অতিরিক্ত খাওয়া বা চূড়ান্ত ডায়েট, না জেনেই বড় বিপদ ডেকে আনছেন নিজের?
ইনস্টাগ্রাম-ফেসবুকের দুনিয়ায় সবাই নিজেকে 'পারফেক্ট' প্রমাণ করতে উদ্যোগী। জীবনযাত্রার মান থেকে প্রতিদিনের লুক- সবকিছু সম্পর্কেই অতিরিক্ত সচেতন নেট-নাগরিকেরা। ইদানীংকালে বহু মানুষ খুব কম বয়স থেকেই স্থূলতার সমস্যায় ভোগে। ফলে অনেকেই মনে করে, খাবার না খেলেই বোধহয় এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আবার অনেকেই এমন আছে, যারা খেতে খুব ভালবাসে। ফলে, পাতে প্রিয় খাবার দেখলেই হুঁশ থাকে না নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে। নিয়মিত অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণের কারণে পেটের প্রাচীর প্রসারিত হতে শুরু করে। আর এমন হলে, অতিরিক্ত আহার ব্যতীত তৃপ্তিবোধ আসে না এবং একসময় এর ফলে শরীরের ক্ষতি হতে থাকে। কিন্তু সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে সঠিক পরিমাণে খাদ্যগ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে, তা নাহলে ফল হয় উল্টো।
বছরের পর বছর ধরে খাদ্যগ্রহণ-সংক্রান্ত নানা অসুখে ভুগছে বহু মানুষ। তবে এই ধরনের অসুখের কিছু গভীর মানসিক কারণও রয়েছে। রিচা চাড্ডা, ইলিয়ানা ডি'ক্রুজ, নিয়া শর্মা, ডেমি লোভাটো, লেডি গাগা এবং এলটন জন, প্রয়াত রাজকুমারী ডায়ানার মতো সেলিব্রিটিরা ভুগেছেন এই সমস্যায়।
খাদ্যাভ্যাসজনিত অসুস্থতা কী?
এই ধরনের অসুখ অস্বাভাবিক খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস থেকে উদ্ভুত হয়। একজন ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। বয়স,জীবনধারা, ব্যক্তির মনোভাব এবং উদ্বেগের মতো বিষয়গুলি সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে। ফলে, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, যা দ্রুত একজন মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়তা করবে।
উপসর্গ
খাদ্যাভ্যাসজনিত অসুখের বিভিন্ন উপসর্গগুলি হল:
১. ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধির চিন্তায় সারাক্ষণ মগ্ন হয়ে থাকা
২. নিজের বাহ্যিক উপস্থিতি সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতনতা
৩. শরীরের ওজন সংক্রান্ত অন্যান্যদের মতবাদকে গুরুত্ব দেওয়া এবং সেই ভাবনায় বুঁদ হয়ে থাকা
৪. অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস
৫. অনিয়মিত এবং অস্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস
৬. খাদ্যগ্রহণের কারণে নিজের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করা এবং লজ্জিত হওয়া
আরও পড়ুন: পিজ্জা-বার্গারের খিদে কমবে শরীরচর্চাতেই, হাতেনাতে প্রমাণ গবেষণায়
বিভিন্ন রোগ
১. অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা
অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা সম্ভবত সবচেয়ে সুপরিচিত খাদ্যাভ্যাসজনিত ব্যাধি। এটির উদ্ভব সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে বা যৌবনে হয় এবং পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশি প্রভাবিত করে।
অ্যানোরেক্সিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত নিজেকে অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী হিসাবে দেখেন, এমনকী, যদি তাঁরা বিপজ্জনকভাবে কম ওজনেরও হন। তাঁরা ক্রমাগত তাঁদের ওজন নিরীক্ষণ করতে থাকে। নির্দিষ্ট কিছু ধরনের খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলে এবং দেহে ক্যালোরির পরিমাণ মারাত্মকভাবে কম থাকে।
২. বুলিমিয়া নার্ভোসা
অ্যানোরেক্সিয়ার মতো বুলিমিয়াও বয়ঃসন্ধিকালে এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার প্রথম দিকে দেখা দেয় এবং সাধারণত মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে কম হয়।
বুলিমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে প্রচুর পরিমাণে খাবার খেয়ে ফেলে। যতক্ষণ পর্যন্ত পেটে অস্বস্তি বোধ হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত খাবার খেতেই থাকে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিটি মনে করে, সে খাওয়া বন্ধ করতে পারে না বা কতটা তাঁর ক্ষমতা তা বুঝতেই পারে না।
৩. পিকা
এটি হল আরেকটি খাদ্যাভ্যাসজনিত ব্যাধি, যাতে এমন কিছু খাওয়া জড়িত, যা আদতে খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয় না।
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অখাদ্য পদার্থ যেমন বরফ, ময়লা, মাটি, চক, সাবান, কাগজ, চুল, কাপড়, উল, নুড়ি, লন্ড্রি ডিটারজেন্ট, বা কর্নস্টার্চ খায় খাবার হিসেবে। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের, শিশু-কিশোরদের মধ্যে দেখা দিতে পারে। অনেকসময় দেখা যায়, এই অসুখে শিশু, গর্ভবতী মহিলা এবং মানসিক অক্ষমতাযুক্ত ব্যক্তিরা আক্রান্ত হয়েছে।
পিকা আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিষক্রিয়া, সংক্রমণ, অন্ত্রের সমস্যা এবং পুষ্টির অভাবে ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। গৃহীত পদার্থের ওপর নির্ভর করে পিকা মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
মনস্তাত্ত্বিক কারণ
মহিলা এবং পুরুষ উভয়েই নিজের চেহারা সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে প্রায়ই এই অসুখে ভোগে, ফলে দেখা যায়, নিখুঁত শরীর পাওয়ার জন্য অনেকেই বিভিন্ন কঠিন দায়িত্ব পালন করে বা সাহায্য নেয় হরমোন থেরাপির, যা শরীরের জন্য বিপদ বয়ে আনতে বাধ্য।
খাদ্যাভ্যাসজনিত অসুখের সঠিক কারণ জানা যায়নি, তবে এই অসুখের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মানসিক সমস্যা হল:
১. উদ্বেগ
২. বিষণ্ণতা
৩. মানসিক চাপ
৪. আত্মবিশ্বাসের অভাব
৫. ভয়
৬. অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি)