পাহাড়ের কোলে বিলাসবহুল প্রাসাদ! ভারতের রাষ্ট্রপতির ছুটি কাটানোর রাজকীয় ঠিকানা

বছরে ২ বার বিলাসবহুলভাবে ছুটি কাটানোর সুবিধে পান রাষ্ট্রপতি। তিনি একবার সিমলার প্রাসাদে আসবেন না, এমন নজির বিরল।

বিরোধীদের প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে হারিয়ে দেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতি মনোনীত হয়েছেন এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। এখন দেশের রাষ্ট্রপতি রয়েছেন রামনাথ কোবিন্দ। তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৪ জুলাই। দেশের প্রথম আদিবাসী ও দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২৫ জুলাই তিনি শপথ নেবেন। সংবিধানের ৫২ নম্বর ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান। এই কারণে তাঁকে দেশের সাংবিধানিক প্রধানও বলা হয়। পদাধিকারবলে তিনি দেশের সমস্ত সামরিক ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হয়ে কী কী সুবিধে পাবেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। আগামী গ্রীষ্মে সিমলায় পাহাড়ের কোলে প্রাসাদের হাতছানি বোধহয় এড়াতে পারবেন না দ্রৌপদী মুর্মুও।

দেশের সাংবিধানিক প্রধানের জন্য শুধু রাইসিনা হিলসেই অঢেল আড়ম্বড়ের আয়োজন নেই, দিল্লির প্রচণ্ড গরমে তাঁর ডেস্টিনেশন হতেই পারে সিমলা। সেখানে পাহাড়ের কোলে প্রাসাদে তাঁর জন্য প্রাসাদোপম আয়োজন।

বছরে ২ বার বিলাসবহুলভাবে ছুটি কাটানোর সুবিধে পান রাষ্ট্রপতি। তিনি একবার সিমলার প্রাসাদে আসবেন না, এমন নজির বিরল। রামনাথ কোবিন্দও এসেছিলেন এই প্রাসাদে। এবার দ্রৌপদী মুর্মুকে হয়তো অচিরেই ডাক দেবে পাহাড়ের কোলে প্রাসাদের বিলাস আর আবহমানতা। সিমলার মাশোবরায় পাহাড়ের চূড়ায় রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ রিট্রিট তৈরি হয়েছিল ১৮৫০ সালে। ভূমিকম্প নিরোধক করার জন্য পুরো প্রাসাদটি কাঠের সঙ্গে পাথর দিয়ে তৈরি। ভাইসরয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় ১৮৯৫ সালে। বছরে অন্তত একবার রাষ্ট্রপতি এই প্রাসাদে আসেন। এবং তাঁর সঙ্গে পুরো অফিসটাই তুলে আনা হয় ওই সময়ের জন্য।

আরও পড়ুন: আজও আলোহীন গ্রাম! কোথা থেকে উঠে এসে রাইসিনা হিলের পথে দ্রৌপদী মুর্মু?

সবুজ পাহাড়ি মনোরম পরিবেশের মধ্যে নীল আকাশ মাথায় করে দাঁড়িয়ে বিশাল প্রাসাদ। সামনে বিশাল সবুজ লন, নুড়িবিছানো পথ। যেদিকেই ক্যামেরা ঘোরানো যায়, ধরা দেয় অসাধারণ মুহূর্তরা, যার নাম রাজকীয় চমক। স্বাধীনোত্তর ভারতে এটিই ছিল ভাইসরয়ের নিবাস। প্রাসাদের ভেতর পুরো কাঠের কাজ। রাজকীয় মহিমা। প্রাসাদের ভেতরের একটা অংশ শুধু জনগণের জন্য খোলা। তবে নিজে ঘুরে দেখলেই গোলোকধাঁধা। গাইড লাগবে। দেখার অনেককিছুই রয়েছে, যেমন- কাঠের কারুকাজ, লাইব্রেরি, সেমিনার রুম, ফোটো গ্যালারি। দেওয়ালজুড়ে পুরনো ভারতের কথা ও ছবি। পরাধীন ভারতের বহু ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল এখানেই। স্বাধীনতার পর এই প্রাসাদের নাম হয় রাষ্ট্রপতি নিবাস। সিমলা রিজ টপ থেকে হাজার ফুট উঁচু, 'দ্য রিট্রিট' একটি মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। স্থাপত্য নিদর্শন এবং স্থানটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য 'দ্য রিট্রিট'-কে সিমলার একটি অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা হিসেবে গড়ে তুলেছে। তাই ভ্রমণপিপাসুরা সিমলা এলে, তাঁদের ডেস্টিনেশন লিস্টে এই প্রাসাদের নাম লিখে রাখেন। গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে এখানে আসেন রাষ্ট্রপতিরা। বারে বারে তাঁদের মুগ্ধ করে সবুজ পাহাড় আর মাশোবরার আপেল বাগান। বলাই বাহুল্য, দ্রৌপদী মুর্মুও হয়তো তাঁর পূর্বসূরিদের পথে হেঁটে একবার পাহাড়ের ডাকে সাড়া দেবেন।

এছাড়া বছরের যে-কোনও সময় দেশের সাংবিধানিক প্রধানের ঠিকানা হতেই পারে হায়দরাবাদের রাষ্ট্রপতি নিলয়ম। এটি একটি একতলা ভবন। কিন্তু বিলাসের অঢেল আয়োজন। এখানে ঘর রয়েছে ১১টি। একটি ডাইনিং হল, সিনেমা হল, দরবার হল, মর্নিং রুম, ড্রয়িং রুম রয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি বছরে অন্তত একবার নিলয়ম পরিদর্শনে আসন।

রাষ্ট্রপতির প্রধান আবাসন যেমন দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবন, তেমনই রাষ্ট্রপতির দক্ষিণ ভারতের বাড়ি রাষ্ট্রপতি নিলয়ম। প্রোটোকল মেনে প্রতি বছর শীতকালে এখানে সপরিবারে কাটিয়ে যান ভারতের রাষ্ট্রপতি। সেই ১৯৫৬ সাল, রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের সময় থেকে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। দেশের উত্তর-দক্ষিণের সংহতি বজায় রাখতেই এই বাৎসরিক সফর রাষ্ট্রপতির। ডিসেম্বরের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় তিনি সফর করেন দক্ষিণের রাজ্যগুলি। উদ্বোধন-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। দেখা করেন বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে। স্থানীয় মানুষের সুখ, দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা বোঝার চেষ্টা করেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রতিভা পাতিলও গিয়েছিলেন। এবার হয়তো তাঁদের উত্তরসূরি দ্রৌপদী মুর্মুও সেই পথ অনুসরণ করবেন।

দিল্লি থেকে তাঁর গন্তব্য হতেই পারে সিমলা, হায়দরাবাদ কিংবা অন্য কোনও দেশ। তবে রাষ্ট্রপতি ভবনের আয়োজন কিন্তু অঢেল। কারণ, এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রপতি ভবন। এই ভবনটি ৩৩০ একর জমির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। মোট ৩৪০টি ঘর রয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবনে। চারতলা বাড়িটির ২.৫ কিলোমিটার করিডর এবং ১৯০ একর বাগান। ১৯২৯ সালে এই ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি ছাড়াও রাইসিনায় রয়েছে তাঁর আধিকারীনিবাস, স্বাগত কক্ষ, অতিথিশালা এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়। এছাড়া রাষ্ট্রপতি ভবনে রয়েছে বিশালাকার উদ্যান, অঙ্গরক্ষক এবং কর্মচারীদের জন্য কক্ষ। রয়েছে আস্তাবলও। রাষ্ট্রপতি ভবনের ভেতর রয়েছে এমন কিছু জায়গা, যা সাধারণ দর্শকরা টিকিট কেটে ঘুরে দেখার সুযোগ পান। তার মধ্যে রয়েছে মিউজিয়াম এবং মুঘল গার্ডেন।

ভারতের রাষ্ট্রপতি একটি কালো রঙের মার্সিডিজ গাড়ি, S600 (W221) পুলম্যান গার্ড ব্যবহারের জন্য পান। রাষ্ট্রপতির গাড়িটিকে দেশের সবচেয়ে নিরাপদ গাড়ি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বোমা, বিস্ফোরণ বা অন্য রাসায়নিক হামলা আটকাতে সক্ষম এই গাড়িটি। সরকারি সফরের জন্য তিনি পান একটি সুসজ্জিত লিমুজিন। এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান বি-৭৭৭ হলো ভারতের রাষ্ট্রপতির বিমান। বিমানটির অত্যাধুনিক ইন্টিরিয়র রয়েছে এবং এটি জ্বালানি-সাশ্রয়ী। এটি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে তৈরি। অত্যন্ত উন্নত বিমানটি নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র-হুমকি মোকাবিলা করতে সক্ষম।

রাষ্ট্রপতি প্রতি মাসে প্রায় ৫ লাখ টাকা বেতন পান। সেই সঙ্গে আরও বেশ কিছু ভাতা পান তিনি। যার মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধে, হাউসিং অ্যালাউয়েন্স। প্রতি বছর ভারত সরকারের ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ হয় রাষ্ট্রপতির হাউসিং, কর্মী, খাবার, অতিথি আপ্যায়ণ-সংক্রান্ত অতিরিক্ত ব্যয় বহনে।

রাইসিনা হিলসের বর্তমান বাসিন্দা শুধু যে রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন এইসব সুবিধে পাবেন, তা নয়, এখান থেকে অবসরের পরেও পাবেন বাংলো। সারা জীবন বিনামূল্যে বিমান ও ট্রেনে চড়ার সুযোগ দেবে সরকার। দেশের সাংবিধানিক প্রধান বলে কথা!

 

More Articles