পর পর চার বার! বিশ্বের ১০০ জন ক্ষমতাশালী মহিলার তালিকায় নির্মলা সীতারমণ

Most Powerful Women of the World: এই নিয়ে পরপর চারবার নির্মলা ফোর্বসের ক্ষমতাশালী মহিলার তালিকায় এসেছেন। এই বছর তাঁর স্থান ৩৬ তম।

প্রতি বছর ফোর্বস বিশ্বের সব থেকে ক্ষমতাশালী, ধনীদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। যার মধ্যে এই বছর বিশ্বের প্রথম ১০০ জন ক্ষমতাশালী মহিলার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন ছয় জন ভারতীয়। যে তালিকার প্রথম সারিতেই রয়েছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। এই নিয়ে পরপর চারবার তিনি ফোর্বসের ক্ষমতাশালী মহিলার তালিকায় এসেছেন। এই বছর তাঁর স্থান ৩৬ তম। ২০১৯ সালে তিনি প্রথম অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। একইসঙ্গে সেই বছরই ফোর্বসের তালিকায় নাম তুলে নিজের ক্ষমতার সীমা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন তিনি। সেই বছর তার স্থান ছিল ৩৪তম।

রাজনীতিতে আসার আগে ব্রিটিশ যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কৃষি প্রকৌশলী সমিতি এবং বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের দায়িত্বে ছিলেন নির্মলা। তালিকায় সীতারমণ ছাড়াও রয়েছেন এইচসিএল কর্পোরেশনের সিইও রোশনি নাদার মালহোত্রা। বায়োকনের প্রতিষ্ঠাতা কিরণ মজুমদার-শ। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার প্রথম মহিলা চেয়ারম্যান মাধবী পুরী বুচ, রাষ্ট্রায়ত্ত স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার প্রথম মহিলা চেয়ারম্যান সোমা মণ্ডল এবং নাইকার প্রতিষ্ঠাতা ফাল্গুনী নায়ার।

আরও পড়ুন- স্বামীর মৃত্যু বদলে দিয়েছিল জীবন, আজ এশিয়ার ধনীতম মহিলা সাবিত্রী জিন্দাল

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের মতোই রোশনি নাদারের ফোর্বসের তালিকায় নাম প্রথমবার নয়। ইতিমধ্যেই দু’বার তিনি সব থেকে বেশি প্রভাবশালী মহিলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ১৯৭৬ সালে তাঁর বাবা শিব নাদারের তৈরি কোম্পানির সমস্ত রকম স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্ত নেন কন্যা রোশনিই। এই বছর তিনি ৫৩ তম স্থান দখল করে নিয়েন ক্ষমতাশালী মহিলাদের তালিকায়।

কিছু কিছু মানুষকে বর্ণনা করার জন্য শব্দও যেন কম পড়ে। ঠিক তেমনই একজন হলেন বায়োকনের প্রতিষ্ঠাতা কিরণ মজুমদার-শ। ‘ওয়ান্ডার ওম্যান‘ শব্দটি তাঁকে ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট। কিরণ মজুমদার- শ ভারতের বায়ো টেকনোলজি শিল্পের অগ্রগতির একজন পথপ্রদর্শক। বর্তমানে তিনি বায়োকন টেকনোলজি লিমিটেডের পরিচালক এবং সভাপতি পদে রয়েছেন। ১৯৮৯ সালে পদ্মশ্রী ও ২০০৫ সালে পদ্মভূষণের মতো ভারতের দু’টি সর্বোচ্চ সম্মানেও তিনি সম্মানিত হয়েছেন।

শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি-র চেয়ারপার্সন মাধবী পুরী বুচ এই বছর ফোর্বসের ক্ষমতাশালী মহিলার তালিকায় ৫৪ তম স্থান পেয়েছেন। প্রথমবার কোনও মহিলা সেবি-র পর্ষদে পূর্ণ সময়ের জন্য সদস্য ছিলেন। ৫৭ উর্ধ্ব মাধবীর পড়াশোনা দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে। এছাড়াও এমবিএ করেছেন আইআইটি আহমেদাবাদ থেকে।

ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের তালিকায় নয়া মুখ ফাল্গুনী নায়ার। ফ্যাশন ব্র্যান্ড নাইকার প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ব্যাঙ্কের চাকরি দিয়ে কেরিয়ার শুরু। ৫০ বছর বয়সেই ইস্তফা দিয়ে, সম্পূর্ণ নিজস্ব পুঁজিতে তৈরি করে ফেলেন নাইকা ফ্যাশন ব্রান্ড। সদ্য প্রকাশিত ফোর্বসের তালিকায় ৪৪তম স্থানে রয়েছেন ফাল্গুনী। তাঁর মোট সম্পদের মূল্য ৪.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি। দেশজুড়ে ৬৮ টিরও বেশি আউটলেট রয়েছে নাইকার। ফাল্গুনীর যাত্রা অবশ্য শুরু খুবই সাধারণ ভাবে। ছোট্ট অফিস ঘর, অল্প পুঁজি নিয়েই শুরু করেন এই ব্যবসা। যার ফলে খুব একটা লোকসানের মুখোমুখি হতে হয়নি তাঁকে। প্রচুর পরিমাণে ছাড় দেওয়ার বিপক্ষে এই ধন কুবের। তাঁর মতে প্রচুর পরিমাণে ছাড় দিয়ে কিছু সময়ের জন্য বিক্রি বাড়ানো গেলেও দীর্ঘ মেয়াদে দাম ধরে রাখা যায় না।

এছাড়াও স্টিল ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম মহিলা হিসেবে চেয়ারপার্সনের পদে বসেন সোমা মণ্ডল। ৫৯ বছর বয়সী এই বাঙালি মনে প্রানে বিশ্বাস করেন মেয়েরা সবটাই পারে। এই বিশ্বাসকে মনে রেখেই এই বছর ক্ষমতাশালী মহিলার তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি। প্রথমে একজন সাধারণ শিক্ষানবিশ থেকে ধীরে ধীরে কোম্পানির ডিরেক্টর হওয়ার সফর মুখের কথা নয়। শুরুতেই মুখোমুখি হন নানা রকম চ্যালেঞ্জের। প্রথমত কোম্পানি যে লোকসানের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা অতিক্রম করা এবং দ্বিতীয়ত প্রথম মহিলা হিসেবে ডিরেক্টর পদে বসায় তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে কতটা মর্যাদা দেবে, সম্মান করবে এই বিষয়েও দ্বন্দ্ব ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে গেছে সবটাই। আজ তিনি বিশ্বের ১০০ জন ক্ষমতাশালী মহিলার মধ্যে একজন। ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, তিনি চেয়ারপার্সন পদে বসার প্রথম বছরেই কোম্পানির রাজস্ব প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার বর্তমান মূল্য ১২০ বিলিয়ন টাকা।

আরও পড়ুন-ইটের বদলে পাটকেল! ‘জ্বালাময়ী’ মহুয়াকে যে ভাবে পাল্টা উত্তর দিলেন নির্মলা সীতারামন 

বিগত কয়েক বছরের মতো এই বছর তালিকা থেকে বাদ পড়েননি বাংলাদেশের শেখ হাসিনাও। তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিনা লাগর্দে এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।

More Articles