ইউক্রেনে কেন প্রাণ গেল ২১ বছর বয়সি ভারতীয় ছাত্রের! প্রশ্ন উঠছে সরকারি সদিচ্ছা নিয়েই

ক্ষতি এড়ানো গেল না। মঙ্গলবার খারকিভের প্রশাসনিক দপ্তরে মিসাইল হামলায় ঝরে গেল তরতাজা এক ভারতীয় প্রাণ।

মৃত ছাত্রের নাম নবীন শেখারাপ্পা জ্ঞানগউধর। পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ ন্যাশানাল মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তিমবর্ষের ছাত্র ছিলেন নবীন। কর্ণাটকের হাভেরী জেলার বাসিন্দা ছিলেন এই যুবক।বয়স মাত্র ২১। বাকী বন্ধুরা হোস্টেলে থাকলেও খারকিভে গভর্নরের বাসভবনের পিছনে একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন নবীন। যুদ্ধ শুরুর দিন থেকেই অন্যান্য ছাত্রদের সাথে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাঙ্কারে। কিন্তু ফুরিয়ে এসেছিল খাবার। খাবার কিনতেই লাইন দিয়েছিলেন স্থানীয় এক মুদি দোকানের সামনে। কিন্তু আর ফেরা হলো না নবীনের।

খারকিভে একটি বেসরকারি সংস্থার তরফে নিযুক্ত ভারতীয় পড়ুয়াদের কো-অর্ডিনেটর পূজা প্রহরাজ জানিয়েছেন, 'আজ সকালে নবীন খাবার কিনতে বেড়িয়েছিল। গভর্নরের বাসভবনের কাছে এক মুদি দোকানে এক-দুঘন্টা লাইনেই দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময়েই গভর্নরের বাসভবনে রুশ যুদ্ধবিমানের হামলায় নিহত হয় নবীন। ' পূজা আরও জানিয়েছেন নবীনের মৃত্যুর খবর জানা যায় যখন এক ইউক্রেনীয় মহিলা তাঁর ফোন ধরেন। ওই মহিলা জানান, যে এই ফোনের মালিককে এখন মর্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।  তবে নবীনের বন্ধু শ্রীধরণ গোপালকৃষ্ণের দাবি,’রুশ সেনাবাহিনী স্থানীয় নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকেন ,তাতেই মৃত্যু হয় নবীনের।‘

বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি মঙ্গলবার  টুইট করে জানান, “ গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছি  আজ সকালে খারকিভে বিস্ফোরণের ফলে এক ভারতীয় পড়ুয়া প্রাণ হারিয়েছে। মন্ত্রণালয়য়ের তরফ থেকে তাঁর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।“ নবীনের বাবার সাথে ফোন করে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও টুইট করে শোকপ্রকাশ করেছেন নবীনের মৃত্যুতে।    

সকালেই কর্ণাটকের বাড়িতে ফোন করে বাবা শেখর গৌড়া ও ঠাকুরদার সাথে কথা বলেন নবীন। বাবা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যদি ভারতের জাতীয় পতাকা থাকে তবে বাড়ির সামনে টানিয়ে রাখতে।কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীয়ূষ গোয়াল এই পরামর্শই দিয়েছেন। আরও বলেছেন রুশ বা ইউক্রেনীয় সেনা কেউই ভারতীয়দের ক্ষতি করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নবীন বাবকে জানিয়েছিল, খারকিভ শহরের যে বাঙ্কারে নবীন ও তাঁর বন্ধুরা আশ্রয় নিয়েছে সেখান থেকে মাত্র ২ শতাংশ মানুষই শহর ছেড়ে যেতে পেরেছেন।তবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। সেদিন সকাল ৬টা ও ১০ টা এবং দুপুর ১ টা নাগাদ তিনটি ট্রেন ছাড়বে। জবাবে বাবা বলেছিলেন, শহর থেকে ৪০-৫০ কিলোমিটার দূরে যেতে পারলেই কোনো ব্যবস্থা হতে পারে। তবে পরিস্থিতি বুঝেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেন ছেলেকে। এরপরেই খাবার কিনতে বেরিয়ে যায় নবীন।কিন্তু সে সময়ই পেলনা ভারতীয় পতাকা টানানোর। এই মুহূর্তে খারকিভ ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা রয়েছে নবীনের মৃতদেহ। তাঁর দেহ দেশে ফেরানোর জন্য ইউক্রেনের সাথে কথা বলেছে ভারত।

নবীনের মৃত্যুর পরই নয়াদিল্লির রুশ ও ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিক্রিয়া জানান হয় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, “ অবিলম্বে খারকিভ-সহ বিভিন্ন শহরে আটকে থাকা পড়ুয়াদের ইউক্রেনের বাইরে যাওয়ার জন্য ‘সেফ পাসেজ’-এর ব্যবস্থা করে দেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে।মঙ্গলবার যুদ্ধের ষষ্ঠ দিনে রাশিয়া হামলার অভিঘাত বাড়িয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার ভারতীয় পড়ুয়া আটকে রয়েছে ইউক্রেনে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনের শহরগুলি পেরিয়ে সীমান্তে পৌঁছতেই পারছেন না অনেক পড়ুয়া।

সমাজমাধ্যমে একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে ভারত সরকারের কাছে উদ্ধারের জন্য করুণ আর্জি জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে বিজেপি সরকারের ‘ অপারেশন গঙ্গা’ নিয়েও। বিদেশ মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য বলছে, প্রায় ২০০০০ ভারতীয়দের মধ্যে মাত্র ৯০০০ মানুষকেই এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। খারকিভ ও কিভ শহরে ভয়াবহ  যুদ্ধ পরিস্থিতিই মূল বাধা হয়ে উঠেছে উদ্ধারের ক্ষেত্রে।উদ্ধার কাজে গতি না এলে যে আরও এমন একাধিক তরতাজা প্রাণ হারাতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অতীতে বহুবার বিদেশ থেকে মসৃণভাবে ছাত্রদের এ দেশে ফেরত আনা গিয়েছে বিপর্যয়ের সময়ে। ১৯৯০ সালে চন্দ্রশেখরের সাতমাসের মন্ত্রীত্বের মধ্যেই কুয়েতে ইরাক আক্রমণ শানায়। সেই সময়ে  অন্তত ১ লক্ষ ৭০ হাজার ছাত্রকে দেশে ফিরিয়ে আনা গিয়েছিল। এখন, এত অত্যাধুনিক পরিকাঠামোর মধ্যেও কেন এই ব্যবস্থা মসৃণভাবে করা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্নের জবাব চাক ভারতীয়রাই। 

More Articles