যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের ল্যাব থেকে সত্যিই ভয়াবহ জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে?

এখন ও যুদ্ধ থামেনি ইউক্রেন- রাশিয়ার। একাধিক শান্তি বৈঠকের সম্ভাবনা তৈরি হলেও নির্দিষ্ট কোনও সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসেনি। অন্যদিকে ইউক্রেনের একের পর এক স্থানে ক্রমাগত গুলি বোমা বর্ষণ করে চলেছে রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের ল্যাবরেটরিতে থাকা যাবতীয় শক্তিশালী জীবাণু এবং জৈব অস্ত্র ধ্বংস করে দেওয়ার পরামর্শ দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাঁদের নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কথা ভেবে যেন জরুরি ভিত্তিতে যাবতীয় প্যাথোজেন ধ্বংস করে দেওয়া হয়। নইলে কোনও অসাবধানতা বশে যদি এই শক্তিশালী জীবাণু বাইরে ছড়িয়ে পরে তাহলে আবার বিশ্বকে নতুন কোনও বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। এখনও করোনা অতিমারির ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি পৃথিবী। এই পরিস্থিতিতে আবার যদি কোনো ভাইরাস থেকে বিশ্ব আক্রান্ত হয় তবে তা মানবজাতির জন্য নতুন বিপদ তৈরি করবে।

ইউক্রেনের একাধিক ল্যাবরেটরি তে জীবাণুর চরিত্র নিয়ে গবেষণা হয়। সেই গবেষণায় ইউক্রেন সরকার কে সহযোগিতা করে মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

রাশিয়ার এই ক্রমাগত আক্রমণে ইউক্রেনের প্রায় সব স্থানই আক্রান্ত। যে কোনও মুহূর্তে আঘাত আসতে পারে ল্যাবরেটরির ওপর। বোমার আঘাতে যদি এই ল্যাবগুলি ধ্বংস হয় এবং সেখানে গবেষণারত কোনও স্থান থেকে যদি এই জীবাণু নির্গত হয় তবে তা মানব সভ্যতার জন্য মোটেই সুখকর হবে না।

বায়োসিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেনের আকাশে এখন অনবরত রাশিয়ান সামরিক বিমান চলাফেরা করছে। ইউক্রেনের প্রায় প্রতিটি শহরেই বোমার শব্দ শোনা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রোগ-সৃষ্টিকারী রোগজীবাণুর থেকে ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়েছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের আগে এবং এই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইউক্রেনের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করে চলেছে। ‘হু’ ঠিক কী ধরনের কাজ করছে ইউক্রেনে এই প্রসঙ্গে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইমেলে জানিয়েছে, ‘এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যাতে ইউক্রেনের ল্যাবগুলি থেকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে জীবাণু ছড়িয়ে না পরে সেই বিষয়ে আমরা ইউক্রেনের স্বাস্থ্য দপ্তুরকে সতর্ক থাকতে বলেছি। এই বিষয়ে ইউক্রেন সরকারকে আমরা যাবতীয় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত’। এই কাজেরই অংশ হিসাবে, ‘হু’ ইউক্রেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং অন্যান্য সংস্থাকে কোনও সম্ভাব্য ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে যাবতীয় রোগজীবাণু ধ্বংস করার জন্য আবেদন জানিয়েছে।

যদিও ইউক্রেনের পরীক্ষাগারগুলিতে ঠিক কী ধরনের প্যাথোজেন বা বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে সে সম্পর্কে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেয়নি। পাশাপাশি ইউক্রেন আদৌ ‘হু’ র পরামর্শ মানবে কিনা সেই বিষয়ে ইউক্রেন সরকার কোনও মন্তব্য করেনি। 

এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া রাষ্ট্রপুঞ্জে ১৫-সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠক ডেকেছে। রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে এসেছে মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তায় ইউক্রেন সরকার নিজেদের দেশে ল্যাবরেটরি গুলিতে জৈব অস্ত্র নিয়ে গবেষণা করছে। রাশিয়ার এই অভিযোগ ইউক্রেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার অস্বীকার করেছে। আবার রাশিয়া ও এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধি ইজুমি নাকামিতসু রাশিয়ার দাবিকে নস্যাৎ করে জানিয়েছেন ইউক্রেনে এমন কোনো জৈবিক অস্ত্র কর্মসূচি চলছে না যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা তৈরি করবে। এমনকি জৈব রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রস্তাবে ও ইউক্রেন সমর্থন করেছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জ সরাসরি জানিয়েছে ‘হু’ ইউক্রেনের এমন কোনও কার্যকলাপ সম্পর্কে সঠিক কোনও প্রমাণ পায়নি। এই পরিস্থিতিতে যদি ইউক্রেনের পরীক্ষাগারে এমন কোনও জৈব রাসায়নিক পরীক্ষা চালায় তা নিশ্চিত ভাবেই আন্তর্জাতিক শান্তি চুক্তিকে লঙ্ঘন করবে।

রয়টার্সকে পাঠানো ইমেলের উত্তরে ‘হু’ কেবলমাত্র ইউক্রেনের জনস্বাস্থ্য পরীক্ষাগারের কথা উল্লেখ করেছে। এমনকি এই পরিস্থিতিতে ‘হু’ সব পক্ষকেই সহযোগিতার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও রকমের টেকনিক্যাল সহায়তা ‘হু’ করবে। 

এমনিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি সরগরম। এই পরিস্থিতিতে জৈব রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের তরজা নিঃসন্দেহে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

More Articles