গোয়া যাওয়ার খরচে বিদেশ সফর, পুজোয় গন্তব্য হোক থাইল্যান্ড

এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক, থাইল্যান্ডে গেলে আপনি কোথায় কোথায় ঘুরতে পারেন? জেনে নেওয়া যাক, দেশের অসংখ্য দর্শনীয় জায়গাগুলির মধ্যে কোন জায়গাটি আপনার চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।

কথায় আছে, বাঙালির পায়ের তলায় সরষে, এক জায়গায় তারা নাকি বেশিদিন থাকতে পারে না। তাই তো পশ্চিমবঙ্গের হাতে গোনা যে ক'টা হলিডে ডেস্টিনেশন রয়েছে, তাতে প্রায় সব সিজনেই লোকজনদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। সপ্তাহের শেষে হোক কিংবা শুরু, দু'-একদিন ছুটি ম্যানেজ করতে পারলেই দূরে কোথাও না হোক, কাছে-পিঠেই কোথাও একটা ঘুরতে বেড়িয়ে পরে তারা। কিন্তু গন্তব্য যদি হয় বিদেশের কোনও জায়গা, তবে তো আর কথাই নেই! কিন্তু বিগত দু’বছর ধরে শুধু বাঙালি কেন যে কোনও ভ্রমণপিপাসু মানুষের প্রাণই এককথায় ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল। কোভিড অতিমারীর কারণে বেশিরভাগ দেশেই পর্যটকদের জন্য তাদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে, বর্তমানে সেসব নিয়মকানুন বেশ অনেকটাই শিথিল হয়েছে। বিশ্বের যেসব দেশের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তারা নিজেদের দুয়ার খুলেছে সবার আগে। অনেক দেশে তো এখন আর আরটিপিসিআর পরীক্ষার নিয়মটুকুও নেই।

অবস্থা খানিক সামলে উঠলেও, বেশিরভাগ মানুষেরই কিন্তু কোভিডের কারণে উপার্জনে খানিক ভাটা পরেছে। তবে চিন্তার কোনও কারণ নেই, বিদেশে ঘুরতে গেলেই যে প্রচুর পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন, তেমনটা কিন্তু একেবারেই নয়। ভারত থেকে বাইরের যেসব দেশে ঘুরতে গেলে পকেটে বিশেষ টান পড়বে না, তার মধ্যে অন্যতম হলো থাইল্যান্ড। অসংখ্য ছোট ছোট মনোরম সমুদ্রসৈকত, বিভিন্ন স্বাদের স্ট্রিট ফুড, ঐতিহাসিক স্থান এবং ভাসমান বিলাসবহুল সব ভিলা– সব মিলিয়ে থাইল্যান্ড যেমন সদ্য-বিবাহিত দম্পতির নিরিবিলিতে সময় কাটানোর জন্য আদর্শ স্থান, তেমনই আবার সদলবলে ঘুরতে আসা দামাল ছেলেমেয়েদের পারফেক্ট হলিডে ডেস্টিনেশন।

চলুন এবার এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক, থাইল্যান্ডে গেলে আপনি কোথায় কোথায় ঘুরতে পারেন? জেনে নেওয়া যাক, দেশের অসংখ্য দর্শনীয় জায়গাগুলির মধ্যে কোন জায়গাটি আপনার চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।

আরও পড়ুন: রহস্যময় শিশু, কথা বলা পুতুল, এই জঙ্গলগুলিতে রয়েছে অলৌকিকের হাতছানি

ব্যাংকক
যাঁরা খানিক হলেও বিদেশের মাটিতে পা রেখেছেন, তাঁদের বেশিরভাগই হয়তো ইতিমধ্যেই ঘুরে ফেলেছেন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। টলিউড থেকে বলিউড, কত-শত সিনেমার শুটিং হয়েছে এখানেই। ব্যাংককের গগনচুম্বী টাওয়ার, আধুনিক স্থাপত্য, আর্ট গ্যালারি জাদুঘরের কারণে যেমন জনপ্রিয়, তেমনই আবার জনপ্রিয় ভাসমান বাজার অথবা শপিং-এর জন্য। স্কাই ট্রেন এবং পাতাল ট্রেনে ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হলে কিন্তু আপনাকে একবার আসতেই হবে থাইল্যান্ডের রাজধানীতে। শুধু কি তাই! ব্যাংকক কিন্তু তার স্ট্রিট ফুডের জন্যও বিশেষভাবে বিখ্যাত। তাই শুধু ভ্রমণপিপাসু নয়, ভোজনরসিক মানুষদেরও একটি আদর্শ ঘুরতে যাওয়ার জায়গা হয়ে উঠতে পারে এই ব্যাংকক।

ফুকেট
এই দেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ হল ফুকেট। মলদ্বীপের মতোই ফুকেট হলো আদর্শ হানিমুন স্পট। অনেকেই, যাঁরা অর্থের কারণে মালদ্বীপ যেতে পারেন না, তাঁরা কিন্তু একান্তে সময় কাটানোর জন্য আশ্রয় নেন এই দ্বীপে। তবে শুধু একান্তে সময় কাটানো নয়, বর্তমান ফুকেটে উপভোগ করার মতো অনেককিছুই রয়েছে। সারা রাত ধরে এই দ্বীপের বিভিন্ন বিচগুলিতে চলে বিচিত্র সব বিনোদন অনুষ্ঠান। মৌসুমী বায়ুর স্থান হিসেবে এই দ্বীপগুলি বেশ আরামদায়কও বটে। জেট স্কেটিং, হাইকিং, ফিশিং ইত্যাদির পাশাপাশি আপনরা চাইলে রেস্টলিং দেখার অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করতে পারেন। বর্তমানে থাইল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় জায়গা হিসেবে পরিচিতি লাভ করায় এই দ্বীপে বিশ্বের প্রায় সমস্তরকম খাবারের ব্যাবস্থাও রয়েছে।

পাটায়া
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে ১০০ মাইলের মধ্যে অবস্থিত পাটায়া একটি অন্যতম আকর্ষণীয় সমুদ্রসৈকত। ফুকেটের পরেই পাটায়া হানিমুনের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তবে মদ্যপান এবং নারীর সান্নিধ্যের কারণে এই অঞ্চলকে অনেকে ‘পাপের শহর’ বলেও চিহ্নিত করে থাকেন এবং সেই কারণেই প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এই স্থানে ঘুরতে যেতে নিষেধও করে থাকেন অনেকেই। সমুদ্রসৈকতগুলি এখানে অতটা সুন্দর না হলেও, এই অঞ্চলের সন্ধ্যার সূর্যাস্ত আপনার মন কেড়ে নেবে নিশ্চিত। সমুদ্রসৈকত ছাড়াও আপনি এই শহরে দেখতে পাবেন কাঠের তৈরি ‘স্যাংকচুয়ান অব দ্য ট্রুথ’ মূর্তি। এই শহরে ঘুরতে গেলে নানারকম ফুল এবং ঝরনা-বেষ্টিত ‘নুচ বোটানিক্যাল গার্ডেন’ দেখতে একদম ভুলবেন না যেন।

আয়ুথায়া
বর্তমানে ইউনেসকো-র আওতাভুক্ত এই দেশের সবথেকে প্রাচীন শহর হলো আয়ুথায়া। সারি সারি বৌদ্ধ মন্দিরগুলি আপনাকে নিয়ে যেতে পারে আজ থেকে বহু বছর আগে। যেসব মানুষরা ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণে বেশি ইচ্ছুক, তাদের জন্য সুযোগ্য হতে পারে এই আয়ুথায়া শহর।

ক্রাবি
থাইল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় ট‍্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন হলো ক্রাবি। ফুকেট বিমানবন্দর থেকে কয়েক ঘণ্টা দূরেই অবস্থান করছে এই অঞ্চলটি। থাইল্যান্ডের মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত এই স্থানটিতে দেখা মিলবে একটি সুন্দর দ্বীপেরও। এই দ্বীপের সৌন্দর্যকে বিচার করেই একে ‘সৌন্দর্যের আধার’ হিসাবে তকমা দেওয়া হয়েছে। এই স্থানে দেখা মিলবে ম্যানগ্রোভ অরণ্যর, আবার আপনি যদি পশুপ্রেমিক হয়ে থাকেন তবে থাইল্যান্ডের এই জায়গায় অবশ্যই একবার অন্তত ঘুরে যাবেন। ক্রাবিতে ঘুরতে এলে ‘মায়া বে’ পয়েন্টে একবার ঢুঁ মেরে যেতে একদম ভুলবেন না যেন।

কাঞ্চনা বুরি
থাইল্যান্ডের পশ্চিমে অবস্থিত এই কাঞ্চনা বুরি। এই অঞ্চলের মূল আকর্ষণ হলো কুয়াই নদীর ওপরে ভাসমান বিলাসবহুল রিসর্টগুলি। এছাড়াও রয়েছে বিশালাকার জলপ্রপাত। কাঞ্চনা বুরিতে রয়েছে জনপ্রিয় ‘ডেথ রেলওয়ে’, যার নির্মাণ ইতিহাস জানতে গেলে আপনাকে একবার ভ্রমণ করতেই হবে এই জায়গায়। এই অঞ্চলে অবস্থিত ‘প্রা থাট’ নামক গুহাটিকে আবার বলা হয়ে থাকে শান্তির গুহা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি এই শহরের নানা স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ইতিহাসও কিন্তু আপনাকে সমানভাবে আকর্ষিত করতে পারে।

কো চেঞ্জ
থাই ভাষায় এই অঞ্চলকে বলা হয় এলিফ্যান্ট দ্বীপ, কারণ এই দ্বীপের আকৃতি নাকি খানিকটা হাতির মতো। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষ উন্নত না হওয়ার কারণে এই বিশাল দ্বীপটি ফুকেটের চেয়ে খানিক শান্ত এবং নির্জন। এই অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ভাগে অবস্থিত ক্রান্তীয় জঙ্গল এবং বিশালায়তন জলপ্রপাতগুলি ট্রেক করার জন্য আদর্শ। যারা সামুদ্রিক উপকূলে নিরিবিলিতে খানিকটা সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য থাইল্যান্ডের এই অংশটি বেশ উপভোগ্য হতে পারে।

কোহ ফাঙ্গান
পার্টি-প্রেমী মানুষদের জন্য আরও একটি জনপ্রিয় জায়গার নাম হল কোহ ফাঙ্গান। ‘হাদ রিন’ নামক একটি স্থানে মূলত পার্টি করার জন্য বিখ্যাত। হইহুল্লোড় যেখানে রয়েছে, সেখানে পেটপুজোর বন্দোবস্ত থাকবে না, তা কী হয়! এই অঞ্চলে ছড়ানোছিটোনো দ্বীপগুলোতে নানা স্বাদের খাবার পাবেন সুলভ মূল্যে এবং হাতে সময় থাকলে বেড়িয়ে আসতে পারেন বিভিন্ন থাই রান্নার সেন্টারগুলি থেকে, যেখানে সযত্নে অথেন্টিক থাই রান্না শেখানো হয়ে থাকে। এছাড়াও এইখানে সারারাত ধরে বাজার বসার রেওয়াজ রয়েছে, যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।

থাইল্যান্ডের আরও একটি বিশেষ দিকে আলোকপাত না করলেই নয়, সেটি হলো এখানকার স্পা ক্লিনিক। এখানকার ঐতিহ্যবাহী মাসাজের রোগ নিরাময়ের ইতিহাস রয়েছে, মূলত চিন এবং ভারতেরই কিছু ওষুধ এখানে মাসাজের মাধ্যমে থেরাপি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ব্যাংকক, ফুকেট, বফুট বে ইত্যাদি কিছু জায়গায় গোটা বিশ্ব থেকে লোক আসে এই স্পা ট্রিটমেন্টের পরিষেবা গ্রহণের জন্য।

থাইল্যান্ডে মূলত তিনটি ঋতু বিরাজ করে, বর্ষা, শীত এবং গ্রীষ্ম। শীতকাল সমগ্র থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। সেইসময় দেশের তাপমাত্রা কখনও কখনও ৩০ ডিগ্রি ছুঁলেও তা বেশ আরামদায়কই বটে। গ্রীষ্মকাল আবার উপযুক্ত থাইল্যান্ডের সমুদ্র-উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে ঘুরতে যাওয়ার জন্য। বর্ষাকালে এই দেশের উদ্দেশে পা না বাড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

More Articles