হরিণ, ছৌ, সঙ্গে প্রকৃতির অপার হাতছানি, দোলে অন্য বসন্তের ছোঁয়া পেতে চলে আসুন এখানে

Tourism Destination at Holi : নদীর কুলকুল স্বর আর নাম-না-জানা পাখিদের মিঠেমধুর সুর, বসন্তকে অন্যভাবে পেতে হলে আপনাকে যেতেই হবে দোলাডাঙা

ঘর থেকে কয়েক পা বাড়ালেই হাতছানি দিচ্ছে বিশাল বড় একটি লেক। দূরে দেখা যাচ্ছে গাছেদের সারি। সূর্যের প্রথম আলো সেই লেকের জল স্পর্শ করে ছুঁয়ে যাচ্ছে আপনার পা। ভোরের ঠাণ্ডা জল, সঙ্গে ফুরফুরে হাওয়ায় দোল খাচ্ছে পাশের জঙ্গলের গাছগুলি। লাল মাটির জঙ্গলে হেলেদুলে উড়ছে পলাশ। লাল সেই পলাশ কখনও কখনও আপনার দিকেও চলে আসছে। অজান্তেই কখন যে গুনগুন করে উঠবেন “রং যেন মোর মর্মে লাগে/ আমার সকল কর্মে লাগে”, বুঝতেও পারবেন না।

দোলপূর্ণিমা মানেই নিজের প্রিয়জনদের সঙ্গে রং খেলা, রবীন্দ্রসঙ্গীত, আবিরে আবিরে ছয়লাপ গোটা চত্বর। সেইসঙ্গে থাকে পলাশের রক্তিম হাতছানি। এদিকে বাঙালি মানেই পায়ের তলায় সর্ষে। ঘুরতে যাওয়ার একটা সুযোগ পেলেই হল। কিন্তু বসন্ত আর দোল এলেই সিংহভাগ বাঙালির মন টানে শান্তিনিকেতন, বোলপুরে। শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব, আবির খেলার একটা আলাদা আকর্ষণ তো রয়েইছে। সেইসঙ্গে রয়েছে লাল মাটি, বাউল গান আর গাছে গাছে সবুজ আর লালের হাতছানি। বাঙালিদের একাংশ আবার এই সময় পছন্দ করে দার্জিলিং-কালিম্পং। ঠাণ্ডা হাওয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা, তিস্তার হাত ধরেই বসন্তকে জড়িয়ে রাখা।

কিন্তু কেবল এসবই জায়গা রয়েছে? না, তা একেবারেই নয়। শহরের কোলাহল, নিত্যদিনের কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা কাটিয়ে কখনও তো ইচ্ছে করে, একটু প্রকৃতির কোলে যাই! সেখানে কোনও আওয়াজ থাকবে না, শহরের ভিড় থাকবে না; কেবল গাছের পাতার শিরশির আওয়াজ, নদীর কুলকুল স্বর আর নাম-না-জানা পাখিদের মিঠেমধুর সুর। তাহলে দোলের দিন বসন্তকে অন্যভাবে পেতে হলে আপনাকে যেতেই হবে দোলাডাঙা। যার নামেই দোল, সেখানে বসন্তের দোলা আসবে না, তা কী হয়!

আরও পড়ুন : ঘুরতে আর ঘুমোতে ভালোবাসেন? পৃথিবী জুড়ে সাড়া ফেলেছে ‘স্লিপ ট্যুরিজম’!

পুরুলিয়ার মানবাজার-১ ব্লকে কংসাবতী নদীর জলাধারের পাশেই রয়েছে এই ট্যুরিজম স্পট। এখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এই জায়গার দায়িত্ব নিয়েছে। শান্তিনিকেতনের মতো ভিড় নেই; কিন্তু সেই লাল মাটি, পলাশের সৌন্দর্য পরতে পরতে লেগে রয়েছে এখানে। শাল, সেগুন, সোনাঝুরির মাঝেই উঁকি দিচ্ছে পলাশ। সবুজের বিভিন্ন রংয়ের মাঝেই আগুনরঙা লাল আপনার চোখ জুড়াবেই। তবে শুধু এখানেই শেষ নয়। জলাধারে নৌকা নামিয়ে ঘুরেও আসতে পারেন। সেইসঙ্গে দোলাডাঙার জঙ্গলও ঘুরে দেখতে পারেন। কে জানে, হয়তো অজান্তেই আপনাকে স্বাগত জানাতে হাজির থাকতে পারে হরিণের দল!

Doladanga Nature

থাকবেন কোথায়?

বসন্তের দোলাডাঙা ঠিক যেন ক্যানভাসে আঁকা ছবি। কিংবা পোস্টকার্ডের ছবির মতো সুন্দর, ঝকঝকে, শান্ত। অফবিট ডেস্টিনেশন বলে এখনও সেভাবে ভিড় হয়নি এই জায়গায়। থাকার উপায় মূলত দুটো। চাইলে কাঠের গাছবাড়িতে থাকতে পারেন। সেখানে জানলা, দরজা খুললেই কপাল ছুঁয়ে যাবে পলাশের গোছা। অন্যদিকে চাইলে তাঁবু খাটিয়েও থাকতে পারেন। সমস্ত রকম ব্যবস্থা, আয়োজন সব ওখানকার মানুষরাই করে দেবেন। সেইসঙ্গে থাকবে পেটভরা খাবার। লেকের ধারে বসে ক্যাম্প-ফায়ার, গানবাজনাও করতে পারেন। পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্র সবকিছুর অভিজ্ঞতা একসঙ্গে এসে ধরা দেবে আপনার কাছে।

ঘোরার জায়গা

দোলাডাঙা নিজেই একটি অফবিট ডেস্টিনেশন। জঙ্গলের পাশাপাশি একদম কাছেই রয়েছে ডিয়ার পার্কও। সেইসঙ্গে এই জায়গা থেকে চলে যেতে পারেন আরও বেশকিছু বিখ্যাত ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনে। রয়েছে পুরুলিয়ার আরেক আকর্ষণ মুরগুমা। এছাড়াও ৭০ কিমির মধ্যে রয়েছে অযোধ্যা পাহাড়, মুকুটমণিপুর।

Doladanga camp

কীভাবে যাবেন?

বিভিন্নভাবে দোলাডাঙা যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। চাইলে বাসে কিংবা ট্রেনেও যেতে পারেন। বাসে গেলে কলকাতা থেকে বাঁকুড়া হয়ে মানবাজার, সেখান থেকে দোলাডাঙা ক্যাম্প। তবে কলকাতার এসপ্ল্যানেড থেকে মানবাজার অবধি সরাসরি বাসও পাওয়া যায়। ট্রেন হলে কলকাতা থেকে পুরুলিয়া কিংবা বাঁকুড়া নামবেন। সেখান থেকে দোলাডাঙা ক্যাম্পে যাওয়ার গাড়ি নিতে পারেন। বাঁকুড়া স্টেশনে যদি নামেন, তাহলে দোলাডাঙা ট্যুরিস্ট স্পটের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাহলে ওরাই গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবে। খরচও আপনার সাধ্যের মধ্যেই।

More Articles