জন্মেছেন হাত-পা ছাড়াই, ক্যারাটের লড়াকু 'পাঞ্চ' দিয়েই বিশ্বজয় করার স্বপ্ন দেখেন ইউসুফ

Youssef Abu Amira Karate : স্বাভাবিক মানুষের মতো তাঁর শরীর নয়। তবুও তাঁর শক্তি, তাঁর ইচ্ছে বারবার বলে দেয় সেই মন্ত্র, ‘আব মুশকিল নহি কুছ ভি’…

সাদা পোশাক, কোমরে কমলা বেল্ট। সাধারণত এরকম পোশাক ক্যারাটের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ২৪ বছরের যুবকটি সেটাই করছেন। একমনে নিজের প্রশিক্ষকের কাছে ক্যারাটের অনুশীলন করছেন। ঘাম ঝরছে, যন্ত্রণাও হচ্ছে, তবুও দাঁতে দাঁত চিপে লড়ে যাচ্ছেন তিনি। স্বপ্ন রয়েছে দু’চোখে, একদিন সবাইকে দেখিয়ে দেবেন। বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেবেন নিজের শক্তি দিয়ে। যে কোনও খেলোয়াড়ের তো এটাই স্বপ্ন হওয়া উচিত। তবে ২৪ বছরের যুবক ইউসুফ আবু আমিরার (Youssef Abu Amira) লড়াইটা অন্য পাঁচজনের থেকে অনেকটাই আলাদা। স্বাভাবিক মানুষের মতো তাঁর শরীর নয়; হাত-পা নেই। তবুও তাঁর শক্তি, তাঁর ইচ্ছে বারবার বলে দেয় সেই মন্ত্র, ‘আব মুশকিল নহি কুছ ভি’…

জীবনটাও অদ্ভুতভাবেই শুরু হয়েছিল ইউসুফ আবু আমিরার। প্যালেস্টাইনের গাজা শহরে ১৯৯৭ সালে জন্ম হয়েছিল তাঁর। কিন্তু ছোট্ট ইউসুফের জন্মের পরই সবাই আশ্চর্য হয়ে যায়। সুস্থ, স্বাভাবিক দেহের গঠন কখনই ছিল না তাঁর। পা তৈরি হয়নি ইউসুফের; বলা ভালো কোমরের নিচে কেবল থাইয়ের কিছু অংশ আছে। বাকি অংশ তৈরিই হয়নি। হাতও অসম্পূর্ণ; কেবল কনুই অবধিই আছে। এক ঝলক দেখলে মনে হবে, গুরুতর কোনও দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন ইউসুফ।

ছোট থেকেই অত্যন্ত মুশকিল ছিল পথচলা। স্বাভাবিক মানুষের মতো তিনি চলতে পারেন না, কিছু করতে পারেন না। এরকম পরিস্থিতিতে মনোবল একেবারে ভেঙে যাওয়ারই কথা। কিন্তু ইউসুফের জন্মগত চরিত্রই হল লড়াইয়ের। লড়াকু মেজাজটা তাঁর ঈশ্বরপ্রদত্তই। দাঁতে দাঁত চেপে, সমাজের উল্টোদিকে গিয়ে চিৎকার করে বলেন, ‘আমি পারবই! আমি ঠিক পারব! কেউ আমায় হারাতে পারবে না।’ নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করেন ইউসুফ, একদিন এমনভাবে নিজেকে তৈরি করবেন যে, কেউ সহজে আঙুল তুলতে সাহস পাবে না।

গাজার শরণার্থী শিবিরেই বেড়ে ওঠা ইউসুফের। সেখান থেকেই লড়াইটা শুরু। পড়াশোনায় নেহাত মন্দ নন তিনি। গাজার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। পাসও করেন ভালোভাবে। কিন্তু স্রেফ পড়াশোনা দিয়ে তো হবে না। তাঁর আসল বাধা যে শরীর! সেই শরীরকেই সবল করে তুলতে হবে। এখান থেকেই শুরু হয় ক্যারাটে শেখা।

কঠোর পরিশ্রম এখনও জারি রয়েছে। ইউসুফ এখনও লড়াই করে যাচ্ছেন। কিন্তু ক্যারাটে তাঁর শরীরে সেই জোর ফিরিয়ে এনেছে। ইতিমধ্যেই কমলা বেল্ট অর্জন করেছেন তিনি। স্বপ্ন, একদিন ক্যারাটের মঞ্চে বিশ্বজয় করবেন তিনি। ব্ল্যাকবেল্ট পরে বিপক্ষকে ধরাশায়ী করবেন। আসলে প্রতিপক্ষ যে বিকলাঙ্গতা! তাকেই বারবার পরাস্ত করতে চান ইউসুফ আবু আমিরা। তাঁর কোচ হাসান আল-রাইও ইউসুফকে দেখে অবাক হয়ে যান। তাঁর বক্তব্য, ইউসুফের মধ্যে ক্যারাটের প্রতিভা রয়েছে। অন্যরকম স্কিল, লড়াই করার মানসিকতা রয়েছে। অন্য অনেকের থেকেই তিনি ভালো করছেন।

এখন, এমন হাত দিয়েই জোরে ঘুষি মারতে পারেন। লাঠি নিয়ে লড়াই করতে পারেন। সবরকম ভাবেই নিজেকে তৈরি করেছেন ইউসুফ আবু আমিরা। প্রতিবন্ধকতা তো মানুষের মনে থাকে; চাইলে হিমালয়ও জয় করে নেওয়া যায়। এভাবেই নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ইউসুফ। আরও হাজার ইউসুফের অনুপ্রেরণা তিনি। জীবনের যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য তাঁর জীবনকেই মন্ত্র করেছেন অনেকে। আজ তিনি নিছক মানুষ নন; অনেকের কাছেই নায়ক।

More Articles