রোগের মতোই ভয়ানক 'ছোঁয়াচে'! একজনের দেখলে অন্যদেরও কেন হাই ওঠে, জানেন?

Yawning is Contagious : হাই তোলার আওয়াজ শুনলেও একই অবস্থা। এই মুহূর্তে যখন এই লেখাটি পড়ছেন, ছবিটি দেখেও আপনার হাই পাবে।

এই স্টোরিটি যখন পড়ছেন, নিশ্চিত কেউ না কেউ ছবিটি দেখামাত্রই হাই তুলতে শুরু করেছেন। কিংবা পড়তে পড়তে হাই উঠছে বারবার। পৃথিবীর যে দেশেরই মানুষ হন না কেন, যে ভাষা-জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের হন না কেন, এই একটা ব্যাপার থেকে আমাদের রেহাই নেই। হাই তুলতে শুরু করলে যেন থামতে আর চায় না। কিন্তু একটা জিনিস নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন। ঠিক যে মুহূর্তে হাই তুলছেন, তখন একবার ভালো করে চারিদিকটা দেখে নিন। যদি আপনার সঙ্গে এক বা একাধিক মানুষ থাকেন, তাহলে তাঁদেরও হাই উঠবে! এমনকী, হাই তোলার ছবি দেখলে, বা ফোনের ওপার থেকে হাই তোলার আওয়াজ শুনলেও একই অবস্থা। এই মুহূর্তে যখন এই লেখাটি পড়ছেন, ছবিটি দেখেও আপনার হাই পাবে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, কেন এমন হয়? একজনের হাই উঠলে সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশের মানুষেরও ওঠে কেন? এটা তো কোনও জীবাণু সংক্রমণের মতোই ছোঁয়াচে! এমন ‘ছোঁয়াচে’ হাইয়ের পেছনে কারণ কী? বহুদিন ধরে বহু মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন। সেখানেও নানা মুনির নানা মত। তর্ক, ঘটনা, বিতর্ক ইত্যাদি নানা কিছুর মাঝে আসল কারণটি খোঁজার কাজে লেগে থাকি আমরা। সত্যিই তো, কেন হাই তোলা এত ছোঁয়াচে?

তার আগে ছোট্ট করে জানা যাক, হাই কেন ওঠে। এখানেও ডাক্তারদের মধ্যে মতভেদ আছে। একাংশের মতে, শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে হাই ওঠে। তখন একসঙ্গে অনেকটা বেশি পরিমাণে বাতাস বুকের ভেতর ভরে নেওয়া যায়। আবার অনেকের মতে, অতিরিক্ত ক্লান্তির জন্য হাই ওঠে। কাজ করতে করতে, খাটনিতে আমাদের মস্তিস্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। গরম হয়ে যায়। তাকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্যই এই হাই তোলা। সেইসঙ্গে ঘুমও পায়। অনেক ডাক্তারই বলেন, হাই তোলার সময় মুখে হাত রাখতে। কারণ, তা হলে মুখের ভেতরে থাকা জীবাণু সহজে ছড়াতে পারবে না।

কিন্তু হাইয়ের এমন সংক্রমণের কারণ? বহুদিন ধরে এটা নিয়ে গবেষণা চলছে। গবেষকদের মতে, হাইয়ের এমন ‘ছোঁয়াচে’ স্বভাবের কারণ খুঁজতে গেলে ফিরে যেতে হবে অনেকটা বছর আগে। তখনও সভ্যতা এমন পর্যায় পৌঁছয়নি। মানুষ তখন সভ্যতার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়, গুহায় বসবাস করছে। একসঙ্গে, দলবদ্ধভাবে সমস্ত কাজ করত তারা। জিনগতভাবে সেই স্বভাবটা মানুষের মধ্যে থেকে গিয়েছে। আজও মানুষ দলবদ্ধ জীব। আর এখানেই লুকিয়ে আছে হাইয়ের রহস্য, এবং জড়িয়ে রয়েছে মিরর নিউরোনের ভূমিকা।

কী সেটা? একজনকে কষ্ট পেতে দেখলে আরেকজন মানুষও কষ্ট অনুভব করে। ধরা যাক, আপনার বাড়িতে কারও হাতে ছ্যাঁকা লাগল। আপনার না লাগলেও, মনে হবে যেন সেই ব্যথা আপনিও অনুভব করছেন। মানুষের জিনের ভেতরেই এই ‘সমব্যথী’ স্বভাবটি ঢুকে গিয়েছে। আর এই গোটা ব্যাপারটার জন্য দায়ী বিশেষ একপ্রকার নিউরোন, যাকে ‘মিরর নিউরোন’ বলা হয়। শুধু মানুষ নয়, শিম্পাজিদের মধ্যেও এটি দেখা যায়। এই নিউরোনের ফলেই মানুষের এই সঙ্ঘবদ্ধভাবে হাই তোলা। এর মাধ্যমে এটাও বোঝানো হয় যে, ‘আমার ঘুম পেয়েছে। এবার উঠলাম।’ সেই আদিম যুগ থেকে এই চর্চা মানুষের মধ্যে গেঁথে গিয়েছে। আর তা জিনের অংশ হয়ে গিয়েছে। তাই এই ছোঁয়াচে হাইও মানুষের জিনের মধ্যে ঢুকে আছে দৃঢ়ভাবে।

More Articles