিয়ন্ত্রকরা শুক্রবার এই ব্যাঙ্কের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে। চড়া সুদের হারের কারণে ক্ষতির মুখে পড়া সম্পদ বিক্রির জেরে হওয়া ব্যাপক ক্ষতির মোকাবিলা করতে টাকা তোলার চেষ্টা করতে থাকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। এই সমস্যার কথা জানতে পেরেই ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা নিজেদের জমানো টাকা তুলে নিতে ভিড় করে, যার ফলে নগদের সঙ্কট দেখা দেয়। রবিবার মার্কিন কর্তৃপক্ষ নিউইয়র্কের সিগনেচার ব্যাঙ্কও দখল করে। এই ব্যাঙ্কের অনেক গ্রাহক ক্রিপ্টোতে জড়িত ছিলেন। জো বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই আমানতগুলি বাঁচাতে করদাতাদের কোনও অতিরিক্ত খরচ হবে না। গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে, মার্কিন নিয়ন্ত্রকরা এই সঙ্কটে জরুরি তহবিল ধার দেওয়ার নতুন উপায়ও ভাবছে।

সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক আমেরিকার ১৬তম বৃহত্তম ব্যাঙ্ক। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ গত ১৮ মাসে সুদের হার একাধিক বার বৃদ্ধি করেছে বলেই নাকি ব্যাঙ্কগুলি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে, দাবি বিশেষজ্ঞদের।

রাজনৈতিক পতন

২০০৮ সালের আর্থিক সঙ্কটের পর ২০২৩ এর এই ব্যাঙ্ক বিপর্যয় ফের এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষার জন্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ার জেরোম পাওয়েল জানিয়েছেন, এই পতনের একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ পর্যালোচনা করা হবে। আর জো বাইডেন বলেছেন, বিনিয়োগকারী এবং ব্যাঙ্কের নেতাদের এত সহজে ছেড়ে দেওয়া হবে না। "তারা জেনেশুনেই ঝুঁকি নিয়েছেন... এভাবেই পুঁজিবাদ কাজ করে,” বলেছেন বাইডেন।

২০২৪ সালে সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি প্রার্থী রিপাবলিকান সেনেটর টিম স্কট বলছেন, "প্রতিষ্ঠানগুলি অত্যধিক ঝুঁকি নেয়। সরকারি হস্তক্ষেপের সংস্কৃতি গড়ে তোলার ফলে সরকারের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে সবটাই, অথচ সরকারের কোনও ভূমিকাই থাকছে না সমস্যা মোকাবিলায়।"

বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের পরে, ব্যাঙ্কগুলির সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করা হয়েছিল। সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক এবং সিগনেচার ব্যাঙ্ক যে দু'টি ব্যাঙ্কই ধসে পড়েছে তাদের মধ্যে একটি বিষয় ছিল সাধারণ। এই দুই ব্যাঙ্কের ব্যবসায়িক মডেলগুলি একটি নির্দিষ্ট সেক্টরে খুব বেশি কেন্দ্রীভূত ছিল। এই দু'টি ব্যাঙ্কই এমন সম্পদ নিয়ে ব্যবসা করেছে যার মূল্য ক্রমবর্ধমান সুদের হারের চাপে পড়ে৷ তাহলে কেন এই বিষয়টি আগে থেকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হলো না? মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ার জেরোম পাওয়েল জানাচ্ছেন, যেহেতু বেশিরভাগ ব্যাঙ্কগুলির হাতেই প্রচুর নগদ রয়েছে, তাই অনুমান করা হয় যে বাকি ব্যাঙ্কিং খাতের ঝুঁকি কম। ছোট এবং মাঝারি ব্যাঙ্কগুলির উপর চাপ কমানো হয়নি।

 

More Articles