লুচি-ছোলার ডাল থেকে পেটাই পরোটা! মহালয়ার ভোরে চেখে দেখুন উত্তরের সেরা জলখাবার

Mahalaya 2022: মহালয়ার সকালে কোথায় করবেন প্রাতরাশ? জেনে নিন।

কথায় আছে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আবার ভোজনরসিক বলেও বাঙালির যথেষ্ঠ সুনাম রয়েছে। বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর আবহের সূচনা মহালয়া থেকেই হয়। তাই মহালয়ার দিন সকালে রেডিওতে 'মহিষাসুরমর্দিনী', গঙ্গার ঘাটে তর্পন এবং কুমারটুলিতে ভিড় জমানোর মাঝেই বাঙালি ঢুঁ মারে বিভিন্ন পরিচিত খাবারের দোকানে, জলখাবারের সন্ধানে। উত্তর কলকাতায় কুমোরটুলির কিছু দূরেই বাগবাজার এবং শ্যামবাজারে রয়েছে এইরকম বহু দোকান, যাদের জনপ্রিয়তা সারা বছর বজায় থাকলেও মহালয়ার দিন সকালের ভিড় তাদেরও গলদঘর্ম করে তোলে।

হরিদাস মোদক
শ্যামবাজারের আদি হরিদাস মোদকের দোকান প্রায় ২৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বহু মানুষের রসনাতৃপ্তির এক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজের খ্যাতি বজায় রাখতে পেরেছে। শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড় থেকে আরজি কর রোডে কালী মন্দিরের বিপরীতে জৈন জলছত্রর ঠিক পিছনে রয়েছে এই দোকান। এই দোকানে কলাপাতায় গরম গরম হিংয়ের কচুরির সঙ্গে সুমিষ্ট ছোলার ডাল বহু মানুষের জিভে জল আনতে বাধ্য। মিষ্টির মধ্যে কাঁলাকাদ, ছানার জিলিপি, কালোজাম এই দোকানের খ্যাতি বাড়িয়ে তুলেছে। কচুরি ছাড়াও এই দোকানের মূল আকর্ষণ, লুচি এবং ছোলার ডাল পাওয়া যায়। কথিত আছে যে, শ্রীরামকৃষ্ণদেব থেকে প্রখ্যাত নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষের মতো অনেকেই এই দোকানের লুচি-কচুরির স্বাদ আস্বাদন করেছেন।

Haridas Modak

হরিদাস মোদক

আরও পড়ুন: মাছের কচুরি থেকে মৌরি লজেন্স, অবহেলিত হয়েও টিকে আছে কলকাতার যেসব খাবার

শীতল আশ্রম
শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড়েই রয়েছে হরিদাস মোদকের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা রকমের খাবার পরিবেশন করা একটি দোকান। তার নাম 'শীতল আশ্রম'। শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড় থেকে এ.পি.সি রোড ধরলেই পৌঁছনো যায় এই দোকানে। চা, কফি, টোস্ট, অমলেটের মতো খাবার এই দোকানে পাওয়া যায়। এক কাপ চা এবং মাখন, চিনি অথবা গোলমরিচ মাখানো টোস্টের পাশাপাশি চিজ-চিকেন এগ টোস্ট অথবা চিকেন অমলেট জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। সারা বছর প্রাতঃভ্রমণকারীদের বাড়ি ফেরার আগের একটা পছন্দের ঠিকানা হলেও উৎসবের মরশুমে বিভিন্ন স্বাদের খাবারের স্বাদ পেতে বহু মানুষ এই দোকানে ভিড় করে।

Sital Asram

শীতল আশ্রম

পটলার কচুরি
বাঙালিয়ানা এবং বাগবাজার প্রায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই বাগবাজারে রয়েছে কিছু এমন খাবারের দোকান যাদের নাম বহু দূর অবধি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় একশো বছরের দোরগোড়ায় পৌঁছে আজও সমান জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছে পটলার কচুরি। বাগবাজার স্ট্রিটের ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের বিপরীতে এই কচুরির দোকান। দোকানে বসে খাবার জায়গা নেই। দোকানের কোনও চকমকি সাইনবোর্ড নেই। তবুও শুধু মানুষের স্বাদকোরক এবং মন খুশি করার উপায় খুঁজে বের করেছে এই দোকান। সেই উপায় রয়েছে এই দোকানের খাবারের স্বাদের মধ্যে। শালপাতায় গরম কচুরি এবং হালকা লাল ঝোলের আলুর দমের স্বাদ মানুষকে বারবার এই দোকানে টেনে নিয়ে আসে। পুরে ঠাসা কচুরি বাদে এই দোকানের চপ বহু মানুষের কাছেই অতিশয় সুখাদ্য বলেই বিবেচিত হয়।

পটলার কচুরি

কালিকা মিষ্টান্ন ভান্ডার
বর্তমান কলকাতায় খুব অল্প কিছু দোকানে কচুরির সঙ্গে ছোলার ডাল পরিবেশন করা হয়। বাঙালির খুব প্রিয় এই দু'টি পদ একসঙ্গে উত্তর কলকাতার বহু দোকান থেকে অদৃশ্য হতে শুরু করলেও কিছু দোকান আজও এই দু'টি পদ পরিবেশ করে চলেছে। শ্যামবাজারের আদি হরিদাস মোদকের মতো বাগবাজারের কালিকা মিষ্টান্ন ভান্ডার আজও কচুরির সঙ্গে ছোলার ডাল পরিবেশন করে। যদিও এই দোকানের ছোলার ডালের মধ্যে আলুর টুকরো লক্ষ করা যায়, তবুও সেই কচুরি এবং ছোলার ডালের জুটি যে বহু মানুষের মন জয় করছে- তা বলাই বাহুল্য। বাগবাজার স্ট্রিটের উপর অবস্থিত এই দোকানটি একশো বছরের যাত্রা সম্পূর্ণ করেও আজও নিজের সুনাম অক্ষত রেখেছে কালিকা। সকালবেলা খুব অল্প সময়ের জন্য এই দোকানে কচুরি এবং ছোলার ডাল পাওয়া যায়। তাই এই অনবদ্য স্বাদ আস্বাদনের ক্ষেত্রে শুভস্য শীঘ্রম মন্ত্র মেনে চলতে হবে।

ভোলানাথ কেবিন
বাগবাজারের গিরিশ ঘোষের একদিকে রয়েছে ভোলানাথ কেবিন। চা, টোস্ট, ঘুগনির মতো সাধারণ অথচ জনপ্রিয় খাবার পরিবেশন করেই দীর্ঘদিনের এই প্রতিষ্ঠান নিজের সুনাম অর্জন করেছে। সঙ্গে ডিমের পোচ, অমলেট, ডিম টোস্টও ভোলানাথ কেবিনের অন‍্যতম আকর্ষণ। আজও এই দোকানে মাটির উনুনে রান্না করা হয়। অনেকের মতে সেই মাটির উনুন এই দোকানের রান্নার আলাদা স্বাদ এনে দেয়। এই দোকানের আরও একটা বিশেষত্ব হলো এই দোকানের চায়ের কাপ। আমাদের পরিচিত চায়ের কাপের থেকে আকারে এবং আয়তনে অনেকটা আলাদা এক ধরনের কাপে এই দোকানে চা পরিবেশন করা হয়। সারা বছর প্রধানত প্রাতঃভ্রমণকারী এবং এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা এই দোকানে ভিড় জমালেও উৎসবের সময়ে বহু প্রান্ত থেকে কুমোরটুলিতে আসা বহু মানুষ এই দোকানে ভিড় জমান।

পেটাই পরোটা
শুধুমাত্র কচুরি, ছোলার ডাল অথবা টোস্ট-ঘুগনি নয়, এই এলাকায় রয়েছে আরও এক ধরনের জলখাবার। এই খাবার পরিবেশন করে কোনও দোকান বিখ্যাত না হলেও খাবারটি বেশ জনপ্রিয়। বহু মানুষ তাই সকালে কচুরি অথবা টোস্ট ছেড়ে পেটাই পরোটার প্রেমে মজে। বাগবাজারের বলরাম মন্দিরের কাছে এবং শ্যামবাজারে চ্যাটার্ড ব্যাঙ্কের কাছে কিছু স্টলে এই খাবার পাওয়া যায়। চটজলদি, সস্তা এবং মুখরোচক এই খাবার বহু মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। দুই বছর পুজোর আনন্দ কিছুটা মাটি হওয়ার পরে এই বছর বাঙালি তৈরি হচ্ছে উৎসব পালন করতে এবং সেই সুযোগে কিছু বিখ্যাত দোকানে ঢুঁ মেরে নিজের রসনাতৃপ্তি করতে।

More Articles