পশ্চিমবঙ্গের রেশম দিয়ে তৈরি হয়েছিল হ্যারি পটারের এক বিশেষ পোশাক, কোনটি জানেন?

Harry Potter Dress: হগওয়ার্টসের স্কুলের পোশাক সাধারণ একটি স্কুলের স্কুল ড্রেসের মতো হলেও সেখানে একটি নেকটাই ছিল যা সমস্ত পোশাকের থেকে আলাদা ছিল।

সালটা ২০০১, সেই সময় হলিউডের জনপ্রিয় চিত্র পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ একটি নতুন ধরনের গল্প নিয়ে সিনেমা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। বলতে গেলে শুধুমাত্র একটা গল্প নয়, বলতে গেলে একটা গল্পের সিরিজ নিয়ে সিনেমা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ। আর সেই গল্পের সিরিজটি হল ইংরেজি সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখিকা জে কে রাওলিংয়ের হ্যারি পটার সিরিজ। যদিও পরবর্তীতে স্টিভেন স্পিলবার্গ এই ছবিগুলি পরিচালনা না করলেও, জে কে রাওলিংয়ের হ্যারি পটার শুধুমাত্র যে জনপ্রিয় হয়েছে তাই নয়, বরং এই সিনেমার তিনটি প্রধান চরিত্র, হ্যারি পটার, রণ উইসলি এবং হারমায়োনি গ্রেঞ্জার হয়ে গিয়েছে কালজয়ী।

শিশুদের জন্য সিনেমা তৈরি করতে না চাইলেও স্টিভেন স্পিলবার্গ বুঝেছিলেন হ্যারি পটারের গল্প নিয়ে যদি সিনেমা করা যায় তাহলে সেটি অবশ্যই জনপ্রিয় হতে চলেছে। পরবর্তীতে অন্য পরিচালকের হাত ধরে হ্যারি পটার মুক্তি পেলেও হ্যারি পটারের বিভিন্ন রহস্য এখনও সকলের অজানা। সম্প্রতি কুড়ি বছর পূর্ণ করেছে হ্যারি পটার সিরিজ। প্রথম সিনেমা হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোজফার্স স্টোন মুক্তি পেয়েছিল ২০০১ সালে। তারপর থেকে চেম্বার অফ সিক্রেটস, প্রিজনার অফ আজকাবান, গবলেট অফ ফায়ার থেকে শুরু করে ডেথলি হ্যালোস, প্রত্যেকটি সিনেমায় হয়েছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ১০ বছর আগে এই সিরিজের শেষ সিনেমাটি মুক্তি পেলেও এখনো পর্যন্ত এই সিরিজ নিয়ে দর্শকদের উন্মাদনা রয়েছে।

হ্যারি পটারের চরিত্রগুলি যেরকম ভাবে হয়ে উঠেছে জীবন্ত, সেরকম ভাবেই হ্যারি পটারের চরিত্রে যারা অভিনয় করেছিলেন তারাও একই ভাবে জনপ্রিয় হয়েছেন। যারা হ্যারি পটারের নিয়মিত দর্শক রয়েছেন, তারা হয়তো কোনদিন ড্যানিয়েল রেডক্লিফকে বাদ দিয়ে হ্যারি পটার ভাবতেই পারবেন না। ঠিক সেরকম ভাবেই রুপার্ট গ্রিন্ট রন হিসেবে এবং এমা ওয়াটসন হারমায়োনি গ্রেঞ্জার হিসেবে এখনও দর্শকদের মনে সমানভাবে নিজের ছাপ তৈরি করে রেখেছেন।

তবে হ্যারি পটারের এই সিনেমা গুলির সঙ্গে বেশ কিছু অজানা গল্প জড়িয়ে রয়েছে যা পশ্চিমবঙ্গকে হ্যারি পটারের সঙ্গে এক সুতোয় বেঁধে রাখে। হ্যারি পটার সিরিজের সবথেকে দামি যে জিনিসটি ছিল সেটা হল হ্যারি পটারের স্কুলড্রেস। হগওয়ার্টসের স্কুলের পোশাক সাধারণ একটি স্কুলের স্কুল ড্রেসের মতো হলেও সেখানে একটি নেকটাই ছিল যা সমস্ত পোশাকের থেকে আলাদা ছিল। এই পোশাকের সবথেকে দামি জিনিসটি ছিল এর নেকটাই।

আরও পড়ুন- শারদীয়া পুজোসংখ্যায় সাহিত্য হয়? নাকি গোটাটাই ঝোঁক?

হ্যারি পটারের ছবির সিরিজে ব্যবহার করা ওই নেকটাই আদতে ছিল সিল্কের তৈরি। তার থেকেও বড় বিষয়টি হলো, ওই টাই তৈরি করার জন্য যে রেশম ব্যবহার করা হয়েছিল সেটা আমদানি করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে। আর এই পশমের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ এবং হ্যারি পটার একসূত্রে গেঁথে থাকে। তবে শুধুমাত্র টাই ছাড়াও আরও বেশ কিছু অজানা গল্প রয়েছে হ্যারি পটার সিনেমার সঙ্গে। সবাই মনে করেন হ্যারি পটার সিনেমাটি পুরোপুরি তৈরি হয়েছে কাল্পনিক বাস্তবতার উপর নির্ভর করে। মানুষ ছাড়া এই ছবিতে সবকিছুই যেন কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেরকম নয়, হ্যারি পটারের ছবিতে বেশ কিছু আসল জীবজন্তুও ব্যবহার করা হয়েছিল।

যার মধ্যে অন্যতম হলো হ্যারি পটারের চারটি বিশেষ পেঁচা। এছাড়াও রণের ইঁদুরের বাহিনী ছিল সম্পূর্ণ জীবন্ত প্রাণী। এছাড়াও অ্যানিমেল প্রোডাকশন টিম অনেক আগে থেকেই নানা রকমের জিনিস সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন নতুন জীবজন্তু তৈরি করার প্রচেষ্টা করেছিলেন। ভারতবর্ষ কিন্তু হ্যারি পটারের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই সংমিশ্রিত রয়েছে। আপনাদের হয়তো মনে থাকবে, হ্যারি পটার সিরিজের পঞ্চম সিনেমা অর্থাৎ গবলেট অফ ফায়ার ছবিতে পদ্মা পাতিল এবং প্রভাতী পাতিল এই দুটি চরিত্র উঠে এসেছিল ভারতের থেকে। তাদের মাধ্যমেই ভারতের তন্ত্র চর্চার বিশেষ দিক তুলে ধরেছিলেন লেখিকা জেকে রাউলিং।

যারা হ্যারি পটারের মূল গল্প পড়েছেন, তাদের চোখে এই সিনেমার বিভিন্ন সিকোয়েন্স কিছুটা হলেও বেমানান। হ্যারি পটারের ছবিতে পিভস নামে ভূতেদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। রিক মাইল এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে তার বিভিন্ন সিকোয়েন্স ছবি থেকে বাদ চলে যায়। পরিচালক ক্রিস কলম্বাস তার সিনেমা থেকে এই সমস্ত দৃশ্যগুলিকে কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়াও হ্যারি পটারের সিনেমায় জিনজার উইচ চরিত্রটিকে দেখা যায়নি। হ্যারি পটারের সঙ্গে সম্পর্কিত সিনেমা ফ্যান্টাস্টিক বিস্ট সিনেমায় তাকে দেখা গেলেও হ্যারি পটারের সিনেমাগুলোতে কোথাও একটা হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। 

তবে যাই হোক না কেন, হ্যারি পটার যে শুধুমাত্র সিনেমায় কিংবা গল্পে রয়ে গিয়েছে তা নয়, এই সিনেমার মাধ্যমে জেকে রাওলিংয়ের জনপ্রিয়তা একেবারে শিখরে উঠেছে। শোনা যায়, ইংল্যান্ডের রানির থেকেও নাকি জেকে রাওলিংয়ের সম্পত্তির পরিমাণ বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল হ্যারি পটারের গল্পগুলিকে। বিশ্বের একাধিক ভাষায় হ্যারি পটারের সমস্ত সিনেমা গুলিকে ডাবিং করা হয়েছিল। ১০ বছর আগে হ্যারি পটারের জনপ্রিয়তা যেরকম ছিল, এখনও সেরকমই আছে। ২০ বছরের এই সব স্মৃতিগুলোকে নিয়েই আরও বছরের পর বছর জীবন্ত থাকতে চলেছে হ্যারি পটার, রন উইসলি এবং হারমায়োনি গ্রেঞ্জার।

More Articles